যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছুদিন ধরেই ৫জি প্রযুক্তির প্রচলন নিয়ে ঘোলাটে পরিস্থিতি চলছে। উড়োজাহাজের স্পর্শকাতর যন্ত্রাংশের উপর সি-ব্যান্ড ৫জি’র বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ ফ্লাইট বাতিল করেছে এমিরেটস, এয়ার ইন্ডিয়া, অল নিপ্পন এয়ারওয়েইজ (এএনএ) এবং জাপান এয়ালাইন্স। যার ফলে উড়োজাহাজ নির্মাতা ও যাত্রীবাহী এয়ারলাইনগুলো সি-ব্যান্ড ৫জি সংযোগের বিরোধীতা করে আসছে। অন্যদিকে, দেশটির বাজারের শীর্ষ মোবাইল সেবাদাতা এটিঅ্যান্ডটি ও ভেরাইজন এই প্রযুক্তির পেছনে হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের কারণে ৫জি প্রচলনে মরিয়া।
দুই শিল্পখাতের বিপরীতমুখী অবস্থানের ফলে মার্কিন সরকারের বাজার পর্যবেক্ষক বিপাকে পড়েছে। সর্বশেষ, স্বেচ্ছায় নির্দিষ্ট কয়েকটি এয়ারপোর্টের আশপাশে ৫জি অ্যান্টেনা বন্ধ রেখে এটিঅ্যান্ডটি এবং ভেরাইজন দেশজুড়ে সর্বাধুনিক মোবাইল সংযোগ সেবা চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। এমনই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নির্দিষ্ট কয়েকটি এয়াপোর্ট বাদে এমিরেটসসহ একাধিক এয়ারলাইন্স বেশিরভাগ ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট ভার্জ জানিয়েছে যে এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমিরেটসের ঘোষণাটি থেকেই সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়াও এসবের পাশাপাশি রয়েছে ৫জি প্রযুক্তির প্রথম সফল বাস্তবায়নের উত্তেজনা। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় হুয়াওয়ে এবং চীনের সঙ্গে বিরোধের জেরে এরই মধ্যে ৪জি প্রতিযোগিতায় পিছিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে, এবার ৫জি প্রচলনে মরিয়া হয়ে আছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। সুতরাং, যে দেশ সফলভাবে এর প্রচলন করতে পারবে, ৫জি’র মান নির্ধারণে সেই দেশ নেতৃস্থানীয় অবস্থায় থাকবে। এর ফলে শত শত বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যে প্রভাব রাখা সম্ভব হবে, ব্যবসাও লাভজনক হবে। এই বাস্তবতায় এভিয়েশন শিল্পের আপত্তি-অনুরোধের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫জি প্রযুক্তির অভিষেক কয়েকবার পেছানো হয়েছে।
প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট ভার্জের মতে এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমিরেটসের ঘোষণাটি থেকেই সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ১৯ জানুয়ারি থেকে এমিরেটস বস্টন, শিকাগো, ডালাস-ফোর্ট ওর্থ, হিউস্টন, মায়ামি, নিউয়ার্ক, অরল্যান্ডো, স্যান ফ্রান্সিসকো এবং সিয়াটলগামী ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ওই গন্তব্যগুলোতে ফ্লাইট বন্ধ থাকবে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে। তবে এমিরেটস নিউ ইয়র্কের জন এফ. কেনেডি (জেএফকে) এয়ারপোর্ট, লস অ্যাঞ্জেলেস (এলএএক্স) এবং ওয়াশিংটন ডিসিগামী ফ্লাইট চালু রাখবে।
এটিঅ্যান্ডটি ও ভেরাইজন এভিয়েশন শিল্পের আপত্তির মুখে একাধিকবার ৫জি’র প্রচলন পিছিয়ে দিয়েছে। এমিরেটস কর্তৃপক্ষ বর্তমান পরিস্থিতি সমাধানে উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে। সর্বশেষ, দুই প্রতিষ্ঠান ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু তার একদিন আগেই সি ব্যান্ড ৫জি প্রযুক্তির প্রচলনে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থায় ‘ভয়াবহ বিপর্যয়ের’ আশঙ্কা জানিয়েছিল এয়ারলাইন্সগুলো। এমিরেটস নির্দিষ্ট গন্তব্যের কথা বললেও, এএনএ এবং জাপান এয়ারলাইন্স সরাসরি শীর্ষ উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের উদ্ধৃতি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি (এফএএ)’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সি-ব্যান্ড ৫জি কিছু উড়োজাহাজের রেডার অ্যালটিটিউড মিটারে কার্যক্ষমতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে বলে স্থানীয় এভিয়েশন শিল্পের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আশঙ্কা। এএনএ বলছে যে বোয়িং ৭৭৭ এয়ারক্র্যাফট ব্যবহারকারী সকল এয়ারলাইন্সের উপর বোয়িং বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বোয়িং এই প্রসঙ্গে ভার্জের তাৎক্ষণিক মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। বোয়িংয়ের মতো নির্দেশনা প্রচার না করলেও “বৃহত্তর শিল্পের অংশ” হিসেবে বাজারে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাস কাজ করার কথা বলেছে।
অন্যদিকে, এটিঅ্যান্ডটি এবং ভেরাইজন ১৯ জানুয়ারি দিনের শুরুতেই স্বেচ্ছায় নির্দিষ্ট কয়েকটি এয়ারপোর্টের আশপাশে ৫জি সংযোগ পরে চালু না করার ঘোষণা দিয়েছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে পাওয়া নোটিশের বরাত দিয়ে জাপান এয়ারলাইন্স বলেছে যে ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইলে ফোনের জন্য যে ৫জি সংযোগ চালু হওয়ার কথা তা বোয়িং ৭৭৭ বিমানের রেডিও ওয়েভ অল্টিমিটারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।