Reading Time: 7 minutes

বর্তমানে ডিজিটাল মুদ্রা ক্রিপ্টো কারেন্সিকে ভবিষ্যতের মুদ্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ডিজিটাল মুদ্রা কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কিংবা কোন ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে না। কারণ ভার্চুয়াল জগতে এই মুদ্রার লেনদন হয়। যদিও এই মূদ্রার হিসাব রাখা অনেকটাই কঠিন তাই এই ধরনের হিসাব নিকাশের জন্য কম্পিউটারের দরকার হয়। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক জটিল হিসাবনিকাশ করে একেকটি ডিজিটাল মুদ্রা সংগ্রহ করে। নিজস্ব উদ্যোগে ব্যক্তি পর্যায়ে পরিচালিত বিশাল একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রতিটি পেমেন্ট এবং মুদ্রার লেনদেন তত্ত্বাবধান করে এবং সেগুলোর উপর নজর রাখে।

ক্রিপ্টো বৈধ ঘোষণা ইউক্রেনে

এবার ইউক্রেনে ক্রিপ্টো মূদ্রা বৈধতা পেয়েছে। রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেন কয়েক কোটি ডলারের অনুদান ক্রিপ্টো মুদ্রা হিসেবে পেয়েছে। প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট ভার্জ জানিয়েছে যে জেলেনস্কি যে বিলটিতে স্বাক্ষর করেছেন তাতে ফেব্রুয়ারি মাসেই ইউক্রেনের পার্লামেন্ট অনুমোদন দিয়েছিল। নতুন একটি বিলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্বাক্ষর করেছেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে দেশটিতে ক্রিপ্টো মুদ্রার লেনদেনকে বৈধতা দিয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে মূল ধারার আর্থিক ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে বিবেচিত মুদ্রা ব্যবস্থাটিকে জেলেনস্কি বৈধতা দিয়েছেন।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের শুরু থেকেই ক্রিপ্টো মুদ্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইউক্রেনে আসা আর্থিক অনুদানের সিংহভাগ ক্রিপ্টো মুদ্রা হিসেবে এসেছে। অন্যদিকে, ক্রিপ্টো মুদ্রাগুলোকে বাণিজ্যিক অবরোধের জেরে দুর্বল হয়ে পড়ে রাশিয়ার অর্থনীতিতে নাগরিকদের শেষ ভরসা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে ভার্জ জানায় যে ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকরাও লক্ষ্যণীয় হারে ক্রিপ্টো সম্পদ কিনছেন। স্বাক্ষকৃত বিলটি ইউক্রেনে ভার্চুয়াল সম্পদের বৈধ বাজার প্রচলনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে বলে ভার্জ জানিয়েছে।

ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী মিখাইলো ফেদোরভ বলেছেন যে ক্রিপ্টো মুদ্রাগুলো যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন দিতে বাড়তি তহবিলে প্রয়োজন মেটানোর শক্তিশালী টুলে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের তিন সপ্তাহে পাঁচ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ক্রিপ্টো তহবিল জোগাড় করেছে। তবে অন্যান্য সূত্রের বরাত দিয়ে ভার্জ জানিয়েছে যে ইউক্রেন সরকার প্রায় ১০ কোটি ডলারের ক্রিপ্টো মুদ্রা অনুদান হিসেবে পেয়েছে এমনটাও শোনা যাচ্ছে। ইউক্রেনের ব্যাংকগুলো নতুন বিলটির অধীনে ক্রিপ্টো প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে।

ক্রিপ্টো মুদ্রা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইউক্রেনে কর্মকাণ্ড চালাতে সরকারের কাছে নিবন্ধন করতে হবে। ক্রিপ্টো মুদ্রা খাতের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করবে ন্যাশনাল ব্যাংক অফ ইউক্রেন এবং ন্যাশনাল কমিশন অন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড স্টক মার্কেট। এ প্রসঙ্গে এক টেলিগ্রাম পোস্টে মিখাইলো ফেদোরভ বলেছেন যে নতুন আইনটি ক্রিপ্টো খাতকে ছায়ার জগৎ থেকে বাইরে নিয়ে আসবে।

বাইন্যান্সের ক্রিপ্টো লাইসেন্স পেয়েছে বাহরাইন

বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টো মুদ্রা এক্সচেঞ্জ বাইন্যান্স বাহরাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে প্রথম ক্রিপ্টো সেবাদাতা লাইসেন্স পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাহরাইনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে বাইন্যান্স প্রধান চ্যাংপেং ঝাও বলেন যে বাহরাইন থেকে পাওয়া এই লাইসেন্সটি বিশ্বের সবখানে লাইসেন্সধারী হওয়ার যাত্রায় একটি বড় মাইলফলক। জিসিসি (গালফ কো অপারেশন কাউন্সিল) এবং বাহরাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মঙ্গলবারেই প্রথম ক্রিপ্টো সম্পদ সেবাদাতা লাইসেন্স দেওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। তিনি আরো বলেন যে নীতিনির্ধারণী শর্তগুলো অর্থপাচার এবং সন্ত্রাস-বিরোধী কঠোর আর্থিক নীতিমালার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের নিরাপদ রাখবে।

