Reading Time: 3 minutes

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিভাগের মুখোমুখি হয়েছিলেন টিকটক সিইও শউ জি চিউ। বৃহস্পতিবার মার্কিন কংগ্রেসে সাড়ে চার ঘন্টা দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর শুনানি শেষে এক কংগ্রেস সদস্য মন্তব্য করেন, কিছু মানুষ এর চেয়েও দ্রুতগতিতে ম্যারাথনে দৌড়ান। শুনানিতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান, উভয় দলই প্রশ্নের বেলায় কোন ছাড় দেয়নি। শুনানির পর টিকটকের এক মুখপাত্র বলেন, মার্কিন রাজনীতিবিদরা এতে আসলে নিজেদের জাহির করেছেন।

মাঝে মাঝে এই হতাশাজনক আর কঠিন কিছু প্রশ্নমালা থেকে দর্শকরা একটি বা দুটি জিনিস শিখতে পেরেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি। চীনা মালিকানাধীন অ্যাপটি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রমাণ দেওয়ার এক উত্তাল সময় কাটানোর পর চিউ নিশ্চিতভাবেই একই ধরনের অনুভূতি পাচ্ছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি। কারণ, তার আগেও বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী মার্কিন কংগ্রেসের সামনে দাঁড়িয়েছেন। আর তাদের অভিজ্ঞতাও সহজ ছিল না।

কিছু বিষয় নিয়ে খুবই জোরালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদের পর অনেকগুলো তথ্য সেখানে প্রকাশ পায়। সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে মোটামুটি বিস্তারিত তুলে ধরা যাক।

মার্কিন ডেটায় চীনের প্রবেশাধিকার

শুনানিতে চিউ ক্রমাগত ‘প্রজেক্ট টেক্সাস’ নামে পরিচিত এক প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন। এই প্রস্তাবনার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সকল ডেটা সংরক্ষিত হবে মার্কিন কোম্পানি ওরাকলের তত্ত্বাবধানে। তবে, এই প্রকল্প পুরোপুরি কার্যকরযোগ্য নয়। কারণ, চিউ নিজেও নিশ্চিত করেন যে, চীনের বাইটড্যান্স প্রকৌশলদের কাছে মার্কিন ডেটার প্রবেশাধিকার রয়েছে। গ্লোবাল ইন্টারঅপারেবিলিটির ওপর নির্ভর করছে কোম্পানি। চীনা প্রকৌশলদের ডেটায় প্রবেশাধিকার আছে বলেন তিনি।

এই স্বীকারোক্তি নিয়ে রাজনীতিবিদরা ক্রমাগত প্রশ্ন তুলেছেন শুনানিতে। তাদের যুক্তি ছিল, যদি চীনের প্রকৌশলদের মাধ্যমে ডেটায় প্রবেশ করা যায়, তবে এটি বিশ্বাস করা কঠিন যে, দেশটির সরকার এতে প্রবেশ করতে পারে না। শুক্রবার, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একই দাবি তুলে বলে, কোনো কোম্পানিকে  তারা অন্যান্য দেশের ডেটা বা অভ্যন্তরীণ তথ্য সরবরাহ করতে বলেনি।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা

২০১৮ সালে ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরামর্শক কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার বিরুদ্ধে যখন থার্ড পার্টি অ্যাপের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ ওঠে, তখন এর ফলে ব্যাপক হৈচৈ সৃষ্টি হয়। যখন তাকে টিকটকের ব্যবহারকারীর ডেটা ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি বলেন, যে শ্রদ্ধার সঙ্গেই জানাতে চান, মার্কিন কোম্পানিগুলোর ডেটা সংরক্ষণের ট্র্যাক রেকর্ডও তেমন ভালো না, কেবল ফেসবুক ও কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার দিকেই তাকিয়ে দেখতে বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

শুনানিতে পাল্টা প্রশ্ন করার বেলায় কোন উপায় করতে না পেরে কিছুটা সংযতই ছিলেন চিউ। কংগ্রেস সদস্যদের বিভিন্ন কড়া সকল প্রশ্নের জবাবে তেমন প্রতিরোধী মনোভাব দেখাতে পারেননি তিনি। তবে, কয়েকটি বিশেষ মূহুর্তে তিনি তাদের প্রশ্নের জবাবে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে ফেলে পাল্টা আক্রমণ করেন চিউ।

টিকটক বিরোধী মার্কিন জনপ্রতিনিধিরা

শুনানিতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা টিকটকের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। আর সকল দিক থেকেই অবিশ্বাস ও সংশয়ের মাত্রা ছিল তীব্র। কংগ্রেসের সবচেয়ে দ্বিদলীয় কমিটিতে স্বাগতম বলেন রিপাবলিকান দল থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য বাডি কার্টার। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের একসঙ্গে আনায় চিউকে ধন্যবাদ জানান রিপাবলিকান দলের আরেক কংগ্রেস সদস্য ড্যান ক্রেনশ। শুনানির পর টিকটক অভিযোগ জানায়, প্ল্যাটফর্মের ডেটা সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থায় মনযোগ দেওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করার যথেষ্ট সময় ছিল না।

এক টিকটক মুখপাত্র জানান, কমিটির সদস্যরার আজ আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেননি। তা হলো, দেশটিতে ৫০ লাখ ব্যবসার জীবিকা অথবা ১৫ কোটি মার্কিন নাগরিকদের পছন্দের একটি প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার মতো বিষয়গুলোতে প্রথম সংশোধনীর প্রভাব। এতোজন রাজনীতিবিদকে একসঙ্গে দেখার বিষয়টি সত্যিই বেশ চমকপ্রদ ছিল প্রতিবেদনে বলেছে বিবিসি। অন্যান্য বিষয় নিয়ে কার্যত একমত না হলেও তারা এই বিষয়ে মনে প্রাণে একমত ছিলেন যে, টিকটক দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

কেন চিউর সন্তানেরা টিকটক ব্যবহার করে না?

শুনানির এক পর্যায়ে চিউকে ডেমোক্র্যাট দল থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য নানেট ব্যারাগান জিজ্ঞেস করেন, তার নিজের সন্তানরা টিকটক ব্যবহার করেন কি না। এর জবাবে চিউ বলেন, তারা এটি ব্যবহার করেন না কারণ তারা সিঙ্গাপুরে বসবাস করেন। আর ওই দেশে অ্যাপটির ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য তৈরি সংস্করণটি নেই। তবে, যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপটির শিশু ভিত্তিক সংস্করণ থাকার বিষয়টি পরিষ্কার করেন চিউ। তিনি আরও যোগ করেন, তার সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকলে তাদেরকে তিনি অ্যাপটি ব্যবহারের সুযোগ দিতেন।

বাইটড্যান্সের মালিকানায় চিউ

বাইটড্যান্সের মালিকানায় চিউর অংশ আছে কি না, এই বিষয়টি প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞেস করা হলে সেটির কোনো জবাব দিতে চাননি তিনি। নিয়ন্ত্রকদের চাপে পরবর্তীতে এই বিষয়টি স্বীকার করলেও, নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি এড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি। চিউর সবচেয়ে কম ফলদায়ক প্রচেষ্টা ছিল সম্ভবত তার বাইটড্যান্স থেকে টিকটককে দূরে রাখার বিষয়টি। সংজ্ঞা যাই হোক না কেন, মূল বিষয়টি হলো টিকটকের মালিক চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্স। এমনকি কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন চিউ নিজেও।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.