Reading Time: 3 minutes

ডেটিং অ্যাপ, যেখানে মানুষ তার পছন্দের জীবন সঙ্গী অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু ডেটিং অ্যাপে কি আদৌ মনের মত মানুষ পাওয়া যায়? নাকি এটি মানুষকে ফাঁদে ফেলার এক অন্যতম নতুন কৌশল! অথবা অনলাইন ডেটিং অ্যাপগুলোতে পছন্দসই ব্যক্তি খোঁজা কতটুকু যুক্তিগত? এই আর্টিকেলটিতে ধারণা দিতে চলছি জনপ্রিয় কিছু ডেটিং অ্যাপের অন্ধকার দিকগুলো সম্পর্কে। 

বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপ

বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ডেটিং অ্যাপ হচ্ছে টিন্ডার। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের বয়স ৩০ এর কম, তাদের বেশিরভাগই অন্তত একটি হলেও ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করেন। গবেষণা বলছে, প্রায় ৩০ শতাংশ আমেরিকান টিন্ডার, গ্রাইন্ডার বা বাম্বলের মতো অ্যাপ ব্যবহার করেন প্রেম, সঙ্গী বা যৌনতার খোঁজে। এ নিয়ে আরও নানারকম তথ্য উঠে এসেছে পিউ রিসার্চের গবেষণায়। অনলাইনে ডেট করা প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনীর ভরসার জায়গা সোয়াইপ কালচারের বেশ পরিচিত এই অ্যাপটি।

ম্যাচ এবং বাম্বল হল দ্বিতীয় এবং তৃতীয় জনপ্রিয় অ্যাপ। গবেষণা বলছে, প্রায় ৩০ শতাংশ আমেরিকান টিন্ডার, গ্রাইন্ডার বা বাম্বলের মতো অ্যাপ ব্যবহার করেন ডেট কিংবা হুক আপের উদ্দেশ্যে। এ নিয়ে আরও নানারকম তথ্য উঠে এসেছে পিউ রিসার্চের গবেষণায়। গবেষণায় নজর ছিল ডেটিং অ্যাপের দুনিয়ায় আটটি বড় অ্যাপের দিকে। এর মধ্যে রয়েছে ওকেকিউপিড, ই-হারমোনি, হিঞ্জ, গ্রাইন্ডার ও হার। তবে বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে যেখানে প্রায় ৩১ শতাংশ ব্যবহারকারী এদের আওতায়।

এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো অ্যাপ হচ্ছে আওয়ার টাইম যার লক্ষ্য ৫০ বছর বা এর বেশি বয়সীরা। আরও আছে খ্রিষ্টান ব্যবহারকারীদের জন্য প্লেন্টিঅফফিশ এবং ক্রিশ্চিয়ান মিঙ্গল। এর পাশাপাশি আছে ফেসবুক ডেটিং। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী লোকজনকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় টিন্ডার এবং বাম্বল এ। বয়স যাদের ৫০, মানে যারা নির্ভরতা খোঁজেন তাদের ভরসার জায়গা ম্যাচ এবং ই-হারমোনি। আর বয়স নির্বিশেষে সব মিলিয়ে যারা অনলাইন ডেটে আগ্রহী তাদের মধ্যে শতকরা ৩৫ জন অ্যাপের সাবস্ত্রিপশন ফি বা অন্যান্য সুবিধার জন্য অর্থ খরচ করার করার কথা জানিয়েছেন।

এছাড়াও queer যারা তাদের জন্য রয়েছে গ্রাইন্ডার। কম বেশি মিলিয়ে তারাও ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে সঙ্গী খোঁজ করেন।

ডেটিং অ্যাপ কি আসলেই জীবন সঙ্গী পেতে যথোপযুক্ত?

জীবন সঙ্গী খুঁজতে ডেটিং অ্যাপে অনুসন্ধানে কি আদৌ যথাপোযুক্ত ফল আসে? সাধারণত ব্যবহারকারীরা মনে করেন ডেটিং অ্যাপে জীবনসঙ্গী পাওয়া খুব সহজ। আবার অনেকে মনে করেন ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে তার নিকটস্থ এলাকায় খুব কম সময়ে সন্ধান পাওয়া সহজ। আর এ বিষয়ে বয়ষ্কদের চেয়ে অল্পবয়সীরা অনেক বেশি আশাবাদী। গবেষণা অনুসারে, প্রাপ্তবয়স্ক যুগলদের প্রতি ১০ জনে এক জন অনলাইন ডেটিংয়ে সঙ্গী পাওয়ার কথা বলেছেন।

