২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের তথ্য উঠে এসেছে মেটার প্রতিবেদনে। আইনি সেবাদাতা কোম্পানি ‘ফোলি হোগ’-এর পর্যবেক্ষণও যোগ করা হয়েছে সেখানে।
প্রথমবারের মতো বাৎসরিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাতৃপ্রতিষ্ঠান মেটা। স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার মেটা এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলে জানানো হয়েছে।
এখন অভিযোগ উঠেছে, মানবাধিকার প্রতিবেদনে স্বাধীন পর্যালোচনাকারী আইনি প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ করেনি তারা । নিজেদের দায় এড়াতে মেটা তথ্য চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের তথ্য উঠে এসেছে মেটার প্রতিবেদনে। আইনি সেবাদাতা কোম্পানি ‘ফোলি হোগ’-এর পর্যবেক্ষণও যোগ করা হয়েছে সেখানে। ভারতের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ওই ফার্মকে দায়িত্ব দিয়েছিল মেটা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো ভারতের পরিস্থিতি পর্যালোচনার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে। জানুয়ানি মাসে লেখা এক যৌথ চিঠিতে মেটার বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছা করে’ প্রতিবেদন প্রকাশে বিলম্ব করার অভিযোগ তোলে ওই দুই সংস্থা।
প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে মেটা বলেছে, মেটার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার মত বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের প্রচার, বৈষম্য এবং সহিংসতার মত মানবাধিকার ঝুঁকি থাকার বিষয়গুলো উঠে এসেছে ফোলি হোগ এর পর্যালোচনায়।
তবে ‘কনটেন্টে মডারেশনের’ ক্ষেত্রে পক্ষপাতের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হয়নি বলে জানিয়েছে মেটা।
ভারতীয় মানবাধিকার সংস্থা ‘ইন্ডিয়া সিভিল ওয়াচ ইন্টারন্যাশনাল’-এর প্রতিনিধি রাতিক আশোকান রয়টার্সকে বলেছেন, মানবাধিকার প্রতিবেদন নিয়ে মেটার সারসংক্ষেপে ফোলি হোগ এর পর্যালোচনায় আসা বিষয়গুলোকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করার চেষ্টা হয়েছে বলে মনে হয়েছে তার।
ফোলি হোগ-এর পর্যালোচনায় অংশ নিয়েছিলেন আশোকান; পরে মেটার উদ্দেশ্যে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চিঠি পাঠানোর ক্ষেত্রেও তিনি সংগঠকের ভূমিকাও পালন করেছেন।
তার ভাষায়, প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যে মেটা খুশি নয়, সেটা ওই সারসংক্ষেপেই স্পষ্ট।
“অন্তত এক্সিকিউটিভ সামারির পুরোটা প্রকাশের সাহস তো তাদের থাকা উচিত, যেন আমরা দেখতে পারি য়ে স্বাধীন আইনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি কী বলেছে।”
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক ডেবোরাহ ব্রাউনও মনে করছেন, পর্যালোচনা থেকে ‘সতর্কতার সঙ্গে নির্বাচিত’ অংশ নিয়েই মেটার সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়েছে।
বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য প্রচারে মেটার ভূমিকা বুঝতে মানরবাধিকার প্রতিবেদনটি কোনো ভূমিকা রাখছে না এবং অনলাইন বিদ্বেষ মোকাবেলায় তারা কী পদক্ষেপ নেবে, সে বিষয়টিও প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ব্যবহারকারীর সংখ্যার বিচারে পুরো বিশ্বে মেটার সবচেয়ে বড় বাজার ভারত। মুসলিমবিরোধী বক্তব্য প্রচারে মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোর সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্কবার্তা দিচ্ছে বেশ কবছর ধরেই।
২০২০ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেছিলেন ভারতে মেটার তৎকালীন পাবলিক পলিসি প্রধান আঁখি দাস।
সে সময়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল, সহিংসতা উস্কে দিচ্ছেন এমন চিহ্নিত হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের ওপর কোম্পানি নীতিমালা প্রয়োগের বিরুদ্ধে ছিলেন দাস।
নিজস্ব প্রতিবেদনে ভারতে নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের পরামর্শগুলো বিবেচনা করে দেখার কথা বললেও, মেটা তার কোনোটি প্রয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।