বাহরাইন ছাড়াও বাইন্যান্স প্রতিবেশি দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতেও নিজের উপস্থিতি গড়ে তুলছে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহেই দুবাই ভার্চুয়াল সম্পদ নিয়ে নতুন আইন করেছে। ডিসেম্বর মাসে বাইন্যান্স ডিডব্লিউটিসি (দুবাই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার) কে আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল সম্পদ লেনদেন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবং ভার্চুয়াল সম্পদ নিয়ে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গঠনে সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম রাজ্যটি পাশাপাশি এই খাতে নজর রাখার জন্য নতুন পর্যবেক্ষক সংস্থা গঠন করেছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে যে বাইন্যান্স বাহরাইন থেকে পাওয়া লাইসেন্সের সুবাদে ক্রিপ্টো সম্পদের লেনদেনের পাশাপাশি সম্পদ হেফাজতে রাখার পরিষেবা এবং পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনার অনুমতি পেয়েছে।

বিটকয়েন সিটি নির্মান করবে এল সালভাদর

এল সালভাদর বিশ্বের প্রথম ‘বিটকয়েন সিটি’ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশটিতে বিনিয়োগ বাড়াতে প্রধান উৎস হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রযুক্তিকেই বাছাই করছেন। তার ঘোষিত বিটকয়েন সিটির প্রাথমিক তহবিল বিটকয়েন বন্ডের মাধ্যমে আসবে। সম্প্রতি বিটকয়েন নিয়ে প্রচারণা চালাতে এল সালভাদরে ‘বিটকয়েন সপ্তাহ’ পালিত হয়েছে। পুরো সপ্তাহজুড়ে চলা প্রচারণার শেষ দিনে প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে জানিয়েছেন যে প্রস্তাবিত বিটকয়েন সিটিতে ভ্যাট ছাড়া আর কোনো কর থাকবে না অর্থাৎ এখানে ভ্যাট ছাড়া আলাদা করে কর প্রদান করার কোন প্রয়োজন নেই।

 আগ্নেগিরির ভূতাপিত শক্তি শহরের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাবে । দেশটির পূর্বাঞ্চলে ওই প্রস্তাবিত শহরটি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। বিটকয়েন সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠানে বুকেলে বিলেন যে এখানে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ ছাড়াও যেকোন উপায়ে ইচ্ছে মতো টাকা ইনকাম করতে পারবেন। এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব একটা শহর হবে যার প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেবে একটি আগ্নেয়গিরি। রয়টার্স জানিয়েছে যে ভ্যাট থেকে পাওয়া করের অর্ধেক নতুন শহর নির্মাণের জন্য বন্ডের তহবিলের যোগান দেবে, বাকি অর্ধেক যাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ আরো অন্যান্য কাজে।

পুরো প্রকল্প সম্পাদনে তিন লাখ বিটকয়েন খরচ হবে বলে বুকেলে অনুমান করছেন। সেপ্টেম্বর মাসে এল সালভাদরে ‘অনুমোদিত মুদ্রা’ হিসেবে বিটকয়েনের যাত্রা শুরু হয়েছে। বিটকয়েন প্রচলনের পেছনে দেশটির প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন। রয়টার্স বলছে যে এল সালভাদরের নাগরিকদের মধ্যে বুকেলের জনপ্রিয়তা থাকলেও বিটকয়েন প্রশ্নে সন্দিহান অনেকেই। সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিটকয়েন প্রচলন সরকার বিরোধী প্রতিবাদের মূল বিষয়বস্তু হিসেবে ছিল। তবে, এতে বুকেলে মোটেই পিছপা হচ্ছেন না। বরং ব্যাপক পরিসরে তিনি নতুন বিটকয়েন সিটি ঘোষণা করেছেন।

বুকেলের পরিকল্পনা অনুযায়ী শহরটিতে আলাদা এয়ারপোর্ট, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা থাকবে। শহরের কেন্দ্রে থাকবে বিশেষ দালান যেটি অনেক উঁচু থেকে দেখতে বিটকয়েন লোগোর মতো মনে হবে। বুকেলে বলেন যে যদি বিটকয়েনকে কেউ পুরো বিশ্বে ছড়িযে দিতে চায় তাহলে তাদের কয়েকটা আলেক্সান্দ্রিয়া বানাতে হবে। প্রথাগত প্রেসিডেন্ট পদমর্যাদার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তুলনা করলে নাইব বুকেলে অনেক দিক থেকেই আলাদা। সেপ্টেম্বর মাসে বুকেলে টুইটারে এল সালভাদরের স্বৈরশাষক বলে ঘোষণা দিয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন। রয়টার্সের মাধ্যমে জানা গেছে যে ২০২২ সালের শুরুতেই অভিষেক হতে পারে বিটকয়েন বন্ডগুলোর।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

