Reading Time: 3 minutes

সেবাগ্রাহকদের গোপন ও স্পর্শকাতর ডেটায় প্ল্যাটফর্মটির অন্তত চার হাজার কর্মীর প্রবেশাধিকার আছে এবং তাদের যে কেউ চাইলেই সে ডেটা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবেন বলে সম্প্রতি মার্কিন সিনেটের বিশেষ শুনানিতে অভিযোগ করেছেন পিটার জ্যাটকো। জানুয়ারি মাসে চাকরিচ্যুত হওয়া সাবেক নিরাপত্তা প্রধান আরও বলেছেন, চীনা স্পাই প্রসঙ্গে টুইটারকে এফবিআইও সতর্ক করে দিয়েছিল। মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম টুইটারে অন্তত একজন হলেও চীনা স্পাই কাজ করছেন বলে মার্কিন জনপ্রতিনিধিদের সামনে সাক্ষ্য দিয়েছেন কোম্পানির সাবেক নিরাপত্তা প্রধান।

মঙ্গলবারের এক শুনানিতে তিনি বলেন যে তাকে বলা হয়েছিল, কর্পোরেট নিরাপত্তা দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং চীনা গুপ্তচর সংস্থা এমএসএস-এর অন্তত একজন এজেন্ট টুইটারে বেতনভূক্ত কর্মী হিসেবে রয়েছে। মঙ্গলবারে প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট সিনেটে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় পিটার দাবি করেছেন, চীনা স্পাইয়ের উপস্থিতি প্রসঙ্গে টুইটারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহিত করার পর তাকে উত্তরে বলা হয়েছিল আরেকজন থাকলেইবা কী যায় আসে। অগাস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে তথ্য ফাঁসকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন হ্যাকার ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ পিটার ‘মাজ’ জ্যাটকো।

টুইটার কর্তৃপক্ষ মোদি প্রশাসনের চাপে ভারতের স্থানীয় বাজারে অন্তত একজন সরকারী এজেন্টকে বেতনভুক্ত কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল এবং সেই কর্মী সেবাগ্রাহকদের স্পর্শকাতর ডেটা প্রবেশাধিকার নিয়ে সে সময়েই অভিযোগ তুলেছিলেন পিটার। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে হ্যাকারদের তরফ থেকে সরকারি পর্যায়ে সহযোগিতার লক্ষ্যে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৯৮ সালে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের এক শুনানিতেও অংশ নিয়েছিলেন। পরে গুগল এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গবেষণা সংস্থা ডারপার গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)’র কাছে ৮৪ পাতার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন জাটকো। পিটারের সাক্ষ্যের সত্যতা যাচাই করতে এক এফবিআই মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর পায়নি মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার। সাবেক এই নিরাপত্তা প্রধান তাতে অভিযোগ করেছিলেন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বট অ্যাটাউন্টের সংখ্যা নিয়ে সেবাগ্রাহক ও বাজারনিয়ন্ত্রক সংস্থা, উভয় পক্ষকে ভুয়া তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে আসছে টুইটার।

টুইটার গ্রাহক ডেটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সঠিত তথ্য দেওয়ার চেয়ে মুনাফা কামাইকেই বেশি গুরুত্ব দেয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তথ্য ফাঁসকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশের সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছেন সে প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে পিটার বলেন, তিনি তার ক্যারিয়ার এবং সুনামকে ঝুঁকির মুখে ফেলছেন। এতে আগামী পাঁচ বা দশ বছরের মধ্যে যদি ভালো কিছু হয় তবে সেটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। মঙ্গলবারের সিনেট শুনানীতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় পিটার বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তার মান বিবেচনায় নিলে অন্তত এক দশক পিছিয়ে আছে টুইটার। 

বিজ্ঞাপন (কেন?)

চাপ দিয়ে গ্রাহক ডেটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করানোর জন্য বাজার নিয়ন্ত্রকরা টুইটারকে এককালীন জরিমানা করলেও তাতে টুইটার কর্তৃপক্ষ ‘একেবারেই বিচলিত হন না’ বলে জানিয়েছেন তিনি। পিটারের ভাষ্যমতে, সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে টুইটারের সেবাগ্রাহকদের গোপন ও স্পর্শকাতর ডেটা। টুইটার গ্রাহকের যে সব ডেটা সংগ্রহে রাখ, তার মধ্যে আছে আইপি ঠিকানা, ফোন নাম্বার, ইমেইল, লোকেশন ডেটা, ব্রাউজার ও ডিভাইসের বিস্তারিত। এসব তথ্য ব্যবহার করে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে থাকা ব্যবহারকারীকে টার্গেট করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন পিটার।

এ ছাড়াও প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীদের স্পর্শকাতর ডেটায় প্রায় চার হাজার কর্মীর প্রবেশাধিকার আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। টুইটার কর্মীদের কেউ চাইলে ব্যবহারকারীদের ডেটা নিয়ে অনলাইনে পোস্টও করে দিতে পারবে বলে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন পিটার। তবে এখনও এমন কিছু ঘটার প্রমাণ মেলেনি। তবে, কর্মীদের কে কখন গ্রাহক ডেটায় প্রবেশ করছে, টুইটার তার কোনো হিসাবও রাখে না বলে তিনি জানিয়েছেন। সাইবার নিরাপত্তা খাতে অতিপরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য মানুষ হিসেবে পরিচিতি আছে পিটারের। গুগল ও মার্কিন সরকারের হয়ে কাজ করার সুবাদে সার্বিক প্রযুক্তি শিল্প এবং সরকারী পর্যায়েও তার গ্রহণযোগ্যতা আছে।

টুইটারে বিদেশি এজেন্টদের উপস্থিতি থাকায় এবং কার্যত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলে কিছু না থাকায় প্ল্যাটফর্মটি খুব সহজেই ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ে বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে পিটারের সাক্ষ্য থেকে। আর টুইটার পিটারের এ সব অভিযোগকে অসঙ্গত ও ভুল ত্রুটিতে পরিপূর্ণ বলে দাবি করলেও অভিযোগগুলোকে অগ্রাহ্য করে যাওয়ার সুযোগ কম। সব থেকে বড় বিষয় পিটারের মঙ্গলবারের সাক্ষ্য থেকে উঠে এসেছে, অভ্যন্তরীণভাবে প্ল্যাটফর্মের সেবা গ্রাহকদের স্পর্শকাতর ডেটার নিরাপত্তা নিয়ে একেবারেই কোনো মাথা ব্যথা নেই টুইটার কর্তৃপক্ষের।

মার্কিন জনপ্রতিনিধিদের এক প্রশ্নের উত্তরে পিটার জানিয়েছেন, টুইটার চীনা সরকারের সঙ্গে জড়িত প্রকাশকের বিজ্ঞাপন নিজের প্ল্যাটফর্মে রাখছে, এমন শঙ্কার কথা কোম্পানিটির কর্মীরাই বলেছিলেন তাকে। বিষয়টি নিয়ে কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তারা পিটারকে বলেন, আয়ের উৎস হারিয়ে ফেললে তাতে ঝামেলা হবে। 

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.