Reading Time: 3 minutes

প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউব সবচেয়ে ভালো ফলাফলেও দেখা গেছে অর্ধেকের বেশি বারই এমন ভিডিও পরামর্শ দেয়, যেগুলো ব্যবহারকারী দেখতে চান না। সবচেয়ে বাজে বিষয় হলো, একই ধরনের ভিডিও ঠেকাতে তেমন কোনো লক্ষণই দেখা যায় না অপশন চাপার ফলাফলের। এক গবেষণায় কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির ভিডিও দেখতে ব্যবহারকারী তার অনিচ্ছার কথা ইউটিউবকে জানানোর পরও পরামর্শে একই ধরনের ভিডিও কনটেন্ট আসতে থাকে বলে উঠে এসেছে।

২০ হাজারের বেশি ইউটিউব ব্যবহারকারীর ভিডিও রেকমেন্ডেশন তথ্যদি বিশ্লেষণ করে মজিলা গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অকার্যকর নট ইন্টারেস্টেড, ডিসলাইক, স্টপ রেকোমেন্ডিং চ্যানেল ও রিমুভ ফ্রম ওয়াচ হিস্টরি এর মতো অপশন। ভিডিও ও ব্যবহারকারীর কাছ থেকে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহে মজিলা গবেষকগণ  বাছাই করেন মজিলা ফাউন্ডেশনের রিগ্রেটসরিপোর্টার নামে ব্রাউজার এক্সটেনশন ব্যবহার করা স্বেচ্ছাসেবকদের।

এটি অংশগ্রহণকারীর দেখা ইউটিউব ভিডিওতে একটি সাধারণ স্টপ রেকমেন্ডিং অপশন যোগ করে। অন্যদিকে, ব্যবহারকারীকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে বিভিন্ন দলের অংশ করা হয়। ফলে, প্রতিবার মজিলার বসানো অপশনে ক্লিক করলে ইউটিউবের কাছে ভিন্ন ভিন্ন সিগনাল পৌছায় — ডিসলাইক, নট ইন্টারেস্টেড, ডোন্ট রেকমেন্ড চ্যানেল, রিমুভ ফ্রম হিস্টরি ও একটি নিয়ন্ত্রক দল, যাদের কোনো ফিডব্যাক প্ল্যাটফর্মে পৌঁছায়নি। বাজে ভিডিও পরামর্শ ঠেকাতে বেইজলাইন কন্ট্রোল গ্রুপের তুলনায় ডিসলাইক ও নট ইন্টারেস্টেড সিগনাল সামান্যই কার্যকর ছিল।

তবে এদের কার্যকারিতার হার ছিল যথাক্রমে ১২ শতাংশ ও ১১ শতাংশ। ডোন্ট রেকমেন্ড চ্যানেল ও রিমুভ ফ্রম হিস্টরি অপশন সেই তুলনায় বেশি কার্যকর। এগুলো যথাক্রমে ৪৩ শতাংশ ও ২৯ শতাংশ বাজে পরামর্শ ঠেকিয়েছে। তবে গবেষকদের মতে প্ল্যাটফর্মটির বিভিন্ন টুল এখনও অপর্যাপ্ত হওয়ার পাশাপাশি অবাঞ্ছিত কনটেন্টে অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে এগুলো। ইউটিউবের পরামর্শ দেওয়া ৫০ কোটির বেশি ভিডিও থেকে ডেটা সংগ্রহ করে ৪৪ হাজারের বেশি ভিডিওর জোড়া তৈরি করেছেন গবেষকরা।

এর একটি হচ্ছে বাতিল করা ভিডিও আর অন্যটি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি পরামর্শ দেওয়া ভিডিও। গবেষকরা এই সব ভিডিও জোড়া নিজেদের মধ্যে মূল্যায়ন করে বা ‘মেশিন লার্নিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বোঝার চেষ্টা করেছেন, ব্যবহারকারীর বাতিল করা ভিডিও এবং এর পর ইউটিউবের পরামর্শ দেওয়া ভিডিওর মধ্যে বেশি কতোটা আছে বা নেই। গবেষকগণ জানান, ব্যবহারকারী নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যে মতামত দেন, সেটিকে সম্মান করা উচিত ইউটিউবের।

