৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে টুইটার’কে কিনতে চেয়েছিলেন বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী (সিইও) ইলন মাস্ক । এর আগে, গত মার্চে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের ৯.২ শতাংশ শেয়ার কিনে নেন তিনি। এরপর মাইক্রোব্লগিং সাইট টির পরিচালনা পরিষদেও আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ইলন মাস্ক। কিন্তু সেই ইচ্ছা বাদ দিয়ে এবার ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে গোটা টুইটারই কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। শেয়ারপ্রতি ৫৪.২০ ডলারে কেনার প্রস্তাব দেন ইলন মাস্ক। তার এ প্রস্তাবের পরপরই নড়েচড়ে বসেছে টুইটারের পরিচালনা পরিষদ।
ইলন মাস্কের টুইটার কেনার ঘোষণার পর এ অধিগ্রহন প্রক্রিয়া ঠেকাতে ‘পয়জন পিল‘ নীতি গ্রহণ করেছে টুইটারের পরিচালনা পরিষদ। পয়জন পিল নীতির সাহায্যে একটি কোম্পানির শেয়ারধারীদের শেয়ারের পরিমাণ সীমিত রাখা হয়। শুক্রবারই টুইটারের পরিচালনা পরিষদ স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তারা চুপচাপ বসে থাকবে না। তারা বলছে, একক ব্যক্তির কাছে প্রতিষ্ঠানের ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার চলে গেলে তা বাজারে অস্থিরতা ও বিশ্রিঙ্খল সৃষ্টি করবে।
পরে টুইটার বোর্ড শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে ‘পয়জন পিল’ পাস করে। সব বোর্ড সদস্যদের সম্মতি নিয়েই এটি কার্যকর করা হয়। এর মেয়াদ ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত রাখা হয়েছে। পয়জন পিল হলো একটি প্রতিরক্ষা কৌশল যা একটি ক্রয় বা অধিগ্রহন করতে ইচ্ছুক এ ধরনের ব্যক্তি বা কোম্পানির জন্য এক প্রকার প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিষদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে কিনে নেওয়ার চেষ্টা চালালে তাকে প্রতিকূল অধিগ্রহণ বলা হয়।
আর এই প্রতিকূলতা, অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার শেষ অস্ত্র হিসেবেই পয়জন পিল ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা একে পরমাণু বিকল্প বলে। প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণকারীকে নিরুৎসাহিত করা হয়। যেনো সে কোম্পানিটি কিনে নিতে আগ্রহ না করে। এ ক্ষেত্রে নানা উপায়ে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। অধিগ্রহণকারীর ব্যক্তি বা কোম্পানির কাছে প্রতিষ্ঠানকে অলোভনীয় ও কম আকর্ষণীয় করতে এই কৌশলটি ব্যবহার করে। যদিও এই কৌশলটি একটি কোম্পানিকে অধিগ্রহণের হাত থেকে রক্ষা করার সর্বোত্তম উপায় নয় তবে সর্বাধিক ক্ষেত্রে এ কৌশল বেশ কার্যকর।
তাই তারা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয় যেনো অধিগ্রহন করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে সকল শেয়ারহোল্ডারের স্বার্থ রক্ষা করা এবং বিভিন্ন আপডেট অথবা প্রিমিয়ামের নামে আরো অর্থ প্রদান করতে বাধ্য হয়। অযাচিত অধিগ্রহণ ঠেকানোর জন্য হলেও পয়জন পিল প্রায়ই আরও দরকষাকষির দরজা খুলে দেয়। যার পরিণতি গড়াতে পারে মধুর চুক্তিতে। আবার বোর্ড শেয়ারহোল্ডার দের অধিকার রক্ষার্থে আরো সময়ও নিতে পারে। ইলন মাস্ক এখন একই ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন।
এতে বোঝা যাচ্ছে টুইটার বোর্ড চায় না ইলন মাস্ক খুব সহজেই টুইটারকে কিনে ফেলুক। টুইটার এটাও বলেছে যে, অধিগ্রহণ যদি সবার স্বার্থ রক্ষা করে তাহলে বোর্ডের সদস্যরা এটিকে সমর্থন করতে পারে। ইলন মাস্কের বর্তমানে টুইটারের ৯ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। টুইটার বোর্ড তাকে ইলন মাস্ক কে বোর্ডসভায় অংশ নিতে আহবান জানিয়েছিল, তবে ইলন মাস্ক তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রত্যাখানের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে তিনি সভায় যোগ দিলে ‘বেনিফিষিয়াল ওউনার’ আইনের অধীনের ১৪ দশমিক ৯ শতাংশের বেশি স্টক শেয়ার পেতেন না।
কোম্পানিটির পয়জন পিল নীতি গ্রহণের ঘোষণায় ইলন মাস্ক কোনো তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে বৃহস্পতিবার ইলন মাস্ক ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি আইনি লড়াই চালাতে প্রস্তুত। এক টুইটবার্তায় মাস্ক লেখেন: টুইটারের বর্তমান পরিষদ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থের বিপরীতে কোনো পদক্ষেপ নিলে তা হবে তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্বের লঙ্ঘন। আর এ কর্তব্য লঙ্ঘনের দায় হবে ব্যাপক। মাস্ক জানান যে, তিনি নিশ্চিত নন এ ঘটনার পর টুইটার ক্রয় করতে তিনি সক্ষম হবেন কিনা তবে তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। টেসলা সিইও আরও বলেছেন, তার ৪৩ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব গ্রহণ করা না হলে তার একটি প্ল্যান ‘বি’ বা বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও বিকল্প পরিকল্পনার বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।