মার্কিন বাণিজ্য সাময়িকী ফোর্বস বেশ কিছু পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে যা থেকে অনুমান করা সম্ভব প্রযুক্তি দুনিয়ায় নারীরা কতোটা এগোতে পেরেছেন বা পারেননি, সমতার দিকে বিশ্ব কতোটা এগোতে পেরেছে বা পারেনি। মার্চের আট তারিখ বিশ্বজুড়ে নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অর্জন উদযাপনে নিবেদিত দিন। এই আলাপে ন্যায্যতা যোগ করে নারীর সমতা ত্বরান্বিত করার উদ্যোগের প্রতীক এই দিনটি। কিন্তু এই যাত্রায় কেমন আছেন নারীরা?
কেবল নারী সদস্যদের সংগঠন বা দলের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের হার নেমে এসেছে শতকরা এক ভাগে। ২০১৮ সালে এটি ছিল তিন শতাংশ। সাধারণভাবে পরিবারে সময় দেওয়াকে কারণ হিসাবে ধরে নেওয়া হলেও গবেষণায় দেখা গেছে, এর পেছনে কারণগুলোর মধ্যে ২৩ ভাগ দায় কর্মক্ষেত্রে কর্মী ব্যবস্থাপনার, ২০ ভাগ সুযোগের অভাব এবং শতকরা ২২ ভাগ ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের সঙ্গে পেশাজীবনের সংঘাত। এখানে অনেক কিছুই করার আছে বলে উঠে এসেছে ফোর্বসের প্রতিবেদনে। কারণ, গবেষণা বলছে-
যখন কোনো কর্মী লিঙ্গপরিচয় নির্বিশেষে মনে করেন তার কর্মস্থল বৈচিত্র্য বা ডাইভার্সিটি সমর্থন করে এবং তারা অন্তর্ভূক্তিমূলক পরিবেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা পান, তখন সে প্রতিষ্ঠানে উদ্ভাবনী আয় শতকরা ৮৩ ভাগ পর্যন্ত বাড়তে পারে। কোম্পানি যখন অন্তর্ভূক্তিমূলক বা ইনক্লুসিভ হয়, তখন আর্থিক লক্ষ্য পূরণের সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয় বলে দেখা গেছে গবেষণায়। জেন্ডার বৈচিত্র্য বা ডাইভারসিটি সমর্থন করে এমন কোম্পানির বেলায় প্রতিযোগীদের তুলনায় ভালো করার সম্ভাবনা বেড়ে যায় শতকরা ১৫ ভাগ।
আর জাতিগত বৈচিত্র্য সমর্থনে প্রতিযোগীদের তুলনায় ভালো করার সম্ভাবনা বাড়ে শতকরা ৩৫ ভাগ। সমতাযাত্রায় বিগত বছরগুলো সম্পর্কে ধারণা মিলবে সাম্প্রতিক কিছু পরিসংখ্যান থেকে। বিশ্বের প্রথমসারির কোম্পানিগুলোর তালিকা, ‘ফরচুন ৫০০’ কোম্পানিগুলোয় এই প্রথমবারের মতো সিইও পদে শতকরা ১০ ভাগ নারী এসেছেন। এর মধ্যে শতকরা তিন ভাগ রয়েছেন অশ্বেতাঙ্গ নারী। প্রযুক্তিকেন্দ্রিক কাজে শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ নারী কাজ করলেও এর মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ নারী কেবল তিন ভাগ।
ফলে, নারী দিবসকে কেবল অনুষ্ঠানিকতায় না রেখে মূল বিষয়গুলোয় মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। বিশেষ এই দিনটিতে কেবল নারী সহকর্মীদের ফুল আর গোলাপী রঙের কাগজে মুড়ে উপহার দেওয়ার রেওয়াজে আটকে থাকলে খুব সামান্যই ফল পাওয়া যাবে। গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিস্টার হিসাব বলছে, বর্তমানে প্রযুক্তিবিষয়ক চাকরিতে শতকরা ২৬.৭ ভাগ নারী রয়েছেন। আর ১০ হাজারেরও বেশি কর্মী আছে এমন প্রযুক্তি কোম্পানিতে নারীদের অংশগ্রহন ২৬.২ শতাংশ।
এই নারীদের অর্ধেকই প্রযুক্তি কর্মক্ষেত্র ছেড়ে দেন তাদের ক্যারিয়ারের মধ্যপর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই। এই ছেড়ে দেওয়ার হার পুরুষদের দ্বিগুণ। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন অর্থনীতি থেকে এক লাখ ৪০ হাজার কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন নারী চাকরি হারিয়েছেন, সংখ্যায় বেড়েছেন শ্বেতাঙ্গ নারীরা।