সম্প্রতি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের সন্ত্রাসবাদী এবং উগ্রপন্থী সংস্থার তালিকাভুক্তির খবর নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স। সোশাল মিডিয়া জায়ান্ট মেটার মূল দুই প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামকে রাশিয়া সন্ত্রাসবাদী ও উগ্রপন্থী সংস্থার তালিকাভূক্ত করেছে। এখন চাইলেই রাশিয়ার ভূখণ্ডে স্থানীয় ব্যাংকগুলো মেটার সকল লেনদেন আটকে দেয়ার ক্ষমতা রাখছে। মার্চ মাসেই রাশিয়া বিরোধী তথ্য প্রচারের অভিযোগে উক্ত দেশ প্ল্যাটফর্ম দুটিকে নিষিদ্ধ করেছিল।
রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করার পর মেটা ঘোষণা দিয়েছিল তারা নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে রাশিয়ান আক্রমণকারীদের মৃত্যু কামনা করে, এমন বার্তা উল্লেখিত কনটেন্ট পোস্ট করার অনুমিত দেবে। তবে অসামরিক জনগনের প্রতি হুমকি প্রদর্শন করে এমন কোনো পোস্টের জন্য অনুমতি পাওয়া যাবে না। তার পরপরই নিজ ভূখণ্ডে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামকে নিষিদ্ধ করেছিল রাশিয়া। মেটা নিষেধাজ্ঞার বিরোধীতা করে আদালতের শরণাপন্ন হলেও জুন মাসে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে রায় দেয় মস্কোর আদালত।
তবে, মেটার মালিকানাধীন মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ উক্ত নিষেধাজ্ঞার অধীনে নেই বলে জানিয়েছে বিবিসি। রাশিয়ার স্থানীয় বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ। এটি ব্যবহারের সুযোগ হারালে দেশটির নাগরিকদের অনেকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই হোয়াটসঅ্যাপকেও একই অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। সন্ত্রাসবাদী এবং উগ্রপন্থী সংস্থার তালিকাভুক্তি প্রসঙ্গে মেটার প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করছে বিবিসি।
এছাড়াও রাশিয়ায় এখনও নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে ইনস্টাগ্রাম। আর দেশটিতে ভিপিএন সেবার বহুল প্রচলনের সুবাদে সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এতোদিন ইনস্টাগ্রামের ব্যবহার অব্যাহত রাখতে পেরেছেন দেশটির সাধারণ ব্যবহারকারীরা। সন্ত্রাসবাদী সংস্থার অ্যাখ্যার কারণে সে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সেই প্রেক্ষিতে ভিপিএনের মাধ্যমে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করলেও তা এখন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে রাশিয়ার আইনে।
ইন্টারফ্যাক্সের প্রতিবেদন বলছে, সন্ত্রাসবাদী এবং উগ্রপন্থী সংস্থার তালিকায় নাম আসা মানে হলো চাইলেই রাশিয়ায় মেটার সকল লেনদেন স্থগিত করতে পারবে স্থানীয় ব্যাংকগুলো। বিবিসি বলেছে, পশ্চিমা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আর রাশিয়ার মধ্যে সীমান্ত রেখা আঁকা হয়ে গেছে কয়েক মাস আগেই। আর রাশিয়ার বাজারে ফেইসবুক নকল করে তৈরি প্ল্যাটফর্ম ভিকে এর উপস্থিতির কারণে নিষিদ্ধ হয়েও বড় কোনো ব্যবসায়িক সুযোগ হারাচ্ছে না কোম্পানিটি।
মার্চ মাসে স্থানীয় মিডিয়া পর্যবেক্ষকদের হুশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়ার সীমিত সংখ্যক স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের মধ্যে অন্যতম দৈনিক ‘নোভায়া গাজেটা’। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি আছে এমন সংবাদকর্মীদের নিজ ভূখণ্ডে সক্রিয় থাকার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কার্যত একা হয়ে পড়েছে।
তার প্রতিক্রিয়ায় ভিন্ন মত প্রচারের সবগুলো পথের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে দেশটির সরকার। কোন বিষয়ে কী ভাবে সংবাদ প্রতিবেদন তৈরি করা যাবে এবং প্রচার করা যাবে সে বিষয়েও নতুন আইন পাশ করেছে রাশিয়া সরকার। নতুন আইনে দীর্ঘ কারাদণ্ডের বিধানও রেখেছে পুতিন প্রশাসন। এদিকে রাশিয়া বিরোধী মনোভাব প্রচারের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথমসারির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড।
মার্চ মাসেই এক মেটা কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছিলেন, কোম্পানির নীতিমালায় অস্থায়ী কিছু পরিবর্তন আনছেন তারা। ইউক্রেনে চলমান আগ্রাসনের আলোকে ভুক্তভোগীদের আক্রমণকারী সামরিক শক্তির প্রতি সহিংস মনোভাব প্রকাশের সুযোগ দেওয়ার জন্য নীতিমালায় অস্থায়ী পরিবর্তনগুলো আনার কথা বিবিসিকে জানিয়েছিলেন তিনি। রাশিয়ায় সন্ত্রাসবাদী ও উগ্রপন্থী সংস্থার উক্ত তালিকায় আরও আছে তালেবান এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নাম।
নিজ ভূখণ্ডে টুইটারের সেবাও সীমিত করে রেখেছে রাশিয়া। আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রযুক্তি কোম্পানি রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর পর থেকে রাশিয়া তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ। তাই যেকোন তথ্য রাশিয়ার পছন্দ মত না হলেই সেটিকে উগ্রপন্থী, ভুয়া, সন্ত্রাসবাদ হিসেবে তুলে ধরছে।