Reading Time: 3 minutes

মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম, ইন্টার্নেট ব্রাউজারের পর এখন সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে গুগলের সাথে টেক্কা দিবে অ্যাপল!

সার্চ ইঞ্জিন, শব্দটি শুনলেই সবার আগে আমাদের মনে চলে আসে গুগলের নাম। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিনই ব্যবহার করে থাকে গুগল সার্চ ইঞ্জিন। এর মাধ্যমে প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ইন্টারনেট জগতে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে গুগল। কিন্তু গত আগস্ট মাসে শোনা যায়, গুগলকে টেক্কা দিতে আটঘাট বেধে মাঠে নামছে বিশ্বের অন্য আরেকটি জনপ্রিয় টেক জায়ান্ট অ্যাপল। গুগলের মত নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন আনার কথা ভাবছে মার্কিন এ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।

ফিনান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গুগলের বিকল্প সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করতে ইতোমধ্যেই পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেছে অ্যাপল এবং সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারিং টিম কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, অ্যাপলের পরবর্তী অপারেটিং সিস্টেম iOS 14-এর সাথে এই নতুন সার্চ ইঞ্জিনটি সংযুক্ত করা হতে পারে। যদি iOS-এর সাথে এই বড়সড় পরিবর্তনটি অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব না হয় তবে পরবর্তী macOS বা iOS থেকে গুগল সার্চ অপশনটি সরাতে পারে অ্যাপল। ইতিমধ্যেই অ্যাপলের ডিভাইসগুলোতে ওয়েব সার্চের জন্য বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে সংস্থাটি। ৬ জুন শুরু হচ্ছে অ্যাপলের বার্ষিক আয়োজন ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ডেভেলপার্স কনফারেন্স (ডব্লিউডব্লিউডিসি) ২০২২’। এ আয়োজন যতোই এগিয়ে আসছে, আইফোন নির্মাতার আসন্ন পণ্য ও সেবা নিয়ে বাজারে জল্পনা-কল্পনার গুঞ্জন যেন ততোই বাড়ছে।

সেই কল্পনার মত কথাই যেনো বাস্তব রূপ নিয়েছে ব্লগার রবার্ট স্কোবলের টুইটে। দীর্ঘ টুইটার থ্রেডে ডব্লিউডব্লিউডিসি ২০২২-এ অ্যাপলের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ঘোষণাগুলো নিয়ে লিখেছেন স্কোবল। আর তাতেই উঠে এসেছে অ্যাপলের নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিনের প্রসঙ্গ।

স্কোবলের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে আলাপচারিতার ভিত্তিতে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকরেডার জানিয়েছে, ওই ব্লগারের তথ্যের একাংশ এসেছে শিল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপচারিতা থেকে; আর বাকিটা তার নিজের হিসাব-নিকাশের ফলাফল। সার্চ ইঞ্জিন বাজারে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য ধরে রেখেছে গুগল। অন্যদিকে স্মার্টফোন ও অপারেটিং সিস্টেম কেন্দ্রীক বাজারে গুগল-অ্যাপলের রেষারেষিও নতুন খবর নয়। ওই রেষারেষির সূত্রে সংশ্লিষ্ট অনেকেরই প্রশ্ন ছিল অ্যাপল নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন বানানোর উদ্যোগ আদৌ নেবে কি না?

গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেড নিজেদের আয় ব্যয়ের হিসাব বেশ জটিলভাবে জানায় বলে ‘গুগল সার্চ’ ব্যবসা থেকে প্রতিষ্ঠানের আয়ের সুনির্দিষ্ট আকার নির্ধারণ বেশ কঠিন কাজ। তবে, এই খাতে গুগলের সবচেয়ে বেশি আয় আসে বিজ্ঞাপন থেকে। ২০২১ সালে গুগলের বিজ্ঞাপনী আয় ছিল ২১ হাজার কোটি ডলার।

স্কোবলের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হলে অ্যাপল গুগলের সেই বিজ্ঞাপনী আয়েই ভাগ বসাতে চলেছে বলে মন্তব্য করেছে টেকরেডার। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এখনই কেন সার্চ ইঞ্জিনের দিকে ঝুঁকবে অ্যাপল; আগে বা পরে নয় কেন?

বাজার-বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে নিয়ে চলার পরিবর্তে অ্যাপল নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন তৈরির পথেই হাঁটবে। কারণ ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হলে সার্চ বা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ব্যাপক এগিয়ে থাকা সম্ভব। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গুগল সার্চ ইঞ্জিনকে বাদ দিয়ে ইয়াহুকে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন করায় ইয়াহুর জনপ্রিয়তা বেড়েছে আর ২০০৮ সালের পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে গুগলের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের হার ৭৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

প্রশ্নের একটি সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে যে, অ্যাপল মনে করছে আইওএস এবং সাফারি ব্রাউজার এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে চাইলেই সরাসরি গুগলকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে তারা। এক সাম্প্রতিক ক্লাস-অ্যাকশন মামলার নথিপত্র থেকে চমকপ্রদ তথ্য মিলেছে। সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে গুগলের সঙ্গে অ্যাপলের বিশেষ চুক্তি ছিল। ওই চুক্তির অংশ হিসেবে সাফারি ব্রাউজারের ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে নিশ্চিত ছিল গুগলের অবস্থান। এর বদলে প্রতি বছর সর্বোচ্চ দুই হাজার কোটি ডলারের আর্থিক সুবিধা পেত অ্যাপল। আর চুক্তির একটি শর্ত ছিল, নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন পণ্য উন্মুক্ত করতে পারবে না অ্যাপল।

আর নতুন একটি অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার আশঙ্কায় অ্যাপলের নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন চালু করার সম্ভাবনা আরও বাড়ছে বলে উঠে এসেছে টেকরেডারের প্রতিবেদনে।

অন্যদিকে, সাফারি ব্রাউজারের একশ কোটির বেশি ব্যবহারকারী অ্যাপলের সার্চ ইঞ্জিনের সাফল্যের নিশ্চয়তাও দিচ্ছে না। ব্রাউজার এবং সার্চ ইঞ্জিনের বাজারে নিজের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেমের নির্মাতা মাইক্রোসফট।

এমন পরিস্থিতিতে সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে গুগলের সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তি থেকে সরে আসতে চাইলে অ্যাপলকে নিশ্চিত হতে হবে যে, তাদের সার্চ ইঞ্জিন বিজ্ঞাপনী আয়ের মাধ্যমে শত কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারবে।

অ্যাপলের নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনগুলোর মতো নাও হতে পারে বলে উঠে এসেছে টেকরেডারের প্রতিবেদনে। স্কোবলের মতে, সম্ভবত অ্যাপলের সার্চ ইঞ্জিন থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে প্রতিষ্ঠানটির ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট সেবা সিরি।

তবে, আপাতত এ আলোচনা জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। অ্যাপলের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অথবা সংশ্লিষ্ট কেউ আগেভাগেই গোপন তথ্য ফাঁস না করলে নিশ্চিত করে বলার কোনো সুযোগ থাকছে না এক্ষেত্রে।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.