বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামের, টিকটকের মত প্লাটফর্মগুলোতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপস্থিতি ঠেকানোর লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যে নীতিমালা থাকলেও কম বয়সী শিশু কিশোররা সহজেই তাতে সম্পূর্ণ ভুল পরিচয় দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলছে বলে উঠে এসেছে সেখানকার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্যা অফিস অফ কমিউনিকেশনস বা অফকম এর এক গবেষণায়। যুক্তরাজ্যের প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে একজন বয়স লুকিয়ে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলেছে।
বড়দের সামাজিক মাধ্যমেও বয়স নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলছে তারা। এসবের কারনে শিশুদের অনুপযুক্ত এবং ক্ষতিকর কনটেন্টের মুখে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে দাবি অফকম এর। অফকমের অনুদানের গবেষণায় উঠে এসেছে, যুক্তরাজ্যের ৩২ শতাংশ শিশু এমন সব প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলে রেখেছে যা মূলত ‘অ্যাডাল্ট’ বা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। আর, আট থেকে ১৫ বছর বয়সী ৪৭ শতাংশ শিশু ফেসবুক, টিকটকের মত সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে নিজের বয়স উল্লেখ করেছে ১৬ বা তার বেশি হিসেবে।
সামাজিক মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট আছে ১৩ বছরের কম বয়সী ৬০ শতাংশ শিশুর। যদিও বেশিরভাগ সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে যোগ দেওয়ার নূন্যতম বয়সসীমা ১৩ বা তার বেশি। এ নিয়ে অফকম প্রতিনিধি অ্যানা-সোফি হার্লিং বিবিসিকে বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমগুলো যেভাবে বয়সের ভিত্তিতে ব্যবহারকারীদের শ্রেণীভূক্ত করে, সে প্রক্রিয়ার বড় প্রভাব রয়েছে ব্যবহারকারীদের যে কনটেন্ট দেখানো হচ্ছে তার ওপর। যদি অনলাইনে শিশুদের নিরাপদ রাখার ব্যাপারে আন্তরিক হতে হয় তবে প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে বয়স যাচাইয়ের উপায় অবশ্যই থাকতে হবে।
একথা তিনি বিবিসিকে বলেন। তিনি এটিও বলেন, যখন ১৮ বছরের কম বয়সীদের ওপর সম্ভাব্য ক্ষতিকর কনটেন্ট নিয়ে কথা বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে সেই কনটেন্টের বিরূপ প্রভাব অপ্রাপ্তবয়স্কদের ওপর এর চেয়েও গুরুতর হতে পারে, কারণ তারা এখনও বড় হচ্ছে। শিশুরা যখন বারবার এমন ছবি এবং ভিডিও দেখে যাতে একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করা হচ্ছে, তখন কার্যত তাদেরকে নিজেদের অথবা বন্ধুদের সম্পর্কে ভিন্নভাবে ভাবতে এবং ভিন্ন আচরণের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল কোম্পানি মেটার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল বিবিসি। জবাবে, বয়স নির্ধারণ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সর্বশেষ উদ্যোগের দিকে নজর দিতে বলেছেন মেটার এক মুখপাত্র। বয়স নিশ্চিত করার জন্য তৃতীয় পক্ষের মতামত নেওয়ার ফিচার চালু করেছে মেটা। এ ছাড়াও ব্যবহারকারীর ভিডিও বিশ্লেষণ করে বয়স নির্ধারণের প্রযুক্তির কথাও বলেছে সবচেয়ে জনবহুল এই প্ল্যাটফর্ম। এ প্রসঙ্গে টুইটার এবং টিকটকের প্রতিক্রিয়াও জানার চেষ্টা করে বিবিসি।
তবে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছ থেকে কোনো উত্তর পায়নি সংবাদমাধ্যমটি। এ পরিস্থিতিতে শিশুদের নিরাপদ রাখতে বিনিয়োগের দাবি করেছে ইউটিউব। শিশুদের জন্য আলাদা অ্যাপ এবং শিশু উপযোগী কনটেন্টের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়নের কথাও জানিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি। অ্যানা-সোফি অ্যাকাউন্ট তৈরির সময় বয়স মেনে সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বন নিশ্চিত করতে অভিভাবক এবং শিশু দুপক্ষের সঙ্গেই কথা বলা উচিত বলে জানান।