বাংলাদেশ হতে বিদেশে ডুয়াল কারেন্সির মাধ্যমে কেনাকাটা
Reading Time: 5 minutes

বাংলাদেশ হতে অনেক ধরনের সার্ভিস কেনা গেলেও বাংলাদেশে পেমেন্ট জটিলতার কারনে অনেকে ফরেইন প্রাইভেসি প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসগুলো কিনতে পারেন না। মূলত বাংলাদেশী পেমেন্ট মাধ্যমগুলো দিয়ে শুধুমাত্র বাংলাদেশে থাকা প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস কেনা যায়। যার ফলে অনেকে অনেক সুবিধা হতে বঞ্চিত হয়। সাধারনত বেশিরভাগ প্রাইভেসি প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসগুলি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কেন্দ্রিক হয় এবং বাংলাদেশে তাদের কোন শাখা বা উপশাখা থাকে না। আমরা চাইলেই তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসগুলি কিনতে পারিনা। একই ব্যাপার বিভিন্ন ওপেন সোর্স প্রোজেক্টে দান করার ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

বাংলাদেশিরা চাইলেও কোন ওপেন সোর্স প্রোজেক্টে দান করতে পারেন না। এই আর্টিকেলে আমি আপনাদেরকে জানাবো কিছু উপায় যার মাধ্যমে আপনি ফরেইন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বাংলাদেশ হতে সহজে কিনতে পারবেন।

ডুয়াল কারেন্সি কার্ড

ডুয়াল কারেন্সি কার্ড কিভাবে করবেন?

ডুয়াল কারেন্সি ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সহজেই বিদেশ হতে যেকোন কারেন্সিতে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বাংলাদেশ হতে কিনতে পারবেন। তবে বাংলাদেশ হতে এটি সংগ্রহ করা অনেকের জন্য একটু কঠিন। কারন এতে পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়। তবে আপনার যদি ইতিমধ্যে পাসপোর্ট থেকে থাকে, তাহলে সহজেই ডুয়াল কারেন্সি কার্ড পেতে পারেন। কিন্তু আমরা শুরু থেকে সবকিছু ধাপে ধাপে লিখছি যাতে সবারই সুবিধা হয়।

পাসপোর্ট করুন

বর্তমানে বাংলাদেশের সবগুলি জেলায় ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। ই-পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নাম, জন্ম তারিখ, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, পেশা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার, পূর্ববর্তী পাসপোর্টের তথ্য (যদি থাকে), পিতা-মাতার নাম ও পেশা, যোগাযোগ নাম্বার ও জরুরি ক্ষেত্রে যোগাযোগ নাম্বার দিতে হবে। পেমেন্ট সেকশনে আবেদন ফি জমা সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করতে হবে। অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্রটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট বের করতে হবে। অতঃপর এর সাথে সংযুক্ত করতে হবে এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং ব্যাংকের জমা রশিদ।

১৮ বছরের নিচের আবেদনকারীদের জন্য জন্ম সনদের সাথে পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্র আবেদনে দেয়া তথ্য যাচাইয়ের জন্য কিছু কাগজপত্র সংযোজনের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন- ঠিকানা, জন্ম সনদ, পুলিশ রিপোর্ট (পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে), এনওসি সনদ, অফিস আইডি কার্ড (চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে), শেষ পরীক্ষার সনদ (শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে)। আবেদনের সময় প্রতিটি তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী দেয়া আবশ্যক, অন্যথায় ই-পাসপোর্ট পাওয়া যাবে না। ই-পাসপোর্ট-এর তিন ধরনের ডেলিভারি আছে যেখানে আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর থেকে নির্ধারিত কর্মদিবস পর ই-পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যাবে।

  • রেগুলার: ২১ কর্মদিবস
  • এক্সপ্রেস: ১০ কর্মদিবসে
  • সুপার এক্সপ্রেস: দুই কর্মদিবস

www.epassport.gov.bd এই ঠিকানায় ই-পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম এবং নির্দেশিকা পাবেন।

একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলুন

বাংলাদশে প্রায় সকল বেসরকারী ব্যাংকে ভিসা বা মাস্টারকার্ড পাওয়া যায়। এর মধ্যে আপনার ইচ্ছে অনুযায়ী যেকোন একটি বেছে নিয়ে তাতে অ্যাকাউন্ট খুলে ডুয়াল কারেন্সি কার্ডের আবেদন করতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে আমি ইস্টার্ন ব্যাংক এর মাধ্যমে কার্ড গ্রহনের উপায় লিখছি, তবে এই পদ্ধতিটি যেকোন ব্যাংক এর ক্ষেত্রে একই (শুধুমাত্র কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে কিছু আলাদা ধাপ থাকতে পারে)। 

