Reading Time: 3 minutes

২০১৮ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ নামে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় তিন বছরের ও বেশি সময় পার হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও বানিজ্যিকভাবে এটি এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। আর এমন অবস্থায় দ্বিতীয় আরেকটি স্যাটেলাইটের জন্য বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার সমঝোতা-স্মারক সাক্ষর করা হয়েছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় আরেকটি স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণের জন্য রাশিয়ার সাথে সমঝোতা-স্মারক স্বাক্ষর হলেও দ্বিতীয় আরেকটি স্যাটেলাইট-এর বর্তমানে প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। 

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন যে এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী রাশিয়ার গ্লাভকসমস বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২ তৈরি এবং উৎক্ষেপণ করবে। বুধবার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত মহাকাশ সংস্থা রসকসমস এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গ্লাভকসমস এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি এই সমঝোতা-স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এই স্যাটেলাইট নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণে কত টাকা লাগবে সেটি এখনো ঠিক হয়নি। তাছাড়া স্যাটেলাইট নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণের জন্য এক ধরনের বিশেষ চিপস এর প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া এ ধরনের চিপস আমদানি করতে পারছে না।

যার ফলে তাদের স্যাটেলাইট নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বলেছে, বাংলাদেশের জন্য একটি আর্থ অবজারভেটরি স্যাটেলাইট ভালো হবে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ উৎক্ষেপণ করেছিল, তখন মোট খরচ হয়েছিল তিন হাজার কোটি টাকা। তখন বাংলাদেশের জন্য কোন ধরনের স্যাটেলাইট প্রয়োজন, সেটি নির্ধারণ করার জন্য প্যারিস-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শাহজাহান মাহমুদ বিবিসি বাংলাকে বলেন যে এই স্যাটেলাইটের মূল কাজ হবে উপর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল দেখা।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাংলাদেশের উপরেই থাকবে। ঘন-ঘন বাংলাদেশকে প্রদক্ষিণ করবে। তিনি বলেন যে সমুদ্রের একটি বিশাল এলাকায় বাংলাদেশের আধিপত্য স্থাপিত হয়েছে। সেটা পর্যবেক্ষণের জন্য এ ধরনের স্যাটেলাইট প্রয়োজন। এর মাধ্যমে তারা উক্ত এলাকা উপর থেকে দেখতে পারবেন। যখন বাংলাদেশে বন্যার পানি আসা শুরু করবে, তখন তারা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন যে আগামী কয়েকদিনে কী পরিমাণ পানি আসবে। এছাড়াও তিনি ফসলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন। তবে লার্ন এশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাইয়িদ খান এই স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি দ্বিতীয় আরেকটি স্যাটেলাইটের একবারেই কোন প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের সময় কীভাবে গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ গ্রামগুলোর আগের চিত্র কেমন ছিল এবং বর্তমান চিত্র কেমন এসব প্ল্যানেট ইনক স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে এসেছে। আবু সাইয়িদ খান বলেন যে প্ল্যানেট ইনক এবং ম্যাক্সাস সারা পৃথিবীতে স্যাটেলাইটের কমার্শিয়াল সার্ভিস দেয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন যে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটটি এমন কী সেবা দেবে যেটা বাণিজ্যিক-ভিত্তিতে পাওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ উৎক্ষেপণের সময় বলা হয়েছিল, এটি বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে।

কিন্তু সাড়ে তিন বছর পার হলেও বাস্তবে এখন পর্যন্ত সফলতার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। লার্ন এশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাইয়িদ খান বলছেন যে আগের স্যাটেলাইট লাভজনক না করে দ্বিতীয় আরেকটি স্যাটেলাইটের দিকে যাওয়া সম্পূর্ণ বোকামি হবে। বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কাল হচ্ছে ১৫ বছর। এর মধ্যে তিন বছর চলেও গেছে। বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট কোম্পানি কোন আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে না এটি খুবই হতাশার বিষয় এবং রহস্যজনক। ওদিকে স্যাটেলাইটের পক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন যে মিয়ানমার বিষয়ক তথ্য অন্য স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জানা যেত। তাতে রেজ্যুলুশন কম এবং সেগুলো অর্থ দিয়ে কিনতে হতো।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

আবু সাইয়িদ খান বলেন যে প্রথম স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কত টাকা আয় করা হয়েছে, মাথার উপর ঋণের বোঝা কত এবং এর বিজনেস কেস কী এসব সম্পর্কে এখনো তারা জানেন না। যদিও বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইও শাহজাহান মাহমুদ স্বীকার করছেন, যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেটি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন বাইরে যে পরিমাণ ক্যাপাসিটি বিক্রি করার প্ল্যান করা হয়েছিল, সেটা বর্তমানে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছ্র না। বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট যখন আকাশে তোলা হয়, ততদিন বিভিন্ন দেশের আরো স্যাটেলাইট হয়ে গেছে এই এলাকায়।

তিনি আরো বলেন এখন অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাদের কাছে এটি বিক্রি করতে চাইছিলেন তাদের আর প্রয়োজন নেই। তিনি আশা করেন আগামী ছয়মাসের মধ্যে দেশের ভেতরে স্যাটেলাইট ক্যাপাসিটির অনেকটাই ব্যবহৃত হবে। রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখল করার পর আমেরিকা ও ইউরোপ রাশিয়ার উপর নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন আবু সাইয়িদ খান। তিনি বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছে। সুতরাং স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রেও সেটি সমস্যা হবার কথা নয়।

তাই তিনি আশা করছেন যে স্যাটেলাইট তৈরিতে তেমন কোন সমস্যা হবে না। রাশিয়াকে এই স্বাক্ষরে নেয়ার কারন হিসেবে তিনি রাজনৈতিক কারন বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া বিশেষ আর কোন কারন নেই। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আমেরিকা তার চিপ ইন্ডাস্ট্রিকে সতর্ক করে বলেছে, রাশিয়াতে চিপ রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে তারা যাতে তৈরি থাকে। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত স্পেস এজেন্সি রসকসমস এর প্রধান দিমিত্রি রগোজিন দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ২০২১ সালের ৭ই জুন জানিয়েছেন, চিপ আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে রাশিয়া কিছু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পারছে না।

রাশিয়া যদি ইউক্রেন আক্রমণ করে তাহলে দেশটিতে চিপ রপ্তানির উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। রগোজিনকে উদ্ধৃত করে রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে যে তাদের যথেষ্ট রকেট রয়েছে, কিন্তু মহাকাশে পাঠানোর মতো অবস্থা নেই। রসকসমস এর প্রধান জানিয়েছেন যে অনেক স্যাটেলাইটের কাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে। এজন্য বিশেষ ধরনের মাইক্রোচিপ দরকার। কিন্তু আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া মাইক্রোচিপ আমদানি করতে পারছে না।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.