সম্প্রতি ব্যবহারকারীর ‘রিয়েল-টাইম লোকেশন’ দেখা যায় এমন বেশ কয়েকটি ফিচার ফেসবুক বন্ধ হতে চলছে। পূর্বের বিভিন্ন ল্য-সুট এর পরিপ্রেক্ষিতে এই ফিচারগুলো বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বন্ধ হতে যাওয়া ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে নিয়ারবাই ফ্রেন্ডস, ওয়েদার অ্যালার্টস, লোকেশন হিস্টরি এবং ব্যাকগ্রাউন্ড লোকেশন। এসব ফিচারের ব্যবহার কম হওয়ার কারণে মেটা মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যমটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট ৯টু৫গুগল এর প্রতিবেদনে ফিচারগুলো বন্ধের বিষয়টি উঠে এসেছে। ৯টু৫গুগল এর প্রতিবেদন বলছে যে যারা এসব ফিচার ব্যবহার করেছেন, তাদের কাছে ফেসবুকের তরফ থেকে একটি বার্তা পাঠানো হয়েছে।
ইমেইলের বিবৃতিতে মেটা মুখপাত্র এমিল ভ্যাসকেজ জানান যে ব্যবহার কম হওয়ার কারণে আমরা কয়েকটি লোকেশন-ভিত্তিক ফিচার ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলছি। তবে, কীভাবে ব্যবহারকারীর লোকেশনের তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটি দেখতে লোকেশন সার্ভিসেস সেবাটি তারা এখনও ব্যবহার করতে পারবেন। এর মানে দাঁড়ায় যে ফেসবুক সামগ্রিকভাবে লোকেশন ডেটা সংগ্রহ বন্ধ করে দেবে না। কারণ, ব্যবহারকারীদের পাঠানো সেই বার্তায় ফেসবুক উল্লেখ করেছে, প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন এবং লোকেশন ‘চেক-ইন’ এর ক্ষেত্রে, নিজস্ব ডেটা নীতিকে অনুসরণ করে, তারা অন্যান্য উপায়ে ডেটা সংগ্রহ চালিয়ে যাবে।
৯টু৫গুগলকে পাঠানো বার্তায় ফেসবুক আগামী ৩১ মে থেকে ফিচারগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডেটা সংগ্রহ বন্ধ করে দেবে এবং ১ আগস্ট থেকে সংরক্ষিত সকল ডেটা মুছে ফেলবে এমনটি জানিয়েছে। আর এ খবর ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জকে নিশ্চিত করেছে। যদিও ফেসবুকের “সেটিংস এবং প্রাইভেসি” মেনুতে থাকা যেকোন লোকেশন ডেটা ব্যবহারকারী দেখতে, ডাউনলোড করতে বা মুছতে পারবেন। অন্যথায়, ফেইসবুক সেই ডেটা ১ আগস্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে ফেলবে বলে প্রতিবেদনে ভার্জ লিখেছে।
গতমাসে ফেসবুক জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকারকারীদের আরও উগ্রপন্থী ভুয়া তথ্য এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ববাদী গ্রুপের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে ফেসবুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। ফেসবুক অ্যালগরিদম নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদন গ্লোবাল উইটনেস প্রকাশ করে। উক্ত বিষয়টি একটি মানবাধিকার সংগঠনের সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে উঠে এসেছিল। তবে ফেসবুক বরাবরই দাবি করে এসেছে, তাদের সিস্টেমগুলো ভুয়া তথ্যের প্রচারণা কমানোর লক্ষ্য নিয়েই নকশা করা হয়েছে। কোভিড-১৯ নিয়ে ভুয়া তথ্যের প্রচার আর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজেদের তৎপরতা নিয়ে মেটা বিনিয়োগকারীদের ভুল তথ্য দিচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে নতুন দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।
ফেসবুক ও তার প্রতিষ্ঠান বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, ভুয়া তথ্য, কোভিড মিথ্যাচার মোকাবেলাসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভুল তথ্য দেয়ার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানায় এবং বিষয়গুলো এড়ানোর চেষ্টা চালায়। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায় যে ফেব্রুয়ারী মাসেই নতুন অভিযোগ দুটি আনা হয়েছিল। প্ল্যাটফর্মটিতে মিথ্যা প্রচারের উপস্থিতি বিপুল পরিমাণে উপস্থিত ছিল। মেটার বিরুদ্ধে নতুন যে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তার মধ্যে ফেসবুক কর্মচারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক সঙ্কট সম্পর্কিত মিথ্যা তথ্যের প্রচার বন্ধে নিজেদের প্রতিশ্রুতির কথা বললেও তার কিছুই তারা করেনি।
২০২১ এর পর থেকেই ফেসবুকের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠে আসছে। যার ফলে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার খারাপ সময় যাচ্ছে এখনো। ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া ডেটা সংগ্রহসহ আরো অনেক ধরনের অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত থাকার ফলে ব্যবহারকারীরা ফেসবুকের প্রতি ক্ষুব্ধ। বেশ কিছুদিন আগে ফেসবুকে দরপতনের ফলে প্রায় ২০০ মিলিয়ন অ্যাক্টিভ ইউজারের সংখ্যা কমে যায়। ২০১৯ সালে ফেসবুক অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারীদের ব্যাকগ্রাউন্ড লোকেশন বন্ধ করার সুবিধা দিয়েছিল। সে সময়ে কোন ব্যবহারকারী ঝুঁকিপূর্ণ’ কার্যক্রম করছে কি না সেটি নিশ্চিত করতে লোকেশন নজরদারির অভিযোগ এসেছিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
ব্যবহারকারীর ডেটা নিরাপদ রাখার বিষয়ে ফেসবুকের সুনামে ঘাটতি থাকলেও, সামাজিক মাধ্যমটি থেকে লোকেশন-ভিত্তিক সেবা সরানোকে স্বস্তিদায়ক হিসেবে প্রতিবেদনে ভার্জ উল্লেখ করেছে।