বুকেলের ঘোষণার মাধ্যেম ৬০ দিনের মধ্যেই এল সালভাদর সরকার বিটকয়েন বন্ড বাজারজাত করতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। বন্ড বিক্রির পাঁচ বছর পর সালভাদর বিটকয়েন বিক্রি শুরু করবে বলে জানা গেছে। বিটকয়েন বিক্রি করে পাওয়া অর্থ থেকে বিনিয়োগকারীর  পরিশোধ করা হবে বিনিয়োগকারীদের কুপনের পাওনা। ব্লকচেইন প্রযুক্তিকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ‘ব্লকস্ট্রিম’-এর চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার স্যামসন মোও জানিয়েছেন যে প্রথম ১০ বছরের ‘ভলকানো বন্ড’-এর মূল্য হবে একশ’ কোটি মার্কিন ডলার, বন্ডগুলোতে ৬.৫ শতাংশ কুপন ও বিটকয়েন সমর্থন থাকবে। বন্ড বিক্রি করে সংগৃহিত তহবিলের অর্ধেক ব্যয় হবে বিটকয়েন ক্রয়ে।

রয়টার্স জানায় যে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সহজ করতে এল সালভাদর নতুন আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এল সালভাদরের জিও থার্মাল প্রযুক্তি ব্যবহার এর ফলে খরচ এবং ফসিল ফুয়েল এর ব্যবহার কমবে। ফলস্বরূপ বিটকয়েন সিটি হবে পরিবেশ সচেতন একটি ফার্ম এবং আরো সাশ্রয়ী। এটি বাস্তবায়িত হলে আমরা দেখতে পাব বিশ্বের সর্বপ্রথম বিটকয়েন চালিত ইকোনমিক জোন। উল্লেখ্য বিটকয়েনের মূল্য এখন ৫৭ হাজার ডলার এবং ক্রমশই বাড়ছে। যদিও এই ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। প্রথমত বিটকয়েনের ধির গতি এবং সময়ের সাথে স্কেল করার সক্ষমতা না থাকা।

যদিও এল সালভাদর এর বাসিন্দারা লাইটনিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ধির গতির সমস্যা সমাধান করছে। এল সালভাদর নিজস্ব ওয়ালেট এবং ভ্যাট সিস্টেম এর মাধ্যমে এই মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং আশা করা যায় যে এল সালভাদর পুরোপুরি বিটকয়েনের উপযোগী একটি সিস্টেম সবার কাছে পৌঁছাতে পারবে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি হাব হিসেবে জিব্রাল্টার

পেনিনসুলার দক্ষিণে অবস্থিত জিব্রাল্টার একসময়ে ‘ট্যাক্স হেভেন’ হিসেবে পরিচিতি ছিল। গত বছর ব্লকচেইন প্রতিষ্ঠান ভ্যালেরিয়াম এই জিব্রাল্টারের স্টক এক্সচেঞ্জ কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আইবেরিয়ান ভ্যালেরিয়ামের প্রস্তাব অনুমোদন পেলে জিব্রাল্টার ডোজকয়েন ও বিটকয়েনসহ অন্যান্য ক্রিপ্টো মুদ্রা লেনদেন প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা পালন করবে বলে জানা যায়। পাশাপাশি প্রচলিত বন্ডের লেনদেন হবে বলে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। এর পর এ বছরের জানুয়ারিতে জিব্রাল্টারের ৯০% শেয়ার ক্রয় করে ভ্যালেরিয়াম।

আমেরিকা ছাড়িয়ে এবার কাজাখস্তান বিটকয়েন মাইনিং এ এগিয়ে

এছাড়াও ক্রিপ্টো মুদ্রা বিটকয়েন তার খনি ব্যবসায় বা কয়েন মাইনিং-এ মধ্য এশিয়ার যে দেশটি এখন দ্বিতীয় স্থানে, সেটি কাজাখস্তান এবং প্রথম যে দেশ সেটি হচ্ছে আমেরিকা। এক সময় চীনেও বিটকয়েনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন হতো, কিন্তু হঠাৎ করেই গত বছর চীন ক্রিপ্টোকারেন্সির খনিগুলো নিষিদ্ধ করে দেয়, তখন থেকেই প্রতিবেশি কাজাখস্তানে এই ব্যবসা দ্রুত প্রসার লাভ করতে শুরু করে। কাজখস্তান বর্তমানে বিটকয়েন লেনদেনের দ্বিতীয় তালিকায়। মলডির শুবাইয়েভা নামের এই প্রথম একজন নারী নতুন ব্যবসায়ে যোগ দিয়েছেন। তার জমির উপর তার প্রকৌশলী ও নির্মান শ্রমিকেরা নতুন বিটকয়েন খনি গড়ে তুলছেন।

