অস্ট্রিয়াভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিউট অফ অ্যাপ্লাইড সিস্টেমস অ্যানালাইসিস বা আইআইএসএ এর গবেষণা বলছে, বিশ্বের পরিত্যাক্ত খনিগুলোতে মাধ্যাকর্ষণ ব্যাটারি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি সংগ্রহ করা যাবে, যা গোটা বিশ্বের চাহিদার সমান। বর্তমানে সারা বিশ্ব নবায়নযোগ্য সমাধানের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয়ের সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হতে পারে পরিত্যক্ত খনি।
বিজ্ঞানীদের অনুমান বলছে, খনির ভেতর মাধ্যাকর্ষণ ব্যাটারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতি ঘণ্টায় আনুমানিক ৭০ টেরাওয়াট বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চয় করা যেতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী দৈনিক বিদ্যুৎ খরচের প্রায় সমান বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট। বাতাস বা সৌরশক্তির মতো নবায়নযোগ্য উপাদানের মাধ্যমে উৎপাদিত অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চয়ের মাধ্যমে মাধ্যাকর্ষণ ব্যাটারি কাজ করে।
এ সময়ে এটি ভারী ওজন উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেলে ওই ভারী ওজন ছেড়ে দেওয়া হয়। মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে পতনের সঙ্গে সঙ্গে এটি টারবাইনকে ঘুরায় ও বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। বৈশ্বিক শক্তি সংকটের পরপরই গত বছর থেকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে মনোযোগ বড়েছে। টেকসই শক্তি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে অতিরিক্ত শক্তি সঞ্চয়ের উপায়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়।
মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মাধ্যমে এরইমধ্যে একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে অস্ট্রেলিয়ার এক লোহার আকরিক উত্তোলক কোম্পানি। গত বছর একে বিশ্বের সর্বপ্রথম ইনফিনিটি ট্রেন হিসেবে দাবি করে কোম্পানিটি। এই প্রযুক্তির সহায়তায় চার্জ করার প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই ব্যাটারি-বিদ্যুত চালিত ট্রেনে মালামাল পরিবহন করা যায় বলে উঠে এসেছে দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে।
অর্থনীতিকে কার্বন মুক্ত করতে উদ্ভাবনী সমাধানের ওপর ভিত্তি করে বিদ্যমান সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের শক্তি ব্যবস্থার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে বলে গবেষণার সহ-লেখক বেহনাম জাকেরি জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, পরিত্যক্ত খনিগুলোকে শক্তি সঞ্চয়ের জায়গা হিসেবে তৈরি করা আমাদের আশপাশের শক্তি রূপান্তরবিষয়ক বিভিন্ন সমাধানের কেবল একটি উদাহরণ।
আর কেবল এগুলো স্থাপনের উপায় পরিবর্তন করতে হবে। আন্ডারগ্রাউন্ড গ্র্যাভিটি এনার্জি স্টোরেজ: এ সলিউশন ফর লং-টার্ম এনার্জি স্টোরেজ শিরোনামের এই গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক জার্নাল ‘এনার্জিস’ এ। এছাড়াও গবেষণাপত্রের লেখকরা বলেন, পুরোনো খনিকে মাধ্যাকর্ষণ ব্যাটারি হাউজ হিসেবে পুনর্ব্যবহার করলে তা স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্যেও লাভজনক হবে।
কোনো খনি বন্ধ হয়ে গেলে হাজার হাজার কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়েন। এটি সেইসব সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দেয়, যাদের অর্থনীতি খনির ওপর নির্ভরশীল। বলেন আইআইএসএ এর এনার্জি, ক্লাইমেন্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম এর গবেষক জুলিয়ান হান্ট।