দর্শক কীভাবে প্ল্যাটফর্মে সময় কাটাতে চান, সেটিকে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসাবে বিবেচনা করা উচিত তাদের। ইউটিউব মুখপাত্র এলেনা হার্নান্দেজ ব্যাখ্যা দিয়ে বলছেন, এমনটি ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয়। কারণ, কোনো বিষয়ে সকল কনটেন্ট ব্লক করার চেষ্টা করে না প্ল্যাটফর্মটি। এই গবেষণারও সমালোচনা করেছেন হার্নান্দেজ। তিনি বলেন, ইউটিউবের কারিগরি কাঠামো কীভাবে সাজানো, সেটি বিবেচনায় নেননি গবেষকরা। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমাদের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় গোটা বিষয় বা দৃষ্টিভঙ্গিকে আটকে দেয় না।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

কারণ এটি দর্শকের জন্য ইকো চেম্বার তৈরির মতো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে হার্নান্দেজ ভার্জকে জানান। মজিলা গবেষক বেকা রিকস বলছেন, এই সব আলাদা কন্ট্রোল আসলে কী করে, সেটিও সবসময় পরিষ্কার নয়। আর প্ল্যাটফর্মটিও পরিষ্কার করে বলে না যে ফিডব্যাক কীভাবে কাজ করে। ইউটিবের ক্ষেত্রে আমার ধারণা, ব্যবহারকারীর সম্পৃক্ততার সঙ্গে তার সন্তুষ্টির সামঞ্জস্য করছে প্ল্যাটফর্মটি, যা সাইটে সময় কাটানোর মতো কনটেন্ট পরামর্শ ও অ্যালগরিদমের বিবেচনায় দর্শক যা পছন্দ করবে, তার একটি ভারসাম্য।

অ্যালগরিদমে এদের মধ্যে কোন সিগনালটি সবচেয়ে বেশি গ্রহনযোগ্যতা পাবে, সেটি জানার সক্ষমতা আছে প্ল্যাটফর্মটির। তবে আমাদের গবেষণা বলছে, সবসময় ব্যবহারকারীর ফিডব্যাক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে বলে এক ইমেইল বার্তায় বেকা রিকস বলেন। ইউটিউব ছাড়াও টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্লাটফর্মে ব্যবহারকারীকে অ্যালগরিদম প্রশিক্ষণ দিতে ও সম্ভাব্য প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট দেখানোর জন্য বিভিন্ন ফিডব্যাক টুল রয়েছে। তবে ব্যবহারকারীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, তারা কোনো কিছু দেখতে না চাইলেও একই ধরনের পরামর্শ আসতেই থাকে।

হার্নান্দেজ আরো বলেন যে প্ল্যাটফর্ম নিয়ে অ্যাকাডেমিক গবেষণাকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন। এ কারণেই ইউটিউব রিসার্চার প্রোগ্রামের মাধ্যমে ডেটা এপিআই তে প্রবেশাধিকার তারা বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্লাটফর্মটির সিস্টেম আসলে কীভাবে কাজ করে ও তাদের পক্ষে এতগুলো তথ্য সংগ্রহ করা কত জটিল, সে বিষয়টি উঠে আসেনি মজিলার গবেষণায়। মজিলার একই ধরনের শব্দটির ব্যবহার থেকে আসলে বোঝা সম্ভব নয় যে, ইউটিউবের পরামর্শ ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে।

নট ইন্টারেস্টেড এ প্রেস করলে ইউটিউব কেবল উক্ত ভিডিওটিই পরামর্শ থেকে সরিয়ে ফেলে এবং ডোন্ট রেকমেন্ড চ্যানেল একইভাবে কাজ করে চ্যানেলের বিষয়ে। পরবর্তিতে অপছন্দের ভিডিওগুলো পুণরায় ব্যবহারকারীর সামনে চলে আসে।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.