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে হলে আপনার প্রয়োজন হবে :

  • ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • আপনার আইডি কার্ড অথবা পাসপোর্ট
  • একজন নমিনি
  • ১ কপি নমিনির ছবি
  • নমিনির আইডি কার্ড

তাছাড়া আপনার আরো লাগতে পারে:

  • আপনার চাকরির সার্টিফিকেট, বা ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স
  • আপনার বাসার ইউটিলিটি বিল এর একটি কপি (যেমন বিদ্যুৎ বিল)

ব্যাংক চাইলে আপনার কাছে অন্যান্য কাগজ পত্রাদিও চাইতে পারে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত কাগজেই হয়ে যায়। IFIC এর সহজ একাউন্ট খোলার জন্যে কোন চাকরির সনদ বা এরকম কাগজ জমা দিতে হয় না। একাউন্ট খুলে গেলে আপনাকে টাকা ডিপোজিট করতে বলবে। অনেক ব্যাংক মাত্র ৫০০ টাকায় একাউন্ট খুলতে দেয়, আবার অনেক ব্যাংক ৫০০০ থেকে ৫০০০০ টাকা মিনিমাম ডিপোজিট হিসেবে নেয়। তবে আপনি ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলে সাধারন একাউন্ট খুলবেন যদি আপনি বেশি ডিপোজিট এমাউন্ট না চান। আবার, IFIC সহজ একাউন্টে মাত্র ১০ টাকা জমা রেখে একাউন্ট খোলা যায়। 

বিজ্ঞাপন (কেন?)

একাউন্ট হয়ে গেলে কার্ড এর আবেদন করুন

ভিসা ডুয়াল কারেন্সি কার্ড দিয়ে কেনাকাটা

একাউন্ট হয়ে যাবার পর অনেক ব্যাংক কার্ড বাধ্যতামূলকভাবেই দেয়। ডাচ বাংলা ব্যাংক আপনাকে প্রথমে নেক্সাস এটিএম কার্ড দিবে যা ভিসা বা মাস্টারকার্ড নয় এবং তাতে ডুয়াল কারেন্সি সমর্থন করে না। ডাচ বাংলা ব্যাংকের ক্ষেত্রে আপনাকে ভিসা বা মাস্টারকার্ডের জন্যে আবেদন করতে হবে। তাছাড়া বেশিরভাগ ব্যাংকই শুরুতেই ভিসা বা মাস্টারকার্ড দিবে। এখন কোন কার্ড আপনার জন্যে উত্তম? সেটি আপনার ওপর নির্ভর করে। নিচে কিছু তথ্য দিয়ে দিচ্ছি। 

ভিসা কার্ড – সবচেয়ে জনপ্রিয় কার্ড নেটওয়ার্ক যা বাংলাদেশে বেশ প্রচলিত। এর চার্জ অন্যান্য সকল কার্ডের চাইতে কম এবং নেটওয়ার্ক ব্যপ্তি সবচাইতে বেশি। বিকাশ এ শুধুমাত্র ভিসা কার্ড এর মাধ্যমে ফান্ড স্থানান্তর সমর্থন করে। 

মাস্টারকার্ড – ভিসার পর মাস্টারকার্ড সবচাইতে বেশি জনপ্রিয় বাংলাদেশে। মাস্টারকার্ড ভিসার মত অনেক এটিএম এবং পিওএস এ সমর্থিত। 

অ্যামেক্স – অ্যামেক্স কার্ড শুধুমাত্র সিটিব্যাংক হতে নেয়া যায় এবং এটি একটি ব্যয়বহুল কার্ড। বাংলাদেশে কম সংখ্যক এটিএম রয়েছে যাতে অ্যামেক্স সমর্থন করে এবং অনেক পিওএস এটি সমর্থন নাও করতে পারে। তবে এর জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে এবং বিগত বছরগুলিতে এটি গ্রহন করতে শুরু করেছে। 

তাছাড়াও অন্যান্য কম জনপ্রিয় কার্ডগুলি রয়েছে যার সমর্থন বাংলাদেশে খুব কম। যেমন JCB, UnionPay, Diners Club। এগুলি বেশিরভাগ মানুষই নিতে চান না, যদি না তাদের জাপান, চীন সহ বিশ্বভিত্তিক ভ্রমনের উদ্দেশ্য থাকে। আপনি কার্ড আবেদন করার আগে অবশ্যই জেনে নিবেন আপনার কার্ড ডুয়াল কারেন্সি সমর্থন করে কিনা!

