Reading Time: 2 minutes

সম্প্রতি প্রথমবারের মত গবেষকগণ পৃথিবী ছাড়া ভিন্ন এক গ্রহ আবিষ্কারের দাবি করলেন, যা শুধুমাত্র পানির সমন্বয়ে তৈরি। পৃথিবীর সৌরজগতের বাইরে পানি দ্বারা গঠিত দুটি নতুন গ্রহ আবিষ্কারের দাবি করেছেন একদল মহাকাশ বিজ্ঞানী। বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার অ্যাস্ট্রোনমিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গবেষকগণ  লিখেছেন, পৃথিবীর সৌরজগৎ থেকে প্রায় ২১৪ আলোকবর্ষ দূরের এক সৌরজগতে কেপলার-১৩৮সি এবং কেপলার-১৩৮ডি নামের গ্রহ দুটির অবস্থান।

মহাবিশ্বে এমন গ্রহের অস্তিত্ব এতদিন তত্ত্বীয় ধারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। গবেষকগণ  যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ দিয়ে এমন কোনো গ্রহের অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে পারেননি এর আগে। একটি লাল নক্ষত্র ঘিরে চক্কর দিচ্ছে গ্রহ দুটি। আর এদের আবিষ্কারে ভূমিকা রেখেছে নাসার হাবল আর অবসের থাকা স্পিটজার টেলিস্কোপ। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট লিখেছে, অনলাইন ‘এক্সোপ্লানেট’ তালিকাতে নাসা এখনও কেপলার-১৩৮ডি কে সম্ভবত পাথুরে গ্রহ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে রেখেছে।

আকারে পৃথিবীর দেড় গুণ বড় হলেও গ্রহ দুটির ভর পৃথিবীর প্রায় দ্বিগুণ বলে গবেষকগণ  ধারণা করছেন। আকার ও ভরের এই হিসেবের কারণেই গ্রহ দুটির গল্প কিছুটা জটিল হয়ে উঠেছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে গবেষণা প্রতিবেদনের সহ-লেখক, ইউনিভার্সিটি অফ মন্ট্রিয়ালের অধ্যাপক বিয়র্ন বেনেকি বলেন, তাদের আগের ধারণা ছিল যে পৃথিবীর চেয়ে আকারে কিছুটা বড় গ্রহগুলো আদতে পাথর আর বড় আকারের ধাতব বল ছাড়া কিছু ‍নয়। এ কারণেই ওই গ্রহগুলোকে সুপার আর্থ বলে ডাকা হতো।

পৃথিবীর সূর্য নয়, ভিন্ন কোনো নক্ষত্রকে ঘিরে চক্কর দেয় এমন সব গ্রহকে এক নামে চিহ্নিত করতে ‘এক্সোপ্লানেট’ শব্দটি ব্যবহার করেন গবেষকগণ । অধ্যাপক বেনেকি বলেন, এবার প্রমাণ দেখিয়েছেন তারা যে ওই গ্রহ দুটি, কেপলার-১৩৮সি এবং ডি অনেকটাই ভিন্ন। গ্রহ দুটির আয়তনের একটা বড় অংশ জুড়ে সম্ভবত পানি। তবে, সম্ভবত নীল সাগর নয়, উত্তপ্ত বায়ুমণ্ডলে ভেসে বেড়ানো জলীয় বাষ্প ঢেকে রেখেছে গ্রহ দুটিকে। জলীয় বাষ্পের বায়ুমণ্ডলের নিচে তরল পানি থাকার সম্ভাবনাও ফেলে দিচ্ছেন না গবেষকগণ।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

কেপলার জুটিকে তারা তুলনা করছেন বৃহস্পতি আর শনির চাঁদ ইউরোপা আর এনসেলাডাসের সঙ্গে। গবেষক দলের প্রধান এবং ইউনিভার্সি অফ মন্ট্রিয়ালের ক্যারোলিন পলেট বলেন, কেপলার-১৩৮সি এবং কেডলার-১৩৮ডি গ্রহ দুটির বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা সম্ভবত ফুটন্ত পানির চেয়েও বেশি এবং আমরা গ্রহ দুটিতে ঘন জলীয় বাষ্পের স্তর হিসেবে দেখা হচ্ছে। টেলিস্কোপে সরাসরি নীল জল চোখে পড়েনি মহাকাশ বিজ্ঞানীদের। তবে, গ্রহগুলোর আকার ও ভর নির্ধারণের জন্য যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন তারা।

সে তথ্য নিয়ে পরীক্ষাগারের মডেলের সঙ্গে তুলনা বিচার করে গবেষকগণ বলছেন, গ্রহ দুটির আয়তনের একটা বড় অংশ গঠিত হয়েছে পাথরের চেয়ে হালকা কিন্তু হাইড্রোজেন বা হিলিয়াম গ্যাসের চেয়ে ভারি কোনো উপাদান দিয়ে। সে কারণেই পানির কথা আসছে। অধ্যাপক বেনেকি বলেন যে তাদের যন্ত্রপাতি আর গবেষণা কৌশল যত উন্নত হতে থাকবে, তারা সম্ভবত তত বেশি কেপলার-১৩৮সি এবং ডি-এর মত জলের জগতের সন্ধান পেতে পারবেন।

ওই দুটি গ্রহের উপগ্রহেও পানির অস্তিত্ব আছে বলে মনে করেন মহাকাশ গবেষকগণ । তবে ওই দুই উপগ্রহের সঙ্গে কেপলার জুটির পার্থক্য হল, নিজ নক্ষত্রের অনেক কাছে অবস্থান করছে গ্রহ দুটি। নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ গ্রহ দুটিকে চিহ্নিত করেছিল আগেই। কিন্তু এতোদিন গ্রহ দুটির বায়ুমণ্ডলের গঠন উপাদান নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি গবেষকগণ । সে কাজে সহযোগিতা করেছে নাসার হাবল এবং অবসের থাকা স্পিটজার টেলিস্কোপ।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.