সম্প্রতি কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভের জন্য একটি কারিগরি ত্রুটিকে দায়ী করেছে আইফোন উৎপাদক চীনা চুক্তিভিত্তিক কোম্পানি ফক্সকন। যার জন্য ফক্সকন কর্মীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় চীনে অনেক কারখানাই লকডাউনে চলে গিয়েছে। এক ভিডিওতে দেখা গেছে চীনের ঝেংঝোউ শহরে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইফোন উৎপাদক কারখানাটিতে শত শত শ্রমিক প্রতিশ্রুত পাওনা না পেয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ফক্সকন জানায়, একটি কারিগরি ত্রুটির কারণে এমনটি হয়েছে এবং শ্রমিকরা তাদের প্রতিশ্রুত বেতনেই পাবেন। প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথা বলে ফক্সকন জানিয়েছে, বেতন এবং বোনাসসহ যাবতীয় পাওনা দ্রুততম সময়ে দেওয়ার জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। একইসঙ্গে তারা শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবির প্রতিও সমর্থন প্রকাশ করেন। আবার এরইমধ্যে পাশাপাশি বৃহস্পতিবার আরো একটি ঘোষণা এসেছে ঝেংঝোউ শহর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
পুরো শহরই লকডাউনের আওতায় আনার ফলে শহরটির ৬০ লাখের বেশি নাগরিক কোভিড রিপোর্ট ছাড়া শহরের বাইরে যেতে পারবেন না। মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে চীনে দৈনিক কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চে পৌঁছালেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার বাস্তবতায় চীনকে জিরো কোভিড নীতি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই অর্থনীতির জিডিপি আগের প্রান্তিকের তুলনায় জুনে শেষ হওয়া প্রান্তিকে তিন মাসে ২ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।
তবে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, আইএমএফের নির্দেশনা চীনকে তার নীতি পরিবর্তনে রাজি করাতে পারবে না। দ্যা ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গ্লোবাল চিফ ইকোনমিস্ট সায়মন ব্যাপটিস্ট বিবিসিকে বলেন, যেহেতু চীন আইএমএফের কাছে সাহায্যের জন্য যাওয়ার সম্ভাবনা কম, ফলে তারা এই বিবৃতি উল্টে দেখলো কি না তা আসলে কোনো গুরুত্ব বহন করে না। একজন শ্রমিক জানান, তিনি বিক্ষেভের পর আট হাজার ইউয়ান পেয়েছেন এবং আরো দুই হাজার ইউয়ান পাবেন।
তিনি আরো বলেন যে কারখানায় আর কোনো বিক্ষোভ নেই এবং তিনি ও তার সহকর্মীরা কারখানায় ফিরে যাচ্ছেন। প্রায় দুই লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করা এই কারখানায় অ্যাপলের আইফোন ১৪ প্রো এবং প্রো ম্যাক্স তৈরি হয়। ফক্সকনের এক কর্মীও বিবিসিকে বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। যারা এই আন্দোলন লাইভ স্ট্রিম করছিলেন তারা পুলিশের পিটুনির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন। ওইসব কারখানার শ্রমিকদের প্রাচীর টপকে বাড়িতে চলে যাওয়ার চেষ্টাও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
এমন অবস্থায় বিভিন্ন কোম্পানি এবং কারখানা বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে নতুন শ্রমিকদের কাজে আনার চেষ্টা করেছে। একই কাজ করেছে ফক্সকনও। কিন্তু একজন শ্রমিক বলেন, তাদের সেই চুক্তির পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে তারা বাড়তি মজুরি পাননি। তিনি আরো বলেন, তাদেরকে কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় খাবারও সরবরাহ করা হয়নি।