Reading Time: 2 minutes

এআই নির্মাতা স্ল্যামকোরের প্রধান নির্বাহী ওয়েন নিকোলসনের মতে, অনেক কোম্পানি মানবাকৃতির রোবট নিয়ে কাজ করছে কারণ জনসাধারণের জন্য এটা কৌতুহল উদ্দীপক। কিন্তু চাকা নির্ভর রোবট, এমনকি ড্রোনও নিয়ন্ত্রণ করা এর চেয়ে অনেক সহজ। মানবাকৃতির একটি রোবটকে সোজা হয়ে দাঁড় করাতেই প্রচুর শ্রম দিতে হয়। গেল সপ্তাহেই নতুন অপটিমাস রোবটের প্রোটোটাইপ দেখিয়ে ভক্তদের মুগ্ধ করেছে টেসলা। আর এর নির্মাতা ইলন মাস্কের উপস্থাপনাতেও নাটকীয়তা ছিল।

মানবাকৃতির রোবটের পক্ষের যুক্তি হচ্ছে, যে পরিবেশে মানুষ বাস করে, সেখানে মানুষের তৈরি টুল বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কাজ করতে পারবে রোবটগুলো। নিজের মত দেখতে হলে রোবটগুলোর সঙ্গে বা পাশাপাশি কাজ করতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন রক্ত-মাংসের মানুষরা। কার্যক্ষমতার বিচারে রোবটের মানবাকৃতির নকশা কতোটা যৌক্তিক সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। উপস্থাপনার নাটকীয়তায় মজা পেয়েছেন উপস্থিত অনেকেই; কিন্তু তার রেশ কাটতে না কাটতেই প্রশ্ন উঠেছে অপটিমাস এবং সার্বিক রোবটিক্স শিল্পে হিউম্যানয়েড বা মানুষের মতো দেখতে রোবট নির্মাণ চেষ্টার যৌক্তিকতা নিয়ে।

অপটিমাস যে বাজারজাতকরণের উপযোগী নয়, তা স্বীকার করে নিয়েছেন টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক নিজেই। অপটিমাসের পেছনের মূল রোবটিক্স প্রযুক্তিকে নির্ভরযোগ্য মনে হয়েছে বলে মন্তব্য বিবিসির, এই প্রযুক্তি খাতে টেসলাও ঠিক নবীন নয়। কিন্তু বাজারে অভিষেক হওয়ার সময়ে অপটিমাসের বাহ্যিক গঠন আরও যৌক্তিক কিছু হবে বলে বিবিসিকে বলেছেন ওয়েল নিকোলসন। তিনি বলেন টেসলা চাকা নির্ভর রোবট বানাবে সেটা সে নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারেন। 

এ শতকের শুরুতে ফুটবল খেলে বাজারে আলোড়ন তুলেছিল যে রোবটগুলো, একবারের চার্জে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট চলতো সেগুলো। বিভিন্ন সময়ে স্বপ্নের রোবট বানাতে গিয়ে ব্যর্থও হয়েছেন নির্মাতারা। কিন্তু তারপরও থেমে নেই এ প্রযুক্তি খাত, বরং ব্যর্থতা থেকে শিখে ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়েছে এ প্রযুক্তি। বিশেষ করে গত এক দশকে বড় অগ্রগতি এসেছে রোবটিক্স প্রযুক্তিতে। ২০০৮ সালের রোবটগুরোর তুলনায় ২০২২ সালের রোবটগুলো অনেক বেশি আধুনিক বলে মন্তব্য করেছেন বিবিসির সংবাদকর্মী জোই ক্লেইম্যান।

কিন্তু কার্যক্ষমতার বিচারে সবচেয়ে সফল রোবটগুলোর সিংহভাগই বাহ্যিক গঠনের বিচারে মানুষের মতো দেখতে নয় বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। সতর্কতার সঙ্গে রোগীর ওপর অস্ত্রোপচার চালায় যে রোবটগুলো, বা গুদামের মালামাল সামলায় যে রোবটগুলো এর কোনোটিই দেখতে মানুষের মতো নয় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। সার্বিক প্রযুক্তি শিল্পের একটা বড় অংশ দৈনন্দিন জীবনের কাজ করতে সক্ষম রোবট বানানোর চেষ্টা করছে।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

ঘর সাফ করা, বয়োজ্যেষ্ঠদের দেখভাল করা, রোগীর ওপর অস্ত্রোপচার চালানো, দাবা খেলা, বারে পানীয় বানানো ও পরিবেশন, প্রয়োজনীয় সদাইপাতি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া এমন নানা কাজে সক্ষম রোবট হয় ইতোমধ্যেই কেউ বানিয়ে বসেছেন, অথবা বানানোর চেষ্টা করছেন। এ সমস্ত দিক দিয়ে কিছু রোবটের সাফল্য অন্যদের চেয়ে বেশি। কিন্তু যে বিষয়গুলো কখনোই জনসমক্ষে আসে না বা সাই-ফাই সিনেমার দর্শকদের দেখানো হয় না, তা হল রোবটগুলোকে কাজের সক্ষমতা দিতে প্রি-প্রোগ্রামিংয়ের পেছনে নির্মাতাদের শ্রম আর ব্যাটারির সীমিত আয়ু।

জোই ক্লেইম্যান বলেন বৃদ্ধাশ্রমে বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে দেখভালের জন্য নির্মিত রোবটগুলোর গঠন দেখতে কিছুটা মানুষের মতো হলেই হয়তো ভালো হবে এমনটা নয়। আর যদি হয় ও তবে, পুরোপুরি নয়। হুবহু মানুষের মতো দেখতে কিন্তু মানুষ নয় এমন কিছু সামনে চলে এলে তাতে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে মানুষের প্রত্যাশাই হয়তো জটিলতার কারণ বলে অনুমান ক্লেইম্যানের। ঘাস কাটা, খাবার রান্না করা বা বাচ্চার দেখভাল করার মতো কাজগুলোর জন্য মানবাকৃতির রোবট মানুষের মতোই আচরণ করবে বলে প্রত্যাশা করেন সবাই।

যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গে অবস্থিত ন্যাশনাল রোবটেরিয়ামের অধ্যাপক হেলেন হ্যাস্টির মতে হেলেন হ্যাস্টির মতে, যদি খুব বেশি মানুষের মতো হয়, তবে তাতে মানুষই আগ্রহ হারাবে। এছাড়াও ‘মাল্টি-টাস্কিং’ সক্ষমতা পেতে এখনও অনেক পথ বাকি রোবটিক্স প্রযুক্তির। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে কাজের জন্য রোবটটিকে বানানো হয়েছে এর নকশা যেন তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়,” বিবিসিকে বলেনে তিনি। উঁচুনিচু পথে বা কোনো দালানের ধ্বংসাবশেষে অনুসন্ধানের জন্য বস্টন ডায়নামিক্সের চার পেয়ে রোবট সেরা হলেও, রান্নঘরে কাজ করার জন্য পায়ের চেয়ে চাকাই হয়তো একটি রোবটের জন্য বেশি কার্যকর।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.