অপেক্ষকৃত তরুণ বয়সী এবং queer ব্যবহারকারীদের মধ্যে অ্যাপের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক তৈরির হার বেশি দেখা গেছে। ৩০ এর নিচের বয়সীদের মধ্যে ২০ শতাংশই সঙ্গী পেয়েছেন অনলাইনে। Queer উত্তরদাতাদের মধ্যে এটি ২৪ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা ৬৯ জনই নিজেদের বর্ণনা করেছেন In a relationship হিসেবে। সেটা বিয়ে, লিভ-ইন পার্টনার বা অন্য কোনোভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সঙ্গীর কথা বলেছেন তারা। আর গবেষণা বলছে, অনলাইনে ডেট খোঁজেন এমন লোকদের মধ্যে ৪৪ শতাংশই আদতে খোজেন পছন্দসই জীবনসঙ্গী।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

৪০ শতাংশ খোঁজেন ক্যাজুয়াল ডেট এরা শুধুমাত্র সময় কাটানোর জন্য ডেট করেন, কোনও দীর্ঘমেয়াদী আশা ছাড়াই। প্রতি চার জনে একজন বা ২৪ শতাংশ শারীরিক সম্পর্কে আছেন, আর ২২ শতাংশ শুধু বন্ধুত্বে আগ্রহী। তবে, শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহী এমন ব্যবহারকারীদের মধ্যে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি।

অনলাইন ডেটিং কতটা নিরাপদ

নিরাপত্তা আর অভিজ্ঞতার প্রশ্নে অনলাইন ডেটিংয়ের ফলাফল নানা ভাগে বিভক্ত পাওয়া গেছে। ডেটিং অ্যাপ থেকে তাদের অভিজ্ঞতা ইতিবাচকের চেয়ে বেশি তারা ফিরেছেন খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, অনলাইন ডেটিংয়ে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেশি। অনলাইনে ডেট করতে গিয়ে যারা অবাঞ্ছিত যৌন হয়রানিমূলক বার্তা বা ছবি পেয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই নারী। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ এই ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন।

একই বয়সসীমার পুরুষদের মধ্যে এই হার এক-তৃতীয়াংশের বেশি। আগ্রহীদের কাছ থেকে মেসেজ পাওয়ার সংখ্যা নারীদের বেলায় চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো বলে উঠে এসেছে গবেষণায়। পিউ-এর হিসাব বলছে, অনাগ্রহের কথা জানিয়ে দেওয়ার পরও গালিগালাজ বা শারীরিক ক্ষতির হুমকির কথা নারীরা শুনেছেন অনেক বেশি। ডেটিং অ্যাপ থেকে দেখা করার বিষয়টিকে সম্পূর্ণ নিরাপদ মনে করেন না এমন সংখ্যা পুরুষদের মধ্যে ৪১ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ।

তবে, অধিকাংশই বলেছেন, অনলাইন ডেটিং প্রোফাইল তৈরির সময় অ্যাপগুলোর উচিত ব্যবহারকারীদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা। এছাড়াও অ্যাপটিতে অতিরিক্ত পরিমাণে বর্ণ বৈষম্যতাও দেখা গিয়েছে। এশিয়ান প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শ্বেতাঙ্গ ব্যবহারকারীরা অনলাইনে সুবিধাজনক ডেটিং অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। এছাড়াও ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে স্ক্যামিং এর সংখ্যাও বেড়েছে ব্যাপকভাবে। কিছুদিন আগে ব্রিটিশ ব্যাংকিং কোম্পানি টিএসবির গবেষণায় উঠে এসেছে, স্ক্যামাররা আর্থিক সহায়তা চাওয়ার আগে বিভিন্ন ডেটিং সাইট ও সামাজিক মাধ্যমে নকল প্রোফাইল তৈরি করে।

এরপর এরা এমন লোকজনের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করে যারা নিঃসঙ্গ বা কারও সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহী। নিজেদের গ্রাহকদের ওপর চালানো টিএসবির গবেষণায় উঠে এসেছে, কোনো প্রেম প্রতারকের কাছে শিকারের প্রথম ও সর্বশেষ আর্থিক লেনদেনের গড় সময় ৫৩ দিন। বিভিন্নভাবে নিজেদের আর্থিক সমস্যার কথা বলে বিপুল সংখ্যক অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে এসেছি ডেটিং অ্যাপগুলোর মাধ্যমে। দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লোকজন প্রেমঘটিত স্ক্যামারের সঙ্গে এতটাই জড়িয়ে পড়েন যে, তারা এই সম্পর্কের মানুষটিকে সাহায্য করতে ঋণ নিয়ে থাকেন।

এছাড়াও দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে গোপন কিংবা স্পর্শকাতর ছবি ব্যবহার করে ব্লাকমেইল করে অর্থ হাতানোর অভিযোগ ও এসেছে অসংখ্য। আর ফেসবুক ডেটে এই ধরণের স্ক্যামিং বেশি ঘটেছে।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.