এই সংখ্যা গত বছরের বিশ্বজুড়ে তিনশ ৮০ কোটি ক্রিপ্টো হ্যাকিং এর ৪৪ শতাংশ। একে ক্রিপ্টো হ্যাকিংয়ের জন্য সবচেয়ে বড় বছর হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিশ্লেষক কোম্পানি চেইনালিসিস। ২০২২ সালে উত্তর কোরিয়া সমর্থিত সাইবার আক্রমণকারীরা একশ ৭০ কোটি ডলারের ক্রিপ্টোমুদ্রা হ্যাক করেছে এমনই দাবি করছে শীর্ষ এক ব্লকচেইন বিশ্লেষক কোম্পানি। ক্রিপ্টো হ্যাকিং এর বেলায় এটি উত্তর কোরিয়ার আগের রেকর্ডের চারগুণ। ২০২১ সালে ৪২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের ক্রিপ্টো হ্যাকের অভিযোগ এসেছিল দেশটির বিরুদ্ধে।
এরইমধ্যে ছয়টি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। বিশ্লেষকদের অনুমান, কিম জং-উনের অধীনে পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্পের গতি বাড়াতে এ বছর নিজেদের সপ্তম পরীক্ষা চালাতে পারে দেশটি। বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়া দেশটি নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্রাগারের খরচ মেটানোর জন্য ক্রিপ্টো হ্যাকিং এর পথ বেছে নিয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের পরও গত বছর রেকর্ড সংখ্যক ব্যালিস্টিক ও অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে পিয়ংইয়ং।
২০২২ সালে হরাইজন নামে পরিচিত ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক থেকে ১০ কোটি ডলারের ক্রিপ্টো হ্যাকের পেছনে উত্তর কোরিয়ার ল্যাজারাস গ্রুপের সম্পৃক্ততার বিষয়টি গত মাসে নিশ্চিত করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। চেইনালিসিসের গবেষণা অনুসারে, ২০২২ সালে সামগ্রিক ক্রিপ্টোমুদ্রা হ্যাকিং এর ৮২ শতাংশই ঘটেছে বিকেন্দ্রিকৃত আর্থিক প্রোটোকলের কারণে, যা ডিসেন্ট্রালাইজড ফাইন্যান্স বা ডিফাই নামেও পরিচিত। ডিফাই ব্যবহারকারীরা ভালো করেই জানেন তাদের তহবিল ব্যবহার করলে কী হতে পারে।
কারণ, প্রোটোকল পরিচালনা করা বিভিন্ন স্মার্ট কন্ট্রাক্ট কোডে ডিফল্ট হিসেবেই সকলের প্রবেশাধিকার রয়েছে। বুধবারের প্রতিবেদনে চেইনালিসিস জানায়, তুলনা করলে দেখা যায়, ২০২০ সালে উত্তর কোরিয়ার সর্বমোট রপ্তানি আয় ছিল ১৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। ফলে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ক্রিপ্টো হ্যাকিং দেশটির অর্থনীতির বড় এক অংশ। কোম্পানিটি আরও বলেছে, এইসব হ্যাকার সাধারণত মিক্সার নামে পরিচিত কৌশলের মাধ্যমে ক্রিপ্টো জালিয়াতি করে।
এতে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর কাছে পাওয়া ক্রিপ্টোমুদ্রার সংমিশ্রণ ঘটানোয় তহবিলের মূল উৎস হারিয়ে যায়। অন্যান্য বিশ্লেষকরা বলেন, চীনের বিভিন্ন ব্রোকার ও নন-ফাঞ্জিবল টোকেন এনএফটির সহায়তায় ক্রিপ্টো জালিয়াতি করেছে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বচ্ছতার কারণে হ্যাকাররা ডিফাইর প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়। এর বিভিন্ন কোড স্ক্যান করে সিস্টেমের দুর্বলতা খোঁজার পাশাপাশি তারা সঠিক সময়ে আক্রমণ চালিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে।
ব্লকচেইন নিরাপত্তা কোম্পানি ‘হালবর্ন’ এর সিইও ডেভিড শোয়েড বলেন, ডিফাই নির্মাতারা নিজস্ব প্ল্যাটফর্মকে তুলনামূলক সুরক্ষিত রাখতে প্রচলিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা নিতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে, নিজেদের প্রোটোকলে পরীক্ষা চালাতে তারা বিভিন্ন হ্যাকিং প্রেক্ষাপট বা সন্দেহজনক গতিবিধি শনাক্তে লেনদেন আটকে দেওয়ার জন্য নকশা করা বিভিন্ন পদ্ধতিও ব্যবহার করতে পারে।।ভুক্তভোগীকে ব্যাংকের মতো ধীরগতিতে চলতে হবে না। তবে, তারা এর বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে ধারণা নিতেই পারেন।
তিনি আরো বলেন, ডিফাইর নির্মাতারা সবকিছুর আগে আয় বাড়ানোর বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেন। অনেক সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য নির্ধারিত তহবিলও ব্যবহৃত হয় ব্যবহারকারী আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে ।