Reading Time: 3 minutes

জাস্টিন গাটম্যান নামক একজন ব্রিটিশ নাগরিক আইফোনের পারফরমেন্স নিয়ে অ্যাপলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি অভিযোগে বলেন যে ক্রেতাদের নতুন ডিভাইস কেনার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে আইফোন নির্মাতা অ্যাপল ইচ্ছে করেই পুরনো ডিভাইসের গতি কমিয়ে দিচ্ছিল। অ্যাপল ইচ্ছে করে পুরনো আইফোনের ব্যাটারির গতি কমিয়ে দিচ্ছে এই অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে যুক্তরাজ্যের আইফোন ব্যবহারকারীরা সিংহভাগ বড় অংকের ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যের আড়াই কোটি আইফোন ব্যবহারকারীর জন্য জাস্টিন গাটম্যান ৭৬ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

যুক্তরাজ্যের কম্পিটিশন আপিল ট্রাইবুনাল এর কাছে দায়ের করা নথিতে গাটম্যান অভিযোগ করেছেন যে অ্যাপল ‘থ্রটলিং’ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পুরনো আইফোনের গতি কমিয়ে দেয় যেন ব্যবহারকারীরা পণ্য ফেরত নেওয়ার বা মেরামতের খরচ এড়িয়ে যেতে পারে। তার অভিযোগ, নতুন একটি সফটওয়্যার আপডেট ইনস্টল করলে ফোনের পারফর্মেন্স আরও বাড়বে বলে অ্যাপল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু উক্ত আপডেট পারফর্মেন্স না বাড়িয়ে উল্টো ফোনের গতি আরও কমিয়ে দিচ্ছিল। তিনি আরো বলেন গাটম্যান বলছেন, সফটওয়্যার আপডেটের ডাউনলোড বিবরণীতে পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট টুল নিয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ ছিল না।

টুলটি ডিভাইসের গতি কমিয়ে দেবে, সে বিষয়টি ব্যবহাকারীদের স্পষ্টভাবে জানাতে অ্যাপল ব্যর্থ হয়েছে। পুরনো আইফোনের ব্যাটারি নতুন আইওএস সফটওয়্যারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না, এ বিষয়টি লুকাতেই অ্যাপল ওই টুলটি চালু করেছিল বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। বিবিসি জানিয়েছে, গাটম্যানের অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে আইফোনের জন্য প্রকাশিত একটি সফটওয়্যার আপডেটে থাকা পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট টুল। ওই আপডেট ডিভাইসের বিদ্যুৎ খরচ নিয়ে জটিলতা এবং হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলোর সমাধান করবে বলে অ্যাপল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

তবে অ্যাপল অভিযোগগুলো সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে যাচ্ছে। নতুন এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাপল এক বিবৃতিতে বলেছে যে তারা কখনোই ইচ্ছে করে অ্যাপল পণ্যের জীবন কাল কমায়নি এবং কমানোর জন্য কিছু করেনি অথবা ব্যবহার অভিজ্ঞতার মান কমিয়ে ক্রেতাদের আপগ্রেডে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টাও করা হয়নি এবং ভবিষ্যতেও করা হবেনা। অ্যাপল আরো বলে যে সবসময়ই তাদের লক্ষ্য ছিল এমন পণ্য নির্মাণ যা ক্রেতারা ভালোবাসবেন এবং আইফোনগুলো যেন যতো দিন সম্ভব টিকে থাকে সেটি নিশ্চিত করা তারই অংশ।

গাটম্যানের দাবি, সম্মানজনক এবং বৈধ পদক্ষেপ হিসেবে ক্রেতাদের বিনা খরচে ব্যাটারি প্রতিস্থাপনের সেবা না দিয়ে, মেরামতের সেবা অথবা ক্ষতিপূরণ না দিয়ে, অ্যাপল উল্টো সফটওয়্যার আপডেটে টুলটি লুকিয়ে রেখে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। এতে ডিভাইসের গতি কমে গিয়েছিল ৫৮ শতাংশ। আইফোন ৬, ৬ প্লাস, ৬ এস, ৬এস প্লাস, এসই, ৭, ৭ প্লাস, ৮, ৮ প্লাস এবং আইফোন এক্স মডেলগুলো গাটম্যানের অভিযোগের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবিসি জানিয়েছে। এদিকে  যুক্তরাজ্যের বাজার পর্যবেক্ষক সংস্থা মোবাইল ব্রাউজার বাজারে অ্যাপলের অধিপত্য তদন্ত করে দেখবে বলে জানিয়েছেন।

এই তদন্তের মুখে পড়েছে গুগল ও। সেই সাথে অ্যাপ স্টোরের মাধ্যমে ক্লাউড গেইংমিংয়ের ওপর আইফোন নির্মাতার নিষেধাজ্ঞা তদন্তের মুখে পড়ছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে যে বাজার পর্যবেক্ষক সংস্থাটি দুই প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের বিরুদ্ধে মোবাইল ব্রাউজারের বাজারে কার্যত ডুওপলি চালানোর অভিযোগ তুলেছে। পর্যবেক্ষক সংস্থাটি উদীয়মান ক্লাউড গেইমিং খাতে অ্যাপলের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে সিএমএ বলছে এই খাতটিকে বড় হতে না দিয়ে অ্যাপল মোবাইল ব্যবহারকারীদের ক্লাউড গেইমিংয়ের সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় ফেলছে।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

সিএমএ আরো বলছে যে তদন্তে তাদের শঙ্কাগুলো আরও ভালোভাবে যাচাই করে দেখা হবে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে আইনি বিধিনিষেধ আসতে পারে অ্যাপলের ওপর, যার ফলে তাদের নিজেদের ব্যবসা কৌশল পরিবর্তনে বাধ্য হতে পারে। অন্যদিকে অ্যাপলের দাবি, নিজস্ব ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে কোম্পানিটি ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করেছে যা তারা ভালোবাসেন এবং নির্মাতাদের জন্য বড় ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি করছে।

কোম্পানি ঝামেলা ছাড়াই প্রতিবেদনে টানা উপসংহারের সঙ্গে অসম্মতি জানায়। তাদের দাবি এটি উদ্ভাবনী খাতে তাদের বিনিয়োগ, গোপনীয়তা এবং ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাকে খাটো করে দেখছে, যার কারণে ব্যবহারকারীরা আইফোন এবং আইপ্যাডকে ভালোবাসেন। এর মাধ্যমে ছোট ছোট নির্মাতারা একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মের সমতল মাঠে প্রতিযোগিতার সুযোগ পান। অ্যাপল আরও বলেছে গঠনমুলক প্রক্রিয়ায় সিএমএ’র সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাবেন তারা এবং ব্যবহারকারী গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের পদক্ষেপগুলো প্রতিযোগিতার প্রসারে কি ভাবে ভূমিকা রাখছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।

সিএমএ বলছে আরো বলছে, ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যে মোবাইল ওয়েব ব্রাউজারের যতো ব্যবহার হয়েছে তার ৯৭ শতাংশ অ্যাপল অথবা গুগলের ব্রাউজার ইঞ্জিন নির্ভর ছিল। নিজস্ব মোবাইল ব্রাউজারের বিকল্প অন্য কোনো অ্যাপের ব্যবহার অ্যাপল নিষিদ্ধ করে রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিযোগী ব্রাউজারগুলোর অ্যাপল পণ্যের তুলনায় নিজেদের স্বকীয়তা উপস্থাপনার সুযোগ সীমিত হয়ে আসে বলে আশঙ্কা করছে তারা সিএমএর প্রধান নির্বাহী আন্দ্রিয়া কোচেল্লি বলেন, মানুষ কীভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিলে, সব কার্ডই গুগলের পাশাপাশি অ্যাপল এর হাতে।

তাদের পণ্য ও সেবাগুলো যতোই ভালো হোক না কেন, মোবাইল ইকোসিস্টেমের ওপর শক্ত নিয়ন্ত্রণের কারণে তারা প্রতিযোগিতার পথ বন্ধ করার সুযোগ পাচ্ছে। এতে ব্রিটিশ প্রযুক্তি খাত পিছিয়ে পড়ছে এবং গ্রাহকদের পছন্দ মতো সেবা বাছাইয়ের সুযোগ কমে যাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.