Reading Time: 3 minutes

বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টো মুদ্রা এক্সচেঞ্জ বাইন্যান্স বাহরাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে প্রথম ক্রিপ্টো সেবাদাতা লাইসেন্স পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাহরাইনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে বাইন্যান্স প্রধান চ্যাংপেং ঝাও বলেন যে বাহরাইন থেকে পাওয়া এই লাইসেন্সটি বিশ্বের সবখানে লাইসেন্সধারী হওয়ার যাত্রায় একটি বড় মাইলফলক। জিসিসি (গালফ কো অপারেশন কাউন্সিল) এবং বাহরাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মঙ্গলবারেই প্রথম ক্রিপ্টো সম্পদ সেবাদাতা লাইসেন্স দেওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। তিনি আরো বলেন যে নীতিনির্ধারণী শর্তগুলো অর্থপাচার এবং সন্ত্রাস-বিরোধী কঠোর আর্থিক নীতিমালার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের নিরাপদ রাখবে।

বাহরাইন ছাড়াও বাইন্যান্স প্রতিবেশি দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতেও নিজের উপস্থিতি গড়ে তুলছে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহেই দুবাই ভার্চুয়াল সম্পদ নিয়ে নতুন আইন করেছে। ডিসেম্বর মাসে বাইন্যান্স ডিডব্লিউটিসি (দুবাই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার) কে আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল সম্পদ লেনদেন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবং ভার্চুয়াল সম্পদ নিয়ে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গঠনে সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম রাজ্যটি পাশাপাশি এই খাতে নজর রাখার জন্য নতুন পর্যবেক্ষক সংস্থা গঠন করেছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে যে বাইন্যান্স বাহরাইন থেকে পাওয়া লাইসেন্সের সুবাদে ক্রিপ্টো সম্পদের লেনদেনের পাশাপাশি সম্পদ হেফাজতে রাখার পরিষেবা এবং পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনার অনুমতি পেয়েছে।

পেনিনসুলার দক্ষিণে অবস্থিত জিব্রাল্টার একসময়ে ‘ট্যাক্স হেভেন’ হিসেবে পরিচিতি ছিল। গত বছর ব্লকচেইন প্রতিষ্ঠান ভ্যালেরিয়াম এই জিব্রাল্টারের স্টক এক্সচেঞ্জ কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আইবেরিয়ান ভ্যালেরিয়ামের প্রস্তাব অনুমোদন পেলে জিব্রাল্টার ডোজকয়েন ও বিটকয়েনসহ অন্যান্য ক্রিপ্টো মুদ্রা লেনদেন প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা পালন করবে বলে জানা যায়। পাশাপাশি প্রচলিত বন্ডের লেনদেন হবে বলে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। এর পর এ বছরের জানুয়ারিতে জিব্রাল্টারের ৯০% শেয়ার ক্রয় করে ভ্যালেরিয়াম

এছাড়াও ক্রিপ্টো মুদ্রা বিটকয়েন তার খনি ব্যবসায় বা কয়েন মাইনিং-এ মধ্য এশিয়ার যে দেশটি এখন দ্বিতীয় স্থানে, সেটি কাজাখস্তান এবং প্রথম যে দেশ সেটি হচ্ছে আমেরিকা। এক সময় চীনেও বিটকয়েনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন হতো, কিন্তু হঠাৎ করেই গত বছর চীন ক্রিপ্টোকারেন্সির খনিগুলো নিষিদ্ধ করে দেয়, তখন থেকেই প্রতিবেশি কাজাখস্তানে এই ব্যবসা দ্রুত প্রসার লাভ করতে শুরু করে। কাজখস্তান বর্তমানে বিটকয়েন লেনদেনের দ্বিতীয় তালিকায়। মলডির শুবাইয়েভা নামের এই প্রথম একজন নারী নতুন ব্যবসায়ে যোগ দিয়েছেন। তার জমির উপর তার প্রকৌশলী ও নির্মান শ্রমিকেরা নতুন বিটকয়েন খনি গড়ে তুলছেন।

