সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হওয়া প্রান্তিকে গুগল ও ইউটিউবের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের আয় বেড়েছে মাত্র ছয় শতাংশ। বিজ্ঞাপনদাতারা এ খাতে খরচের লাগাম টানায় শেষ প্রান্তিকে অ্যালফাবেটের আয় ছিল ছয় হাজার নয়শ কোটি ডলার। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে আগের মতো আয় বাড়ছে না মাইক্রোসফট ও গুগলের। সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দায় একের পর এক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দুই টেক জায়ান্টের সর্বশেষ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন।
এছাড়াও, কম্পিউটার ও অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের চাহিদাও কমে এসেছে বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফট। গেল প্রান্তিকে কোম্পানির আয় ১১ শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ১০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীর গতির আয় বৃদ্ধির হার ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি। পণ্যের মূল্য আর সুদের হার বাড়তে থাকায় খরচ কমানোর চেষ্টা করছেন ভোক্তা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উভয় পক্ষ। অন্যদিকে, মার্কিন ডলারের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।
শেষ প্রান্তিকে অ্যালফাবেটের মুনাফা ৩০ শতাংশ কমে এক হাজার ৩৯০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। ইউটিউব নিজেদের আর্থিক প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের প্রথা চালু করার পর প্রথমবারের মতো আয় কমেছে প্ল্যাটফর্মটির। আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা। বিবিসি জানিয়েছে, পরিবর্তনশীল বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে গত কয়েক মাসে নতুন কর্মী নিয়োগের গতি কমিয়েছে অ্যালফাবেট, আর কর্মী ছাঁটাইয়ের পথ বেছে নিয়েছে মাইক্রোসফট।
কর্মী ছাঁটাইয়ের কৌশল বেছে নিয়েছে নেটফ্লিক্স এবং টুইটারের মতো বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও। শেষ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর মঙ্গলবারে শেয়ার বাজারে দর পড়েছে মাইক্রোসফট ও অ্যালফাবেট উভয় শেয়ারের। এ পরিস্থিতিতে কোম্পানি হিসেবে অ্যালফাবেট নিজেদের মনোযোগকে আরও তীক্ষ্ণ করছে এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন গুগল প্রধান সুন্দার পিচাই।
পরিস্থিতির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বাজার বিশ্লেষক ইনসাইডার ইন্টেলিজেন্স এর এভেলিন মিচেল বলেন, গুগল যখন ধাক্কা খায় তখন এটি সার্বিক ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ব্যবসার জন্যই এক প্রকার সংকেত। গুগলের জন্য একটি হতাশাজনক প্রান্তিক ইঙ্গিত করে যে, যদি বাজার পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকে তবে সামনে কঠিন দিন আসছে। অতীতে ফেসবুক আর স্ন্যাপের মতো অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মের বিজ্ঞাপনী আয় কমলেও গুগলের মূল ব্যবসা সে তুলনায় স্থিতিশীল ছিল বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন এভেলিন।
আর মাইক্রোসফট জানিয়েছে, বাণিজ্যিক ক্রেতারা খরচ কমানোয় পিসি এবং ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তির চাহিদাও কমে আসার শঙ্কা করছে তারা। এক্সবক্স কনসোল ভিডিও গেম ব্যবসা থেকেও আয় কমছে মাইক্রোসফটের। কোভিড মহামারীর লকডাউনে ঘরবন্দী মানুষরা প্রযুক্তিমুখী হওয়ায় বিক্রি বেড়েছিল ‘বিগ টেক’ হিসেবে পরিচিতি প্রথম সারির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পুরোপুরি পাল্টে গেছে সে দৃশ্য।