মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা কমোডিটি ফিউচার ট্রেডিং কমিশন বা সিএফটিসির করা মামলা অনুসারে, ক্রিপ্টো কোম্পানি বাইন্যান্স মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে সঠিকভাবে নিবন্ধন না করেই নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যার ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টো ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম বাইন্যান্স নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছেন মার্কিন নিয়ন্ত্রকরা। তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে কোম্পানিটির কার্যক্রম পরিচালনার পদ্ধতি অবৈধ। সংস্থাটি বাইন্যান্সের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি আর্থিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।
এর মধ্যে রয়েছে অর্থ পাচার বিষয়ক নীতিমালা লঙ্ঘনের বিষয়টিও। তবে বাইন্যান্স বলেছে, মার্কিন ব্যবহারকারীরা যেন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় না থাকেন, সেটি নিশ্চিত করতে তারা মার্কিন নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করা বা যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল নাম্বার থাকা ব্যবহারকারীদের ব্লক করাসহ বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। জবাবে, নিজেদের কার্যক্রমের পক্ষে সাফাই দিয়েছে বাইন্যান্স। কোম্পানি জানায়, এই মামলার নথি অপ্রত্যাশিত ও হতাশাজনক কারণ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সিএফটিসিকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও গোটা বিশ্বের নিয়ন্ত্রকদের সহযোগিতা করে যেতে চায় কোম্পানিটি। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সেরা উপায় হলো ব্যবহারকারীকে সুরক্ষা দেওয়া ও একটি সুস্পষ্ট, চিন্তাশীল নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রকদের সহযোগিতা করা। সিএফটিসি বলেছে, ২০১৯ সালের পর থেকে বাইন্যান্স যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় থাকলেও তারা কখনওই সঠিকভাবে সরকারী নিবন্ধন বা প্রাসঙ্গিক কোনো মার্কিন আইন মেনে চলেনি। আর এই নজরদারি ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বচ্ছ বৈশ্বিক কর্পোরেট কাঠামো ব্যবহার করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ের ফেডারেল আদালতে দায়ের করা মামলায় সিএফটিসি অভিযোগ করেছে, অনেক সময় ধরেই প্ল্যাটফর্মে নিজস্ব গ্রাহকদের ট্রেডিংয়ের আগে কোনো পরিচয়-যাচাই সংশ্লিষ্ট তথ্য সরবরাহের প্রয়োজন বোধ করেনি বাইন্যান্স। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বাইন্যান্স এখন বিকেন্দ্রীভূত ডিজিটাল সম্পদের হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম। আর বিশ্বব্যাপী ১০ কোটিরও বেশি ব্যবহারকারী থাকার কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি। আর ওই মামলার অভিযোগে কোম্পানির নেতৃত্বে থাকা চ্যাংপেং ঝাও এর নামও উঠে এসেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
মামলাটির ঘোষণা দেওয়ার সময় চ্যাংপেং ঝাও টুইটারে এক বার্তা পোস্ট করেন, যেখানে লেখা ছিল ইংরেজি ‘4’ অঙ্কটি। এর মাধ্যমে তিনি নিজের আগের এক পোস্টের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেখানে লোকজনকে ভুয়া খবর, আক্রমণ ইত্যাদি বিষয়াদি এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ ছিল। ২০২১ সালে বাইন্যান্স ঘোষণা দেয়, তারা নিজেদের নীতিমালা কঠোর করছে। তবে একই সময়, সিএফটিসি বলেছে, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ও বিভিন্ন শেল কোম্পানি ব্যবহার করে কীভাবে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এড়ানো যায়, সে সম্পর্কে তারা মার্কিন গ্রাহকদের গ্রাহকদের পরামর্শ দিয়েছে।
মার্কিন সংস্থাটি আরও বলেছে, কোম্পানিটি এইসব নীতিমালা এড়িয়ে গেছে সর্বোচ্চ কর্পোরেট মুনাফা আয়ের উদ্দেশ্যে। সংস্থাটি বাইন্যান্সকে ভর্তুকি ও জরিমানা দেওয়ার পাশাপাশি কোম্পানির স্থায়ী ট্রেডিং ও নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞার অনুরোধ জানিয়েছে মার্কিন আদালতকে। গত বছর মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্কবার্তা দেন, এই শিল্পে চলমান স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও স্বচ্ছতার অভাবের মতো বিষয়াদির বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের পরিকল্পনা করেছে তারা।
অক্টোবরে সিএফটিসি জানায়, ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ বিটফাইনেক্স ও ক্রিপ্টোমুদ্রা টিথারের বিরুদ্ধে মামলাসহ আগের ১২ মাসের ২০ শতাংশ মামলা সংশ্লিষ্ট খাতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে বাইন্যান্সের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ও সম্প্রতি ধসে যাওয়া এক্সচেঞ্জ এফটিএক্স ও এর প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ব্যাংকম্যান-ফ্রিডের বিরুদ্ধেও আর্থিক জালিয়াতির মামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা। সিএফটিসির চেয়ারম্যান রসটিন বেহনাম বলেন, সরকার এই মামলা করেছে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার উদ্দেশ্যে।
আর ক্রিপ্টো খাতে কাজ করা কোম্পানিগুলোর জন্য এটি বিস্তৃত এক সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করা উচিৎ। বেশ কয়েক বছর ধরেই, বাইন্যান্স জানতো তারা সিএফটিসির নীতিমালা লঙ্ঘন করছিল, যেখানে অর্থ প্রবাহ ও নীতিমালা এড়াতে তারা সক্রিয়ভাবেই কাজ করেছে। এটি একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করা উচিৎ যে সিএফটিসি মার্কিন আইনের ইচ্ছাকৃত পরিহার সহ্য করবে না বলে জানান তিনি। কয়েক বছরের বিস্ফোরক বৃদ্ধির পর ক্রিপ্টো শিল্প এখন দামের তীব্র পতনের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রকদের বাড়তে থাকা তদন্তের সঙ্গে লড়াই করছে।