কাজাখস্তানে ক্রিপ্টোকারেন্সির যে নতুন ব্যবসা দ্রুত জমে উঠেছে, তাতে নেমে পড়া নতুন ব্যবসায়ীদের মধ্যে মলডির শুবাইয়েভা একজন। আলমাটি শহরে তার নতুন খনি তৈরির যাবতীয় বিষয়গুলো তিনি দেখাশোনা করছেন। মলডির বলছেন যে কাজাখস্তানে এই বিটকয়েনের ব্যবসা এবং একই সাথে তার নিজের ব্যবসাও ভালোই উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে গত বছরে ব্যবসার ঊর্ধ্বগতিতে কোন সময়ই সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। বিটকয়েনের দাম অবিরতভাবে এবং আকস্মিকভাবে ওঠানামা করে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে একটি বিটকয়েন মুদ্রার মূল্য ছিল প্রায় পাঁচ হাজার ডলার।

আর মাত্র এক বছরের মধ্যে একটা কয়েনের দাম মুহূর্তেই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ডলারে। তবে এরপর হুট করেই বিটকয়েনের দাম ব্যাপক হারে কমতে থাকে। কিছুদিন আগেই বিটকয়েনের সর্বশেষ মূল্য কমে দাঁড়িয়েছিল ৩৫ হাজার ডলারে। কিন্তু এরপরেও কাজাখস্তানে মলডির এবং তার মত অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি খনি মালিকরা এই ব্যবসা থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ অর্জন করেছেন। বিটকয়েন, লাইটকয়েন, এথেরিয়াম এসব নামধারী যেসব ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার তৈরি হয়েছে, সেগুলো ক্রিপ্টো-মাইনিং বা ক্রিপ্টোমুদ্রার খনন এর মাধ্যমেই হোক হয়েছে।

কাজাখস্তানে ২০১৯ সাল থেকেই এই ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্প গড়ে উঠতে শুরু করে। প্রতিবেশি চীন সেসময় দেশটিতে সবধরনের ক্রিপ্টোমুদ্রার খনিগুলো আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিতভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয়। এই সুযোগে কাজাখস্তান ক্রিপ্টো ব্যবসায়ে উন্নতি আনা শুরু করে। যার ফলে সেখানে অসংখ্য কম্পিউটার যোগ করা হয়। বিটকয়েন মুদ্রা ব্যবস্থাকে সচল রাখতে বিশ্বব্যাপী যে বিটকয়েন তৈরি হচ্ছে, সেই মুদ্রা ভাণ্ডারের প্রায় ১৮% শক্তির উৎস এখন কাজাখস্তান। এই খনিতে প্রায় দেড়শ কর্মী কাজ করেন এবং ২৪ ঘণ্টা এই যন্ত্রগুলোকে সচল ও কর্মক্ষম রাখেন। এখানকার এই অতি শক্তিশালী কম্পিউটারগুলোর পরিচালনার মাধ্যমেই ডিজিটাল মূদ্রা তৈরি হচ্ছে।

কয়েক ডজন প্রকৌশলী কাজাখস্তানের এই মরু অঞ্চলে থাকেন এবং এই খনিতে একটানা ১৫ দিনের শিফটে কাজ করেন। এর মধ্যকার আলমায নামক একজন কর্মী কাজ করছেন। কারখানা ঘরগুলো সম্পূর্ণ ধুলাবালিমুক্ত রাখা, কারন ধুলাবালি কম্পিউটারের কার্যক্ষমতায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এছাড়াও কম্পিউটারের যাবতীয় সমস্যা দেখা দিলে আলমায সেটা ঠিক করার দায়িত্বে আছেন। এক কথায়, কারখানার কম্পিউটারগুলো সচল রাখার গুরু দায়িত্ব তারই উপরে। তিনি ১২ ঘন্টার শিফটে কাজ করছেন। আলমায বলেন যে শুরুতে তার কারখানার কোন যন্ত্রপাতি সম্পর্কে ধারণাই ছিল না। এমনকি বিটকয়েন সম্পর্কেও তিনি কিছু জানতেন না।

বিটকয়েন কি বা এর কাজ কি সে সম্পর্কে তার কোন ধারণা ছিল না। ইয়েরবোলসেন আলমায ও তার সহকর্মীদের কাজের ওপর নজর রাখেন। ইয়েরবোলসেন বলেন যে কাজাখস্তান এখন বিশ্বের ক্রিপ্টোকারেন্সি দুনিয়ায় যে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এটা তাদের কাছে জন্য খুবই গর্বের। তারা এই উন্নতি আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.