বিগত সময় ধরে মেটার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠে আসছে। মেটার খারাপ সময় এবার হয়তো আর শেষ হবার নয়। এবারের খবরে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের কাছে মিথ্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। কোভিড-১৯ নিয়ে ভুয়া তথ্যের প্রচার আর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজেদের তৎপরতা নিয়ে মেটা বিনিয়োগকারীদের ভুল তথ্য দিচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে নতুন দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট এক প্রতিবেদন জানায় যে ফেব্রুয়ারী মাসেই নতুন অভিযোগ দুটি আনা হয়েছে।
মেটার বিরুদ্ধে নতুন যে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে ফেসবুক কর্মচারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক সঙ্কট সম্পর্কিত মিথ্যা তথ্যের প্রচার বন্ধে নিজেদের প্রতিশ্রুতির কথা বললেও তার কিছুই তারা করেনি। প্ল্যাটফর্মটিতে এ ধরনের মিথ্যা প্রচারের উপস্থিতি বিপুল পরিমাণে উপস্থিত ছিল। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে সংগঠনটি বলছে ফেসবুকের কর্মকর্তারা কোভিড মহামারী সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য ও মিথ্যাচার প্রচার বারবার মুছে দেওয়ার কথা বললেও প্রতিষ্ঠানটি অভ্যন্তরীণ নথিপত্র বলছে প্ল্যাটফর্মটিতে ব্যাপক হারে কোভিড নিয়ে মিথ্যাচার এখনো অধিক পরিমাণে ছড়িয়ে আছে।
সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এর কাছে হুইসেলব্লোয়ার এইড নামের একটি অলাভজনক সংগঠন নতুন অভিযোগ দুটি এনেছে। সংগঠনটি অভিযোগ করেছে যে মেটা তথ্য এবং উপাত্ত ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে এবং বিনিয়োগকারীদের দেওয়া প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চেপে গেছে। সংগঠনটি প্রতিনিধিত্ব করছেন মেটার তথ্য ফাঁসকারী সেই সাবেক কর্মী ফ্রান্সেস হাউগেন। হুইসেলব্লোয়ার এইড এসইসি এর কাছে নতুন অভিযোগ দায়ের করার খবর নিশ্চিত করেছে। প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিনিয়োগকারীদের সঠিক তথ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে বলে সংঘঠনটি মন্তব্য করেছে।
বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এবং মিথ্যাচার মোকাবেলায় ফেসবুক যথেষ্ট হেয়ালিপনা করে যাচ্ছে এমন অভিযোগ বেশ কয়েক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছে। ২০২১ সালে হাউগে ফেসবুক প্রতিষ্ঠান মেটা সম্পর্কে গোপন সব তথ্য ফাঁস করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সব কূকর্ম, কর্মীদের উপর নির্যাতন, মুনাফার লোভে ব্যবহারকারীদের ভালো-মন্দ ব্যাপারে গুরুত্ব না দেয়াসহ আরো নানান রকম অজানা তথ্য এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরেন। এরপর থেকেই মেটার খারাপ সময় শুরু। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র হাউগেনের কাছ থেকে পাওয়া নথিপত্রের ভিত্তিতে সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
কিন্তু ফেসবুক দাবি করে আসছে অভ্যন্তরীণ নথিপত্র ভুলভাবে উপস্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটির জনপ্রিয়তাকে তারা নষ্ট করতে চাচ্ছে। শুক্রবার প্রতিষ্ঠানটির একজন নির্বাহী দাবি করেন যে তার প্রতিষ্ঠান ভুয়া তথ্যের প্রচার বন্ধে বদ্ধপরিকর এবং তাদের প্রতিষ্ঠান স্বাধীন তথ্য যাচাইকারীদের সঙ্গে কাজ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির দাবি যে ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা ও গোপনতা নিশ্চিত করতে তাদের ৪০ হাজার কর্মী কাজ করছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি এই খাতে এক হাজার ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের দাবিও করেছে। এছাড়া মেটা বলে মিথ্যা তথ্যের প্রচার বন্ধে সার্বিকভাবে প্রযোজ্য এমন একক কোনো সমাধান নেই।
কিন্তু এটি মোকাবেলা করতে মেটা নতুন নতুন টুল এবং নীতিমালা প্রয়োগে সমসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইমেইল মাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ আইনজীবি অ্যান্ড্রু বাকাজ বলেন যে এসইসি এর কাছে জমা দেওয়া নথিপত্র থেকে এটা পরিষ্কার যে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড মিথ্যাচার মোকাবেলা প্রসঙ্গে ফেসবুক দুই রকম কথাবার্তা বলেছে। ব্যক্তি পর্যায়ে ফেসবুক এক কথা বলছিল এবং জনসম্মুক্ষে ভিন্ন কথা বলছিল। তবে, এ প্রসঙ্গে এসইসি কোন মন্তব্য করেনি। এই দুটি অভিযোগ ছাড়াও ফেসবুক এরকম অসংখ্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিল।
তবুও তারা কোন কাজের কাজ কিছুই করেনি। ভি-আর প্রজেক্টি নিয়ে প্রতিশ্রতি যা দিয়েছিল তা সম্পর্কেও এখনো কোন খবর পাওয়া যায়নি, এমনকি মেটাও এ নিয়ে কোন কথাও বলছে না। তরুণ প্রজন্ম এখন বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। বিগত ১১ বয়সী এক বাচ্চা ইন্সটাগ্রাম আসক্ত এবং তার স্পর্শকাতর ছবি তার বন্ধুরা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়াতে আত্নহত্যার শিকার হয়। অযৌক্তিক এবং অপ্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য বিজ্ঞাপন প্রচারের অভিযোগে মেটার বিরুদ্ধে বাচ্চার মা মামলা করেন। এটি নিয়েও মেটা তখন কিছু বলতে চায়নি। মুনাফা অর্জনের লোভে বড় বড় সমস্যাগুলো মেটার গুরুত্ব না দেয়ায় অনেক আলোচনা ও সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে।
সম্প্রতি মেটার ২৬ শতাংশ শেয়ার ধ্বস ঘটে। কোম্পানির বাজারমূল্য বর্তমানে কমে গয়ে ২৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌছেছে। বর্তমানে টিকটকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা একশ কোটির বেশি এবং তা দ্রুত বেড়ে চলেছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে জাকারবার্গ বলে আসছেন তাদের অন্যতম কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে চীনভিত্তিক ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক। টিকটককে আটকাতে ফেসবুক এই অ্যাপকে নকল করে ইনস্টাগ্রাম রিল তৈরি করে আসছে। এছাড়াও তিন মাসের মধ্যে ফেসবুকে অ্যাক্টিভ ইউজার কমে গিয়ে দশ লাখে পৌঁছেছে। দীর্ঘ ১৭ বছরে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই অবস্থার বিষয়টি সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।