Reading Time: 3 minutes

চীনের কঠোর ‘জিরো-কোভিড’ নীতিমালায় আগে থেকেই চাপের মুখে ছিল অ্যাপল। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষে আরও বিপাকে পড়েছে আইফোন নির্মাতা। বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে আইফোনের উৎপাদন ও বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা। চীনের আইফোন কারখানায় সহিংস শ্রমিক বিদ্রোহে বিপাকে পড়েছে অ্যাপল। অক্টোবর মাস থেকেই বিপত্তির শুরু, কোভিড লকডাউনে হেনান প্রদেশের চ্যাংচোউ শহরের অবস্থিত ফক্সকনের আইফোন নির্মাণ কারখানায় কার্যত বন্দী হয়ে পড়েছিলেন হাজারো শ্রমিক।

বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেতে পাচিল টপকে পালিয়েছেন কারখানার তাদের অনেকে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকায় বছর জুড়েই হার্ডওয়্যার উৎপাদনে কেবল চীনের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করছিল অ্যাপল। ফক্সকন কারখানায় সহিংসতার জেরে অ্যাপলের ভারতের মত অন্যান্য দেশে উৎপাদন কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়ার গতি আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। সিএনএন জানিয়েছে, শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে বোনাস দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল ফক্সকন।

কিন্তু, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা বোনাসের প্রতিশ্রুতি রাখছে না বলে অভিযোগ তুলে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে প্রতিবাদ শুরু করেন নতুন শ্রমিকরা, যা নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে সংঘাত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সিএনএন জানিয়েছে, শ্রমিকদের নগদ অর্থের বিনিময়ে কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে ফক্সকন। মধ্য চীনের চ্যাংচোউ শহরের ফক্সকন ক্যাম্পাসের উৎপাদনে চলমান স্থবিরতা অ্যাপলের জন্য অ্যালবাট্রস পাখির মতো কাজ করবে বলে সিএনএনকে বলেছেন বাজার গবেষণা সংস্থা ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড্যান আইভস।

তিনি বলেন, এই অস্থিরতা এবং উৎপাদন বন্ধ থাকার ঘটনায় অ্যাপল প্রতি সপ্তাহে একশ কোটি ডলারের আইফোন বিক্রি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনের স্থবিরতার কারণে আইফোন ১৪ বিক্রির প্রায় ৫ শতাংশ হিসাব থেকে বাদ পড়ছে। সিএনএন জানিয়েছে, ব্ল্যাক ফ্রাইডে উপলক্ষ্যে বাজারে আইফোন ১৪-এর চাহিদা থাকলেও, সরবরাহ ছিল অনেক কম। বড়দিন পর্যন্ত এ সরবরাহ ঘাটতির প্রভাব অনুভব করবে অ্যাপল। চীনের কারখানায় অস্থিরতা অ্যাপলের শেষ প্রান্তিকের আয়ে বড় আকারের বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন ড্যান আইভস।

তিনি আরো বলেন, আমাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মজুদের আকার ব্যাপকভাবে কমে আসার কারণে আইফোন ১৪ প্রো-এর ঘাটতিতে আরও অবনতি হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে সাধারণত যত চাহিদা থাকে, অ্যাপল স্টোরগুলোতে আইফোন ১৪ প্রো-এর মজুদ তার চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম বলে ধারণা করছি আমরা। অন্যদিকে, টিএফ ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজের বাজার বিশ্লেষক মিং-চি কুও টুইট করেছেন, চ্যাংচোউ ক্যাম্পাসের কারণে অ্যাপলের বৈশ্বিক উৎপাদন ব্যবস্থার ১০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শ্রমিক বিদ্রোহ শান্ত হয়ে আসার পর বৃহস্পতিবারে সিএনএনকে পাঠানো এক বিবৃতিতে অ্যাপল জানিয়েছে, শ্রমিকদের অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে চ্যাংচোউয়ের নির্মাণ কারখানায় ফক্সকনের সঙ্গে কাজ করছে তাদের প্রতিনিধি দল। তবে, চ্যাংচোউ কারখানায় শ্রমিক বিদ্রোহ শুরু হওয়ার আগেই ভারতে আইফোন ১৪ উৎপাদন শুরু করেছে অ্যাপল। সিএনএন বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে ভারতে আইফোনের সর্বশেষ সংস্করণের উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণা দিয়ে কোম্পানির ব্যবসায়িক কৌশলে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে অ্যাপল।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

২০২৩ সালে ফক্সকনের ভারতীয় কারখানায় আইফোন উৎপাদন ২০২২ সালের তুলনায় কমপক্ষে দেড়শ শতাংশ বাড়বে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি। বর্তমানে ৪ শতাংশ আইফোন ভারত থেকে এলেও, অ্যাপল ভবিষ্যতে এ হার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বলে ধারণা করছেন মিং-চিং কুও। আইফোন নির্মাতার বিকল্প অনুসন্ধানের পেছনে চীনের কঠোর কোভিড নীতিমালা অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছিল প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিকটি।

চ্যাংচোউয়ের লকডাউন আর শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে ফক্সকনও এখন সম্ভবত ভারতীয় কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করবে বলে টুইট করেছেন মিং-চি কুও। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে কোভিড সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই অস্থিরতা বিরাজ করছিল শ্রমিকদের মধ্যে। নভেম্বর মাসের শুরুতেই চীনের স্থানীয় সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ভাইরাল হয়েছিল কারখানা থেকে পালিয়ে আসা শ্রমিকদের হেঁটে বাড়ি ফেরার ভিডিও।

তার পরপরই শ্রমিকদের ফেরত আনতে তৎপরতা বাড়িয়েছিল ফক্সকন। নতুন কর্মী আকৃষ্ট করতে শ্রমিকদের দৈনিক বোনাস চারগুণ বাড়িয়েছিল কোম্পানিটি। চ্যাংচোউয়ের কারখানায় ১ লাখ নতুন কর্মী নিয়োগের খবর ফলাও করে প্রচার করেছিল চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব সংবাদমাধ্যম। চীনের কঠোর কোভিড নীতিমালার কারণে নতুন আইফোনের সরবরাহ অস্থায়ীভাবে প্রভাবিত হবে বলে নভেম্বর মাসের শুরুতেই সতর্কবার্তা দিয়েছিল অ্যাপল। কোভিড সংক্রমণের কারণে ২ লাখ শ্রমিকের কর্মস্থল চ্যাংচোউ শহরের কারখানাটি অত্যন্ত সীমিত পরিসরে কাজ করছে বলে জানিয়েছিল কোম্পানিটি।

কারখানার পরিস্থিতি পাল্টে গেছে মঙ্গলবার রাতে। থাকা-খাওয়ার পরিস্থিতি আর পাওনা মেটানোর শর্ত নিয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন কারখানার শ্রমিকরা, যাদের সিংহভাগই ছিল সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত। কারখানার নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে শ্রমিকদের মুখোমুখি অবস্থান সহিংসতায় রূপ নেয় বুধবার। সিএনএন জানিয়েছে, বুধবার বিকালে ফক্সকন নতুন শ্রমিকদের এক হাজার চারশ ডলার বা প্রায় দুই মাসের বেতনের সমান নগদ অর্থের বিনিময়ে কাজে ইস্তফা দিয়ে একসঙ্গে কারখানা ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়ার পর শান্ত হয়েছে কারখানার পরিস্থিতি।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.