আপনার কার্ডে ডলার এনডোর্স করুন

ডলার এনডোর্স করুন ডুয়াল কারেন্সি কার্ড এর জন্যে

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আপনার পাসপোর্টে উল্লেখ্য করা ব্যতিত বিদেশি মুদ্রা ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তাই আপনার ডুয়াল কারেন্সি কার্ডটিতে বিদেশ হতে পন্য ক্রয়ে কাজে লাগাতে অবশ্যই পাসপোর্টে ডলার এনডোর্স করতে হবে। এখন, ডলার এর অনুমোদন বা এন্ডোর্সমেন্ট এর জন্যে আপনাকে সত্যিকারের ডলার কিনতে হবে না, বা আলাদা করে মুদ্রা কনভার্ট করতে হবে না। আপনি চাইলে এক ক্যালেন্ডার বছরে ১২ হাজার ডলার আপনার পাসপোর্ট এ অনুমোদন করতে পারবেন যেটি সারাবছর খরচ করতে পারবেন। বাংলাদেশে বেশিরভাগ ডেবিট কার্ড ডাইনামিক হয়, যার ফলে আপনি ডলার কারেন্সিতে কিছু কিনলে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার বাংলাদেশি মুদ্রা হতে কনভার্ট হয়ে খরচ হবে। অর্থাৎ আপনি যদি ১ ডলারের কোন পন্য কেনেন, আপনার একাউন্ট হতে ১ ডলার সমপরিমান বাংলাদেশি মুদ্রা কাটবে। এই কনভার্সন রেট ব্যাংক নিয়ন্ত্রন করে ও একেক সময় মুদ্রার মানের ওপর নির্ভর করে বাড়ে ও কমে। এক বছরে আপনার সকল কার্ড মিলিয়ে ১২ হাজার ডলার এনডোর্স করতে পারবেন যার মেয়াদ আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ পর্যন্ত।

মনে রাখবেন 

বাংলাদেশি এই পদ্ধতিই একমাত্র বৈধ পদ্ধতি কারন বাংলাদেশের ব্যাংকিং এবং বিদেশি মুদ্রার নিয়ন্ত্রন অত্যন্ত কঠিন। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে ডুয়াল কারেন্সি কার্ড নেয়ার ফলে ব্যাংক এবং রাষ্ট্র আপনার লেনদেনের ওপর নজর রাখতে পারে। এই পদ্ধতিতে ডুয়াল কারেন্সি কার্ড নেয়া ছাড়া আপাতত অন্য কোন উপায়ে বিদেশ হতে বৈদেশিক মুদ্রায় আপনি কিছু কিনতেও পারবেন না। ক্রিপ্টোকারেন্সি বাংলাদেশে অবৈধ এবং এটি ব্যবহারের ফলে আপনার জেলও হতে পাতে। 

পরিশেষ

এই বৈধ উপায় অবলম্বন করে সহজেই আপনি আপনার নামে ডুয়াল কারেন্সি কার্ড নিতে পারবেন এবং বিদেশ থেকে কেনা কাটা করতে পারবেন। এবং এর মাধ্যমে আপনি সহজেই প্রাইভেসি প্রোডাক্ট কিনতে পারবেন। আপনি চাইলে আপনার ডুয়াল কারেন্সি কার্ড এর সাহায্যে ওপেনসোর্স প্রজেক্টে দানও করতে পারবেন। অবশ্যই এই পদ্ধতিতে আপনি নজরদারিতে থাকবেন, কিন্তু এর বাইরে আপনার প্রাইভেসি রক্ষার্থে কিছুটা উৎসর্গ করতেই হবে। 

পেঙ্গুইনস ক্লাব অতি শীঘ্রই বাংলাদেশে অতি সহজে মোবাইল ওয়ালেট দ্বারা প্রাইভেসি ইমেইল, ভিপিএন এবং অন্যান্য প্রাইভেসি টুল কেনার একটি সার্ভিস নিয়ে আসছে। কিন্তুর তার আগে পর্যন্ত আপনাদের বর্তমানে থাকা উপায়গুলি জানাতে আমাদের এই আর্টিকেলটি। যে কোন প্রশ্ন এবং সমস্যা আমাদের কমেন্টে লিখে জানান। 

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.