Reading Time: 3 minutes

প্ল্যাটফর্মের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে টুইটার বাজার নিয়ন্ত্রক ও সেবাগ্রাহক দুই পক্ষের কাছেই ‘মিথ্যাচার করে বিভ্রান্ত করছে’ বলে এসইসির কাছে কোম্পানির সাবেক হেড অফ সিকিউরিটি পিটার জ্যাটকো অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি ভারত সরকার টুইটারকে চাপ দিয়ে একজন সরকারি ‘এজেন্টকে’ কোম্পানির বেতনভুক্ত পদে নিয়োগ দিতে বাধ্য করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, ব্যবহারকারীদের স্পর্শকাতর ডেটায় প্রবেশাধিকার পেয়েছিলেন উক্ত ভারতীয় এজেন্ট।

আলোচিত এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিরুদ্ধে এমন আরও গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন কোম্পানির সাবেক নিরাপত্তা প্রধান। প্ল্যাটফর্মের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও বাজার পর্যবেক্ষক এবং সেবাগ্রাহকদের কাছে মিথ্যাচার করেছে টুইটার বলে অভিযোগ এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবিভাগ, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সেচেঞ্জ কমিশন বা এসইসি এবং ফেডারেল ট্রেড কমিশনের বা এফটিসি এর কাছে জমা দেওয়া সাক্ষ্যে পিটার টুইটারকে গণতন্ত্র এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজার পর্যবেক্ষক সংস্থার কাছে দেওয়া সাক্ষ্যে পিটার অভিযোগ করেছেন, একজন সরকারি এজেন্টকে টুইটারের স্থানীয় কার্যালয়ে বেতনভুক্ত পদে নিয়োগ দিতে বাধ্য করেছিল ভারত সরকার। আর কোম্পানির দুর্বল নিরাপত্তা অবকাঠামোর কারণে সেবাগ্রাহকদের গোপন ও স্পর্শকাতর ডেটায় সহজেই প্রবেশাধিকার পাওয়ার কথা উক্ত ভারতীয় এজেন্টের। এ বছরের জুলাই মাসেই পিটার এসইসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।

তার অভিযোগ ও সাক্ষ্যের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ দেখার সুযোগ হয়েছে বিবিসি ও সিবিএসের মতো প্রথমসারির একাধিক সংবাদমাধ্যমের। ২৩ অগাস্ট সিএনএনে সাক্ষাৎকার দিয়ে পিটার আবির্ভূত হয়েছেন একজন হুইসেল ব্লোয়ার হিসেবে। বট অ্যাকাউন্টের সঠিক সংখ্যা নিয়ে টুইটার ইলন মাস্কের কাছে মিথ্যা বলছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। টুইটারে ভেতরেও একই ধরনের অভিযোগ শোনা গেছে বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন কোম্পানিরই এক কর্মকর্তা।

তবে, বার্তাসংস্থাটিকে এ প্রসঙ্গে কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি উক্ত ব্যক্তি। জ্যাটকোর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেছিল রয়টার্স। তবে মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে তাতে কোন সাড়া দেয়নি। ভারতের স্থানীয় আদালতে আইনি লড়াই চলছে টুইটার ও দেশটির সরকারের মধ্যে। ভারত সরকার প্ল্যাটফর্মটিকে নির্দিষ্ট কিছু কনটেন্ট মুছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ভারত। এর বিরুদ্ধে স্থানীয় আদালতের শরণাপন্ন হয় টুইটার কর্তৃপক্ষ।

পরবর্তীতে ভারত সরকারের কর্মকর্তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। জ্যাটকোর অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় দেওয়া বিবৃতিতে টুইটারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, টুইটার এবং এর গোপনীয়তা ও ডেটা নিরাপত্তা চর্চা নিয়ে মিথ্যাচার যা অসঙ্গতি ও ভুলত্রুটিতে ভরা এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক তথ্যের অভাবও আছে এতে। এসইসির কাছে দেওয়া সাক্ষ্যে পিটার বলেছেন, কোম্পানির কার্যনির্বাহী সদস্যরা জানতেন যে ভারত সরকার একজন সরকারি এজেন্টকে কোম্পানির বেতনভুক্ত পদে নিয়োগ দিতে সফল হয়েছে।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

