মেটার এবারের প্রান্তিকের হিসাবে মেটাভার্স শব্দটি তুলনামূলক কমই উঠে এসেছে। তবে, ভিআর সংযোজিত সামাজিক ভবিষ্যতের লক্ষ্যমাত্রায় বিনিয়োগ নিয়ে কোম্পানির অবস্থান আগের মতোই। টানা দ্বিতীয় বছরের মতো আর্থিক লোকসানের মুখ দেখেছে মেটা মালিকানাধীন ভিআর কোম্পানি রিয়ালিটি ল্যাবস। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে রিয়ালিটি ল্যাবসের পেছনে এক হাজার তিনশ ৭০ কোটি ডলার হারিয়েছে মেটা, যা ২০২১ সালের এক হাজার ২০ কোটি ডলার লোকসানের চেয়েও বেশি।
গত বছর রিয়ালিটি ল্যাবসের আয় দুইশ ১৬ কোটি ডলার, যা ২০২১ সালের দুইশ ২৭ কোটি ডলারের চেয়ে কম। ২০২১ সাল থেকে আর্থিক প্রতিবেদনে রিয়ালিটি ল্যাবসের ভিআর ও এআর বিভাগের খরচ নিজস্ব অংশে দেখাতে শুরু করে মেটা। এর থেকে বোঝা যায় এই খাতে মেটা কতোটা বিনিয়োগ করছে এবং এর সংখ্যাটিও বিস্ময়কর। এই খাতের সুযোগ কাজে লাগাতে, ২০১৪ সালেই অগ্রগামী ভিআর হার্ডওয়্যার কোম্পানি অকুলাস কিনে নিজস্ব প্রচেষ্টার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিল মেটা।
আর বিট সেবার গেমের নির্মাতা কোম্পানি ও ‘সুপারন্যাচারাল’ নামে পরিচিত ভার্চুয়াল শারীরিক ব্যায়াম বিষয়ক অ্যাপ নির্মাতা ‘উইদিনের’ মতো সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো কিনে এই খাতে কোম্পানিটির বিনিয়োগ কেবলই বেড়েছে। ২০২৩ সালের শেষে একটি পরবর্তী প্রজন্মের হেডসেট উন্মোচনের পরিকল্পনা করছে মেটা, যা অনেকটা মিক্সড রিয়ালিটি সুবিধা থাকা কোয়েস্ট হেডসেটের ঢেলে সাজানো সংস্করণের মতো। এই খাতে মেটার অন্যতম গ্রাহক-কেন্দ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি অ্যাপলও শীঘ্রই নতুন এআর/ভিআর হেডসেট চালু করতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেটা রিয়ালিটি ল্যাবসের কর্মী সংখ্যা প্রকাশ না করলেও গত বছর শেষে কর্মী ছাঁটাইয়ের আগে এই বিভাগে সম্ভবত ১৭ হাজার কর্মী ছিল। এই খাতের সিংহভাগ অর্থ খরচ হয় কর্মী ও হার্ডওয়্যার নির্মাণের পেছনে। মেটার সিএফও সুজান লি বলেন, ২০২৩ সালে এর চেয়েও বেশি লোকসানের অনুমান করছে কোম্পানিটি। তিনি বলেন, তাদের যে দীর্ঘমেয়াদী সুযোগগুলো দেখা গিয়েছে, ওই প্রেক্ষিতে এই খাতে অর্থপূর্ণ উপায়ে বিনিয়োগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
পাশাপাশি, নিজেদের এআর, ভিআর ও মেটাভার্স সফটওয়্যার প্রচেষ্টাকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বলেও আখ্যা দেন তিনি। টেকক্রাঞ্চ বলছে, সন্দেহপ্রবণ বিনিয়োগকারীদের কারণে মেটা জনসম্মুখে মেটাভার্স প্রচেষ্টার ওপর তুলনামূলক কম জোর দিলেও, এই খাতে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতই দেখাচ্ছে কোম্পানিটিকে। মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব সংকেত দেখা গিয়েছে, তার কোনওটিই পরামর্শ দেয় না যে রিয়ালিটি ল্যাবে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল বদলানো উচিত।
ক্রমাগত এই ব্যবস্থা কার্যকরের সুনির্দিষ্ট উপায়গুলো সমন্বয় করে দেখা হয়েছে। একে চলমান কাজের অংশ হিসাবে দেখা হবে বলে মনে করেন। এআর, ভিআর এবং মেটাভার্স সম্পর্কিত সফটওয়্যার হরাইজন ওয়ার্ল্ডস রিয়ালিটি ল্যাবসের আওতাধীন, এ সপ্তাহের আর্থিক আয়ের হিসাবে এই বিষয়টির ওপর জোর দিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। তিনি বলেন এই সফটওয়্যার ও সামাজিক প্ল্যাটফর্ম সম্ভবত তাদের কার্যক্রমের সবচেয়ে জটিল অংশ।
তবে, হার্ডওয়্যারের চেয়ে সফটওয়্যার তৈরির পেছনে তুলনামূলক কম খরচ হয় বলেন জানান তিনি।