মহামারীর সঙ্কটে জাহাজে পণ্য পরিবহন খরচ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং সম্প্রতি ডলারের দাম বাড়ায় কম্পিউটারের দাম আরও ১০ শতাংশ বেড়েছে, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) ও এ বিষয়টি জানিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে ল্যাপটপ, প্রিন্টার ও টোনার কার্ট্রিজের ওপর প্রস্তাবিত বাড়তি ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে। ৯ জুন বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী দেশীয় কম্পিউটার উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়তি সুবিধা দিতে আমদানি করা ল্যাপটপের ওপর ১৫ শতাংশ মূসক আরোপের প্রস্তাব করেন।
দেশীয় কম্পিউটার উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়তি সুবিধা দিতে বাংলাদেশ অর্থমন্ত্রী আমদানি করা ল্যাপটপের ওপর ১৫ শতাংশ মূসক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন। যার ফলে আমদানি করা ল্যাপটপ কিনতে গ্রাহকদের বাড়তি খরচ করতে হবে। মূসক বাড়ানোর পর আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মোট করভার ৩১ শতাংশ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। মাননীয় সংসদ স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ এর অর্থ বছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একথা বলেন।
ল্যাপটপ আমদানিতে কর বাড়ানোর প্রস্তাবের সাথে হার্ডওয়্যারের দেশীয় উৎপাদন খাতে ভ্যাট প্রত্যাহার ও রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন তিনি। বাজেট বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে দেশীয় কম্পিউটার/ল্যাপটপ ও আইসিটি পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিরক্ষণে কম্পিউটারের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও আইসিটি শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা সম্প্রসারনের প্রস্তাব ও দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও অর্থমন্ত্রী ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কম্পিউটার, প্রিন্টার ও টোনার কার্ট্রিজ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেন।
কম্পিউটার এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য হার্ডওয়্যার এর উপর বিসিএস ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানায়। ১৯৯৮ সালে কম্পিউটারের উপর সকল ভ্যাট এবং ট্যাক্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী উল্লেখ করে বিসিএস বলেছে, অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাব কার্যকর হলে, ১৫% অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপের ফলে সর্বমোট ৫৫% মূল্যবৃদ্ধি হবে। এই বাস্তবতাকেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ল্যাপটপ, প্রিন্টার এবং টোনার কার্টিজের উপর প্রস্তাবিত অতিরিক্ত ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহারে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সমিতি। ১৪ই জুন বিসিএস প্রযুক্তি পণ্য থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি করেছিল।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সহসভাপতি আবু দাউদ খান। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রত্যাশিতভাবে ইন্টারনেট, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের ওপর ভ্যাট ও ট্যাক্স বসানো হয়েছে, যা প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বেসিসের দাবিগুলো বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন ক্ষমতা ও চাহিদা পূরণে সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত ল্যাপটপ আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক সাধারণ ব্যবহারকারীদের ল্যাপটপ চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে।
বাংলাদেশের ক্রেতাদের সিংহভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থী, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী। প্রযুক্তিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ট্যাক্স অব্যাহতি সুবিধা দিতে হবে। আমদানি করা ল্যাপটপ, প্রিন্টার ও টোনার কার্ট্রিজের ওপর বাড়তি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ পণ্যগুলোকে দেশের সিংহভাগ ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কার কথা সংগঠনটি জানিয়েছে সংগঠনটি। এতে করে দেশে বেকারত্বের হার আরো বেড়ে যেতে পারে।