গুগলের কোটি কোটি ডলার আয়ের সিংহভাগই আসে অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। গুগলের বিরুদ্ধে অনলাইন বিজ্ঞাপন বাজারে একচেটিয়া রাজত্বের অভিযোগ তুলেছে মার্কিন বিচার বিভাগ ও দেশটির আটটি অঙ্গরাজ্য। এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মার্কিন বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে ঠুনকো যুক্তি নিয়ে বাড়াবাড়ির অভিযোগ তুলেছে গুগল। গুগল বলছে, মামলাটি একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বিজয়ী ও পরাজিত দল বাছাইয়ের চেষ্টা করেছে।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড বলেন, এই সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্টের প্রতিযোগিতা বিরোধী কার্যক্রমে বিজ্ঞাপনী প্রযুক্তি খাতের প্রতিদ্বন্দ্বীরা ধ্বংস না হলেও, দুর্বল হয়ে পড়েছে।
গুগলের বিরুদ্ধে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রতিযোগিতা বিরোধী অনুশীলনের অভিযোগ তোলেন মেরিক গারল্যান্ড। একটি হচ্ছে বিজ্ঞাপনের জায়গা বিক্রির জন্য এটি প্রায় সকল শীর্ষস্থানীয় ওয়েবসাইট প্রকাশকদের ব্যবহৃত প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞাপনের জায়গা কেনায় এটি বিজ্ঞাপনদাতার ব্যবহৃত টুল নিয়ন্ত্রণ করে।
তৃতীয়ত, প্রকাশক ও বিজ্ঞাপনদাতার মেলবন্ধন ঘটায় এমন বিজ্ঞাপন বিনিময় ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করে এটি। গুগলের এই পরিকল্পনার ফলাফল হিসেবে, ওয়েবসাইট নির্মাতারা তুলনামূলক কম আয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনদাতাকেও বেশি আর্থিক ফি দিতে হয় বলেন মেরিক গারল্যান্ড। এর মানে দাঁড়ায়, তুলনামূলক কম প্রকাশক সাবস্ক্রিপশন, পেওয়াল বা অন্যান্য ধরনের মনিটাইজেশন ব্যবস্থা ছাড়া কনটেন্ট দেখাতে পেরেছিল। বাজার বিশ্লেষক কোম্পানি ‘ইনসাইডার ইন্টেলিজেন্সের’ তথ্য অনুযায়ী, গুগল এই খাতের শীর্ষ খেলোয়াড় হলেও ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোম্পানির বিজ্ঞাপনী আয় কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক আট শতাংশ।
২০১৬ সালেও এটি ছিল ৩৬ দশমিক সাত শতাংশ। আদালতের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জনাথন কান্টার অভিযোগ তোলেন, কোম্পানির ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের কার্যক্রমে প্রতিদ্বন্দ্বী তাড়িয়ে দেওয়া, প্রতিযোগিতা কমানো, বিজ্ঞাপন খরচ বৃদ্ধি, ওয়েবসাইট প্রকাশকের আয় কমে আসা, উদ্ভাবনে বাধা ও মার্কেটপ্লেস সমতল করার মতো ঘটনা ঘটেছে। গুগলের বৈশ্বিক বিজ্ঞাপন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যান টেইলর এক ব্লগ পোস্টে বলেন, বিচার বিভাগের এই কার্যক্রম বেশ কয়েক বছরের উদ্ভাবনকে বিপরীত দিকে ঠেলে নেবে।
এর ফলে, তুলনামূলক বিস্তৃত প্রযুক্তি খাত ক্ষতির মুখে পড়বে। এদিকে বিবিসিকে এক বিবৃতিতে গুগল বলেছে, মামলায় অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি খাতে বিজয়ী ও পরাজিত পক্ষ নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে। এটি মূলত টেক্সাস অ্যাটর্নি জেনারেলের ভিত্তিহীন এক মামলার নকল। সম্প্রতি এর বেশিরভাগ অভিযোগই ফেডারেল আদালত খারিজ করেছে। বিচার বিভাগ এমন এক খোড়া যুক্তি নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে, যা উদ্ভাবনের গতি কমানোর পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের আর্থিক ফি বাড়িয়ে দিতে পারে।
এতে হাজার হাজার ছোট ব্যবসা ও প্রকাশকদের বেড়ে ওঠাও জটিল হয়ে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্ক, রোড আইল্যান্ড, টেনিসি ও ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যও এই আইনি পদক্ষেপে যোগ দিচ্ছে বলে উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে। গুগলের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলা হয়েছে ২০২০ সালে ট্রাম্পের আমলে এক কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে। সে সময় এই প্রযুক্তি জায়ান্টের বিরুদ্ধে সার্চ ফলাফলে নিজেদের একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ ওঠে।
প্রায় দেড়শ পৃষ্ঠা দীর্ঘ এক অভিযোগপত্রে গুগলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টিট্রাস্ট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। তাদের প্রত্যাশা, গুগল যেন প্রতিযোগিতা বিরোধী পরিকল্পনা থেকে সরে আসে, বাজারে একচেটিয়া রাজত্ব বন্ধ করে ও ডিজিটাল বিজ্ঞাপন খাতে প্রতিযোগিতার পরিবেশ ফিরিয়ে আনে। মামলার রায় মার্কিন সরকারের পক্ষে গেলে এটি গুগলের বিজ্ঞাপনী ব্যবসা বন্ধে বাধ্য করতে পারে। বিচার বিভাগের মামলায় গুগলের বিজ্ঞাপনী ব্যবসার কিছু সংখ্যক অংশ সরানোর নির্দেশ রয়েছে।