কাজাখস্তানে ক্রিপ্টোকারেন্সির যে নতুন ব্যবসা দ্রুত জমে উঠেছে, তাতে নেমে পড়া নতুন ব্যবসায়ীদের মধ্যে মলডির শুবাইয়েভা একজন। আলমাটি শহরে তার নতুন খনি তৈরির যাবতীয় বিষয়গুলো তিনি দেখাশোনা করছেন। মলডির বলছেন যে কাজাখস্তানে এই বিটকয়েনের ব্যবসা এবং একই সাথে তার নিজের ব্যবসাও ভালোই উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে গত বছরে ব্যবসার ঊর্ধ্বগতিতে কোন সময়ই সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। বিটকয়েনের দাম অবিরতভাবে এবং আকস্মিকভাবে ওঠানামা করে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে একটি বিটকয়েন মুদ্রার মূল্য ছিল প্রায় পাঁচ হাজার ডলার।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

আর মাত্র এক বছরের মধ্যে একটা কয়েনের দাম মুহূর্তেই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ডলারে। তবে এরপর হুট করেই বিটকয়েনের দাম ব্যাপক হারে কমতে থাকে। কিছুদিন আগেই বিটকয়েনের সর্বশেষ মূল্য কমে দাঁড়িয়েছিল ৩৫ হাজার ডলারে। কিন্তু এরপরেও কাজাখস্তানে মলডির এবং তার মত অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি খনি মালিকরা এই ব্যবসা থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ অর্জন করেছেন। বিটকয়েন, লাইটকয়েন, এথেরিয়াম এসব নামধারী যেসব ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার তৈরি হয়েছে, সেগুলো ক্রিপ্টো-মাইনিং বা ক্রিপ্টোমুদ্রার খনন এর মাধ্যমেই হোক হয়েছে।

কাজাখস্তানে ২০১৯ সাল থেকেই এই ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্প গড়ে উঠতে শুরু করে। প্রতিবেশি চীন সেসময় দেশটিতে সবধরনের ক্রিপ্টোমুদ্রার খনিগুলো আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিতভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয়। এই সুযোগে কাজাখস্তান ক্রিপ্টো ব্যবসায়ে উন্নতি আনা শুরু করে। যার ফলে সেখানে অসংখ্য কম্পিউটার যোগ করা হয়। বিটকয়েন মুদ্রা ব্যবস্থাকে সচল রাখতে বিশ্বব্যাপী যে বিটকয়েন তৈরি হচ্ছে, সেই মুদ্রা ভাণ্ডারের প্রায় ১৮% শক্তির উৎস এখন কাজাখস্তান। এই খনিতে প্রায় দেড়শ কর্মী কাজ করেন এবং ২৪ ঘণ্টা এই যন্ত্রগুলোকে সচল ও কর্মক্ষম রাখেন। এখানকার এই অতি শক্তিশালী কম্পিউটারগুলোর পরিচালনার মাধ্যমেই ডিজিটাল মূদ্রা তৈরি হচ্ছে।

ডিজিটাল মুদ্রা কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কিংবা কোন ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে না। কারণ ভার্চুয়াল জগতে এই মুদ্রার লেনদন হয়। যদিও এই মূদ্রার হিসাব রাখা অনেকটাই কঠিন তাই এই ধরনের হিসাব নিকাশের জন্য কম্পিউটারের দরকার হয়। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক জটিল হিসাবনিকাশ করে একেকটি ডিজিটাল মুদ্রা সংগ্রহ করে। নিজস্ব উদ্যোগে ব্যক্তি পর্যায়ে পরিচালিত বিশাল একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রতিটি পেমেন্ট এবং মুদ্রার লেনদেন তত্ত্বাবধান করে এবং সেগুলোর উপর নজর রাখে। মলডিরের মত উদ্যমী বিটকয়েন ব্যবসায়ীদের উৎসাহের ফলে কাজাখস্তান এখন বিটকয়েন মাইনিং-এ আমেরিকার পরই নিজের স্থান করে নিয়েছে।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.