Reading Time: 2 minutes

অ্যান্ড্রু টেট নামক এক নারী বিদ্বেষী টিকটকার হিসেবে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন। তিনি নারী বিষয়ে চরমপন্থী মনোভাবের কারণে বিভিন্ন সময়ে গৃহ নিপীড়ণবিরাধী অধিকারকর্মীদের সমালোচনার মুখেও পড়েছেন। ব্রিটিশ দ্যা ডেইলি অবজার্ভারের এক সাম্প্রতিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে টিকটকের অ্যালগরিদম নারীদের বিষয়ে পুরনো ধ্যানধারণার এবং চরমপন্থী মনোভাব প্রকাশ করে এমন ভিডিওই তরুণদের ফিডে বেশি দেখায়।

ভিডিও সাজেশনে সেই অ্যান্ড্রু টেটের ভিডিওগুলি টিকটকের অ্যালগরিদম প্রচার করছে বলে প্রতিবেদনের দাবি। ক্ষুদে ভিডিও প্রচার প্লাটফর্ম টিকটক বর্তমানে নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে নারী বিদ্বেষী ভিডিও নিষিদ্ধ করার দাবি করলেও তরুণদের মধ্যে নারী বিদ্বেষী ভিডিওর প্রচারই বেশি করছে। সংবাদকর্মীগণ নারী বিদ্বেষী কনটেন্ট প্রসঙ্গে টিকটকের প্রচারিত অবস্থান আর বাস্তবতার দূরত্ব যাচাই করতে এক পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। টিকটকে অ্যাকাউন্ট খোলার নূন্যতম বয়সসীমা ১৩ বছর।

অ্যান্ড্রু টেট একজন অবসর প্রাপ্ত কিকবক্সার। অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নিজের উপস্থিতি গড়ে তুলেছেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে তিনি নারী বিদ্বেষী বক্তব্য প্রচারের জন্য সমালোচিত হয়েছেন। টিকটকে টেটের নারী বিদ্বেষী ভিডিওগুলো দেখা হয়েছে এক হাজার ১৬০ কোটি বার। আরেক সংবাদ মাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ান বলছে, প্ল্যাটফর্মটিতে টেটের ভিডিও ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্যের প্রচার নিয়ে এরইমধ্যে শঙ্কিত বিশ্লেষকরা।

গার্ডিয়ান আরো জানিয়েছে কোনো ভিডিওতে লাইক দেওয়া না থাকলেও এবং নারী বিদ্বেষী ভাবধারা প্রচার করে এমন কনটেন্ট সক্রিয়ভাবে না খুঁজলেও টিকটকের সাজেশনে একের পর এক এক অ্যান্ড্রু টেটের ভিডিও আসতে শুরু করে। এদিকে নারী বিদ্বেষী কনটেন্টের প্রচার প্রসঙ্গে টিকটক বলছে, নারী বিদ্বেষ এবং অন্যান্য বিদ্বেষমূলক ভাবধারা ও আচরণ টিকটক অনুমতি দেয় না। টিকটকে নারী বিদ্বেষী কনটেন্ট প্রসঙ্গে সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেট এর গবেষণা প্রধান ক্যালাম হুড বলেন, সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হচ্ছে কনটেন্টগুলো খুবই নজর কাড়ার মতো।

আর বিশেষ করে টিকটকের অ্যালগরিদম এতোটাই আক্রমণাত্মক যে কয়েক মুহুর্তের ব্যবধানে প্ল্যাটফর্মটি অন্যসব ব্যবহারকারীদের একই ধরনের ভিডিও বারবার দেখাতে থাকবে।

অ্যালগরিদম তরুণ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের কোন কোন ভিডিও দেখাতে চায় তা জানতে ১৮ বছর বয়সী এক কিশোরের ছদ্মবেশে অনুসন্ধানকারীরা নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। তাতে ভুয়া নাম ও জন্মতারিখ ব্যবহার করেন তারা। নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার সবচেয়ে লাভজনক দিক হলো, আগের হিস্ট্রি থেকে প্রভাবিত হবে না টিকটকের অ্যালগরিদম।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

১৮ বছরের ওই কিশোরের ফিডে প্রথম পর্যায়ে কমেডি ভিডিও, পোষা প্রাণী আর পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ভিডিওর উপস্থিতিই ছিল বেশি। কিন্তু পুরুষ দর্শকদের জন্য বানানো কয়েকটি ক্ষুদে ভিডিও দেখার পর পরই টিকটকের অ্যালগরিদমে আশ্চর্যজনকভাবে পরিবর্তন আসতে থাকে। আলফা ব্লোকস পডকাস্টের একটি ভিডিও এবং পুরুষরা নিজেদের অনুভূতি নিয়ে কথা বলেন না এমনই কিছু বিষয়ে এক টিকটকারের ভিডিও দেখার পরপরই কিশোর ছদ্মবেশী সংবাদকর্মীদের ফিডে পুরুষ দর্শকদের জন্য তৈরি ভিডিওর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

সাজেশনে আসা ভিডিওর সবগুলো টেটের নিজের টিকটক অ্যাকাউন্টের না হলেও একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে তার ছবি ও নাম ব্যবহার করে তৈরি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে বলে গার্ডিয়ান জানিয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য কঠিন বাস্তবতা নামক শিরোনামের এক ভিডিওতে পুরুষদের সার্বিক দুর্দশার জন্য নারীবাদকে দোষ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ভিডিওগুলোতে বেশিরভাগ পুরুষের কাছে কোনো অর্থ নেই, কোনো ক্ষমতা নেই এবং স্ত্রীর প্রতি কোনো কামনাও নেই, আর এ কারণেই তাদের জীবনের এত বাজে অবস্থা- এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে।

এমন দুটি ভিডিও দেখার পর ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্টের ফিডে নারী বিদ্বেষী এরকম আরো কনটেন্টের সংখ্যা বাড়তে থাকে বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান। সাজেশনের আরেকটি ভিডিওতে মহামারীর কারণে যারা মাস্ক পড়ছেন তাদের কাপুরষ ও বেকুব বলেও বিবেচনা করেছেন অ্যান্ড্রু। এর এক সপ্তাহ পরে আবারও ছদ্মবেশি অ্যাকাউন্টটি চালু করে টিকটক অ্যালগরিদমের সাজেশনে আসা ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেন সংবাদকর্মীরা। সাজেশনের ২০টি ভিডিওর মধ্যে আটটি ছিল অ্যান্ড্রু টেটের।

এর মধ্যে একটিতে নিজের প্রেমিকাকে খুব ভালো ভাবে প্রশিক্ষিত বা very well trained বলে অ্যান্ড্রু ভিডিও বানিয়েছেন। অ্যালগরিদম সাজেশনে কানাডার সাইকোলজিস্ট ও অধ্যাপক জর্ডান পিটারসনের ভিডিও দেখাচ্ছিল বলে জানিয়েছে দৈনিক গার্ডিয়ান। বিভিন্ন সময়ে ডানপন্থী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সমালোচিত হয়েছেন তিনিও।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.