Reading Time: 4 minutes

মহাকাশে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সৌরশক্তি আহরণ করে মাইক্রোওয়েভ বিমের মাধ্যমে তা পৃথিবীতে সরবরাহের পরিকল্পনা করেছেন একজন উদ্যোক্তা। এমনই এক সম্ভাবনা নিয়ে যিনি আশাবাদী তিনি শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও গবেষকদের সংঘবদ্ধ উদ্যোগ স্পেস এনার্জি ইনিশিয়েটিভ বা এসইআই এর কো-চেয়ারম্যান মার্টিন সোলটাও। তবে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীতে বিদ্যুৎ প্রেরণের মত পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হতে দীর্ঘ কয়েক বছর সময় লাগতে পারে বলেছেন মার্টিন সোলটাও।

এ প্রযুক্তি নিয়ে তার ব্যক্তিগতভাবে অনেকখানিই সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্টিন। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, তাত্ত্বিক বিবেচনায় ২০৫০ সালে পুরো বিশ্বের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পারে এটি। তিনি আরো বলেন, কক্ষপথে সৌরশক্তি নির্ভর স্যাটেলাইটের জন্য যথেষ্ট জায়গা আছে, আর সূর্যের শক্তি সরবরাহের সক্ষমতাও বিশাল। ২০৫০ সাল নাগাদ পুরো মানবসভ্যতার যে পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি প্রয়োজন হবে , বিষুবরেখা বরাবর মহাকাশের একটি সরু জায়গাই এক বছরে তার একশ গুণ সৌরশক্তি পেতে পারে বলে তার ধারনা।

ক্যাসিওপিয়া নামের একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে এসইআই। এ প্রকল্পের অধীনে মহাকাশে ‘সোলার ফার্ম’ স্যাটেলাইটের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চায় ব্রিটিশ এ সংগঠনটি। মহাকাশ থেকেই সৌরশক্তি আহরণ করবে স্যাটেলাইটগুলো এবং সরাসরি পৃথিবীতে সরবরাহ করা হবে সেই সৌরশক্তি। প্রযুক্তিবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফ্রেজার-ন্যাশ এ প্রযুক্তির কার্যক্ষমতা যাচাই করে সবুজ সংকেত দেওয়ার পর এ বছরের শুরুতেই মহাকাশের সৌরশক্তি প্রকল্পের জন্য ৩০ লাখ পাউন্ড অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।

এসইআই অনুদানের একটা বড় অংশ পাওয়ার আশা করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এসইআইয়ের স্যাটেলাইটের জন্য হাজারো ছোট ছোট মডিউল বানানো হবে পৃথিবীতে, কিন্তু মডিউলগুলো মহাকাশে একে অন্যের সুঙ্গে জুড়ে দেওয়ার কাজটি করবে স্বয়ংক্রিয় রোবট। স্যাটেলাইট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজগুলোও করবে সেই রোবটগুলো। গ্রিডে প্রায় দুই গিগাওয়াট বিদ্যুৎ শক্তি যোগ করা হতে পারে এক একটি স্যাটেলাইট, যা একটি পারমাণবিক পাওয়ার স্টেশনের সমতুল্য।

স্যাটেলাইটের আহরণ করা সৌরশক্তিকে উচ্চ তরঙ্গের রেডিও ওয়েভ হিসেবে পৃথিবীর ‘রেকটিফাইং অ্যান্টেনাতে’ পাঠানো হবে যা রেডিও ওয়েভকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করবে। যুক্তরাষ্ট্রে স্পেস সোলার পাওয়ার ইনক্রিমেন্টাল ডেমোনস্ট্রেশন অ্যান্ড রিসার্চ বা এসএসপিআইডিআর এর প্রকল্পের অধীনে মহাকাশ থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সৌরশক্তি আহরণের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি নির্মাণের কাজ করছে মার্কিন বিমান বাহিনীর নিজস্ব গবেষণা সংস্থা ‘এয়ার ফোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরি’।

গবেষণার বিষয়বস্তুর মধ্যে আছে, সোলার সেলের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা, সৌরশক্তিকে রেডিও তরঙ্গে রূপান্তর, মহাকাশযানের যন্ত্রাংশের ওপর তাপমাত্রা পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব হ্রাসের চেষ্টা এবং উৎক্ষেপণযোগ্য নকশা নির্মাণ। সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগে বায়ুমণ্ডলেই শক্তির একটা বড় অংশ হারায়। কিন্তু মহাকাশে এমন কোনো বাধার মুখে পড়তে হয় না একে। ফলে ভূপৃষ্ঠে থাকা সোলার প্যানেলের চেয়ে বেশি সৌরশক্তি আহরণ করতে পারবে মহাকাশের সোলার প্যানেল।

যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রেও একই ধরনের প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। গত বছরে সৌরশক্তিকে রেডিও তরঙ্গে রূপান্তর করতে ব্যবহৃত কথিত ‘স্যান্ডউইচ টাইল’ প্রযুক্তির জন্য নতুন যন্ত্রাংশের সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে গবেষক দল। মাইক্রোওয়েভ বিম শুনতে উদ্বেগজনক মনে হলেও পৃথিবীতে এটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা বলছেন, মানুষ ও বন্যপ্রাণী উভয়ের জন্যই নিরাপদ এটি। মাইক্রোওয়েভ বিম বলতে গেলে ওয়াই-ফাই সিগনালের মতো এবং এর তীব্রতাও কম।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

মার্টিন বিবিসিকে জানান, কেউ যদি মরুভূমির মাঝখানে বিষুবরেখা বরাবর থাকেন তবে প্রতি বর্গ মিটারে এক হাজার ওয়াট বিদ্যুৎ শক্তি আহরণ করতে পারবেন। কিন্তু এটা তার এক চতুর্থাংশ, প্রতি বর্গ মিটারে প্রায় ২৪০ ওয়াট। অর্থাৎ, সে বিবেচনায় এই পরিকল্পনা নিরাপদ। দুপুর বেলা সূর্য মাঝ আকাশে যতটা তীব্র থাকে তার এক চতুর্থাংশ এটি। তবে বিবিসি জানিয়েছে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতাগুলোর সমাধান হলেও সামনের দিনগুলোতে নতুন জটিলতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কাও আছে।

এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অফ পোর্টসমাউথের তাপগতিবিদ্যার প্রভাষক ড. জোভানা রাডুলোভিচ বলেন, যদিও ধরেই নেয়া হচ্ছে যে প্রযুক্তিটি কার্যকর, কিন্তু তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এত জটিল একটি প্রকল্পে জুড়ে দেওয়ার জন্য এটি এখনও প্রস্তুত নয়। মহাকাশে ব্যাপক সংখ্যক সোলার প্যানেল পাঠানো যে ব্যয়বহুল হবে এবং এর জন্য যে কয়েকশবার রকেট উৎক্ষেপণ করতে হবে – তার কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ নিয়ে শঙ্কিত তিনি। বিবিসি জানিয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের অনুদানের আকার ছোট হওয়ায় এখন ব্যক্তিমালিকানাধীন পর্যায়ে বিনিয়োগের খোঁজ করছে এসইআই।

তবে এসইআই যে সময়সীমার কথা বলছে তা বেশি আশাবাদী বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ড. জোভানা রাডুলোভিচ। এ খাতে বড় আকারের বিনিয়োগ এবং প্রচেষ্টা থাকলে ছোট আকারের একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি চালু করতে না পারার কোনো কারণ নেই বলে তিনি মনে করছেন।  কিন্তু বড় আকারে নির্মাণ করতে গেলে এখানে কয়েক কিলোমিটার লম্বা সোলার প্যানেলের কথা বলা হয়েছে, সেটি বানাতে দীর্ঘ সময় লাগবে। তবে, পরিবেশের ওপর ক্যাসিওপিয়া প্রকল্পের সম্ভাব্য প্রভাব বিচার বিশ্লেষণ করে ইতিবাচক খবর দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ স্ট্র্যাথক্লাইডের গবেষকরা।

রকেটের উৎক্ষেপণকে বিবেচনায় নিলেও, ভূপৃষ্ঠের সৌরশক্তি প্রকল্প থেকে যে পরিমান কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন হয়, তার অর্ধেক হবে ক্যাসিওপিয়া প্রকল্পে। এ প্রকল্পের অর্থনৈতিক দিকের ওপরেই বেশি জোর দিচ্ছেন মার্টিন সোলটাও। উৎক্ষেপণ খরচ ৯০ শতাংশ কমে এসেছে এবং আরও কমছে। অর্থনীতির জন্য গেম-চেঞ্জিং পর্যায়ে চলে এসেছে এটি। আর দ্বিতীয়ত, সৌরশক্তি নির্ভর স্যাটেলাইটের নকশায় বড় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। এর ফলে স্যাটেলাইটগুলো আগের চেয়ে বেশি মডিউলার।

এদের সহনশীলতা যেমন বেড়েছে, তেমনি উৎপাদন খরচও কমেছে। তৃতীয়ত, রোবটিক্স এবং স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তিতেও বড় অগ্রগতি এসেছে বিবিসিকে বলেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.