কিন্তু, বিষয়টি প্ল্যাটফর্মের সাধারণ ব্যবহারকারীতের জানাননি তারা। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ইতোমধ্যে পিটারের অভিযোগের সমর্থনে তথ্য-প্রমাণ জমা দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবিভাগ, জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগ এবং সিনেটের গুপ্তচরবৃত্তি বিষয়ক বিশেষ কমিটির কাছে। পিটার জ্যাটকো জানুয়ারি মাসে টুইটারের নিরাপত্তা প্রধানের চাকরি সরিয়ে ফেলা হয়। তাকে ছাঁটাই করার কারণ হিসেবে টুইটার বলেছে যে তার নেতৃত্ব কার্যকর নয় এবং তার কাজের পারফর্মেন্সও খারাপ।

নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে হ্যাকারদের তরফ থেকে সরকারি পর্যায়ে সহযোগিতার লক্ষ্যে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়ে তিনি প্রথম আলোচনায় আসেন। ১৯৯৮ সালে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের এক শুনানিতেও অংশ নিয়েছিলেন। পরে গুগল এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গবেষণা সংস্থা ডারপার গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তবে পশ্চিমা সাইবার নিরাপত্তা খাতে আলাদা পরিচিতি আছে পিটারের। হ্যাকারদের মধ্যে তিনি পরিচিত ‘মাজ’ নামে।

২০২০ সালে বারাক ওবামা এবং জো বাইডেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাকারের কবলে পড়লে পিটারকে তৎকালীন প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডরসি কোম্পানির নিরাপত্তা প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। বট ও স্প্যাম অ্যাকাউন্টের সংখ্যা নিয়েও পিটার টুইটার ভুল তথ্য দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। স্প্যাম ও বট অ্যাকাউন্টের বেলায় টুইটারের কার্যনির্বাহী কর্মকর্তারা ইচ্ছা করেই অজ্ঞতা প্রদর্শন করতে চান বলে পিটার অভিযোগ করেছেন।

এর ফলে ইলন মাস্ক-টুইটার মামলার রায় টেসলা মাস্কের যেতে পারে বলে বিবিসি ধারণা দিয়েছে। চার হাজার চারশ কোটি ডলারে টুইটারের সকল শেয়ার কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে সমঝোতা চুক্তি করেছিলেন মাস্ক। সিএনএনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিটার বলেছেন, প্ল্যাটফর্মের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অবকাঠোমোতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মানুষের প্রবেশাধিকার আছে, যার ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। টুইটার সেবাগ্রাহকদের স্পর্শকাতর ডেটার নিরাপত্তা রক্ষায় যথেষ্ট তৎপর নয় বলেও পিটার অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলছেন, কোনো ব্যবহারকারী তার অ্যাকাউন্ট মুছে দিলেও টুইটার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই ব্যক্তির স্পর্শকাতর ডেটা সম্পূর্ণ মুছে দেয় না। জ্যাটকোর অভিযোগ, টুইটার প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার এমন কোনো ঘটনা বা নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে, যা বাজারনিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে জানানোর মতো গুরুতর। এছাড়া, অসাধু উদ্দেশ্য আছে এমন কর্মীদের ঝুঁকি মোকাবেলার কোনো যথাযথ প্রক্রিয়াও কোম্পানিতে নেই। টুইটারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে একটি যাত্রীবাহী প্লেনের সকল যাত্রীর প্লেনের ককপিট এবং পাইলটের আসনে প্রবেশাধিকার পাওয়ার সঙ্গে তিনি তুলনা করেছেন।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.