প্যারিস ক্যাম্পবেল নামক টিকটক কর্মীকে তার টিকটক ভিডিওতে আইফোন নিরাপত্তা নিয়ে টিপস দেওয়ায় তাকে প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল তাকে অপসারণের হুমকি দিয়েছে। অ্যাপল বলেছে যে প্যারিস ক্যাম্পবেল টিকটকে অ্যাপল কর্মী হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে এবং অ্যাপল পণ্য সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট তৈরি করে কোম্পানির নীতিমালা ভেঙেছেন। সামাজিক মাধ্যমে কর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নথিপত্রে বলা আছে যে অ্যাপল ও তাদের কর্মী যারা আছেন তারা সকলেই নিজের মতোই থাকুক।
কিন্তু পোস্ট, টুইট এবং অন্যান্য অনলাইন যোগাযোগে প্যারিসকে শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত বলে জানায় অ্যাপল। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ জানিয়েছে, অ্যাপলের সামাজিক মাধ্যম নীতিমালায় ক্রেতা, সহকর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের গোপন তথ্য শেয়ার করার বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া আছে কর্মীদের। তবে, সার্বিক প্রযুক্তি নিয়ে কনটেন্ট পোস্ট করার ওপর এতে কোনো বিধিনিষেধ দেওয়া নেই। ভার্জ আরো জানায় যে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা প্যারিস ক্যাম্পবেল অ্যাপলে কাজ করছেন প্রায় ছয় বছর ধরে।
পেশাগত জীবনে হার্ডওয়্যার প্রকৌশলী হলেও ব্যক্তিগত জীবনে প্যারিস একজন স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান। সামাজিক মাধ্যমে তার ভক্তকুলও নেহাত কম নয়, প্রায় চার লাখ ৪০ হাজার মানুষ সামাজিক মাধ্যমে তাকে ফলো করেন। তবে, প্যারিসের জনপ্রিয়তা চাকরি হারানোর শঙ্কা দূর করছে না বলে জানিয়েছে ভার্জ। গেল বছরেই দু’জন জনপ্রিয় অধিকারকর্মীকে অপসারণ করেছিল অ্যাপল। তাদের বিরুদ্ধে কোম্পানির গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছিল।
কিন্তু প্যারিস বলছেন, তার ভিডিওতে এমন কোনো তথ্য ছিল না যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। ভার্জকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্যারিস বলেছিলেন, কোম্পানি হিসেবে মানুষকে ভিন্ন পথে চিন্তা করতে, উদ্ভাবনী হতে এবং সৃজনশীল সমাধানের খোঁজ করতে বলে যেভাবে নিজেদের উপস্থাপন করেন কর্মীরা, অ্যাপলের প্রতিক্রিয়া তার বিপরীতমুখী। তিনি অ্যাপলে কাজ করেন বলেই তার অ্যাপলের তথ্য সম্পর্কে জানা আছে, বিষয়টাতো এমন নয়। তার এই জ্ঞান আছে কারিগরি শিক্ষা এবং কাজের ইতিহাসের কারণে।
সে কারণেই অ্যাপল তাকে নিয়োগ দিয়েছিল। যদিও এ বিষয়ে জানতে অ্যাপলের সঙ্গে যোগাযোগ করেও ভার্জ তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর পায়নি। গত সপ্তাহে সম্প্রতি আইফোন হারানো আরেক টিকটকারের ভিডিওতে সাড়া দিয়ে তিনি নিজে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। আইফোন খোয়ানো ওই টিকটকার মেসেজে হুমকি পাচ্ছিলেন যে আইফোনটি তার অ্যাপল আইডি থেকে বিচ্ছিন্ন না করলে তার সকল ব্যক্তিগত তথ্য কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হবে।
ভার্জ জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫০ লাখের বেশি ভিউ পেয়ে ভাইরাল হয়ে যায় ভিডিওটি। কিন্তু শুক্রবারেই নিজের ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে কল পান প্যারিস। ভিডিওটি মুছে না দিলে শাস্তির মুখে পড়তে পারেন, এমনকি চাকরিও খোয়াতে পারেন বলে প্যারিসকে জানান ওই ব্যবস্থাপক। ওই টিকটকারকে দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই দিতে নিজের টিকটক ভিডিওতে প্যারিস বলেন, ঠিক কীভাবে এই তথ্যগুলো তার জানা সেটা সে বলতে পারবেন না, কিন্তু সে এটি বলতে পারেন যে গত ছয় বছর ধরে তিনি একটি বিশেষ কোম্পানির হার্ডওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন।
যেটি কি না একটি ফল নিয়ে কথা বলতে খুব পছন্দ করে। পরের দিনগুলোতে প্যারিস আরেকটি ভিডিওটি পোস্ট করেছেন। দ্বিতীয় ভিডিওতে সরাসরি অ্যাপল কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, তাকে ছাঁটাই করা হচ্ছে কি না জানার জন্য অপেক্ষা করছেন বলে দ্বিতীয় ভিডিওতে জানিয়েছেন ওই অ্যাপল কর্মী। তিনি বলেন এই ভিডিওটার আগে কখনোই তিনি নিজেকে অ্যাপল কর্মী বলে পরিচয় দেননি। মজার বিষয় হচ্ছে, সামাজিক মাধ্যম নীতিমালা পড়ে দেখেছেন তিনি, কিন্তু কোথাও বলা নেই যে জনসমক্ষে অ্যাপল কর্মী হিসেবে নিজের পরিচয় দেওয়া যাবে না।
কেবল এমন ভাবে নিজের পরিচয় দিতে মানা করা হয়েছে যাতে কোম্পানির মানহানী হয়।