Reading Time: 3 minutes

মাইক্রোসফট গেমিংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন যে মাইক্রোসফট মালিকানায় গেলেও সনির প্লেস্টেশন প্ল্যাটফর্ম থেকে কল অফ ডিউটি এখনই সরছে না। সনির সঙ্গে আগে থেকেই করা অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ডের চুক্তির বাইরেও প্লে স্টেশনে বেশ কয়েক বছর গেমটি রাখার কথা দিয়েছেন মাইক্রোসফট গেমিংয়ের সিইও ও এক্সবক্স প্রধান ফিল স্পেন্সার। এই বছরের শুরুতে প্লেস্টেশন প্রধান জিম রায়ানকে এক চিঠিতে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্পেন্সার।

সম্প্রতি গেম নির্মাতা অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ডকে কিনে নেওয়ার চেষ্টা করছে মাইক্রোসফট। প্রশ্ন হচ্ছে, সে উদ্যোগ সফল হলে কী হবে এর তৈরি গেমগুলোর। মাইক্রোসফট তার এক্সবক্স প্ল্যাটফর্মের জন্যই রাখবে কি না সেগুলো, বিশেষ করে কল অফ ডিউটি সে প্রশ্নের উত্তর মিলল ইতিমধ্যে। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই চিঠি থেকে পরিষ্কার ইঙ্গিত মেলে, নিয়ন্ত্রকরা মাইক্রোসফটের সঙ্গে অ্যাক্টিভিশনের ছয় হাজার আটশ ৭০ কোটি ডলারের চুক্তি অনুমোদন পেলেও প্লে স্টেশন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে না কল অফ ডিউটি।

ভার্জকে দেওয়া এক বিবৃতিতে স্পেন্সার জানান যে প্লেস্টেশনে কল অফ ডিউটি রাখার নিশ্চয়তা দিতে জানুয়ারি মাসে সনিকে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে দেয়া হয়েছে। ফিচার ও কনটেন্টসহ সনির বিদ্যমান চুক্তির বাইরে কমপক্ষে আরও বেশ কয়েক বছর থাকবে এটি। স্পেন্সার আরো বলেন এটি এমন এক চুক্তি যা গেমিং খাতের অন্যান্য গতানুগতিক চুক্তির চেয়ে আলাদা। মাইক্রোসফটের সর্বশেষ বিবৃতিতে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই যে ওই বেশ কয়েক বছর গেমটি প্লেস্টেশনে থাকার পর কি হবে।

তবে কোম্পানিটি এটি পরিষ্কার যে প্লে স্টেশনে বিদ্যমান চুক্তির চেয়েও বেশি সময় গেম রাখার নিশ্চয়তা দিতে চায়। এ বছরের শুরুতে মার্কিন প্রকাশনা ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, অন্তত আগামী দুই বছরের জন্য প্লেস্টেশনে কল অফ ডিউটি গেম রাখার কথা দিয়েছে মাইক্রোসফট। কারণ গেমিং ফ্রাঞ্চাইজটির সঙ্গে সনির চুক্তি শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালে। ফেব্রুয়ারি মাসে মাইক্রোসফট প্রকাশ্যেই জানায়, চলতি চুক্তির বাইরেও ভবিষ্যতে কল অফ ডিউটি গেম পাওয়া যাবে প্লেস্টেশনে।

এর পরও কল অফ ডিউটি ভক্তদের কাছে তর্কের বিষয় হচ্ছে, চুক্তির মেয়াদ শেষে অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ডের মালিকানা হাতে পেলে মাইক্রোসফট গেমটিকে ‘এক্সবক্স এক্সক্লুসিভ’ করে ফেলবে কি না। তবে, মাইক্রোসফটের এমন উদারতাকে কেবল সনির জন্য এই প্রযুক্তি জায়ান্টের স্বজনপ্রীতি ভাবা ঠিক হবে না। প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট ভার্জ বলছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভয় কমানো এই প্রতিশ্রুতির অংশ, যারা অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ড অধিগ্রহনের জন্য মাইক্রোসফটের ছয় হাজার আটশ ৭০ কোটি ডলারের চুক্তিটি বিশ্লেষণ করছে।

ব্রাজিলের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিল ফর ইকোনমিক ডিফেন্স বা সিএডিই কে দেওয়া নথিতে কল অফ ডিউটি গেমের গুরুত্ব নিয়ে এরইমধ্যে তর্ক করেছেন সনি ও মাইক্রোসফটের আইনজীবিরা। মাইক্রোসফট ও সনির আইনজীবীরা কল অফ ডিউটি গেম ​​নিয়ে বিতর্ক চালিয়ে যাওয়ায় অব্যাহত থাকবে এই লড়াই। পাশাপাশি, গেমটি ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছেন নিয়ন্ত্রকরা। সনি দাবি করছে, অ্যাক্টিভিশনের কল অফ ডিউটির মতো ফ্রাঞ্চাইজ তৈরি করা কঠিন হবে অন্যান্য গেম নির্মাতার জন্য, কারণ এটি নিজেই একটি ‘গেমিং ক্যাটেগরি’।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

মাইক্রোসফট এর প্রতিক্রিয়ায় বলছে যে প্রতিদ্বন্দ্বীরা একে যতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, এটি ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে বাস্তবতা এর মাঝামাঝি কোনো এক জায়গায় বলে ভার্জ এক প্রতিবেদনে জানায়। সিএডিই কে দেওয়া নথিতে মাইক্রোসফট উল্লেখ করেছে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো কনসোল স্টোরে ‘কল অফ ডিউটি’ না রাখলে তা কোম্পানির জন্য একেবারেই লাভজনক হবে না। সনিকে প্লে স্টেশনে ‘ডেথলুপ’ গেমের বিদ্যমান চুক্তি রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মাইক্রোসফট।

তবে, ‘রেডফল’ ও ‘স্টারফিল্ড’ গেম দুটো ‘এক্সবক্স’ এবং ‘পিসি এক্সক্লুসিভ’ হিসেবে এনেছে তারা। মাইক্রোসফট ও অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ডের চুক্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের কম্পিটিশন অ্যান্ড মার্কেটস অথরিটির বা সিএমএ আরও গভীর তদন্তের পেছনে ভূমিকা ছিল কল অফ ডিউটি গেম নিয়ে চলমান এই প্রতিযোগিতা। কল অফ ডিউটি গেম নিয়ে এক্সবক্স ও প্লেস্টেশনের লড়াই চলে আসছে যখন থেকে ফ্রাঞ্চাইজটি চালু হয়েছে। গেমটির আসল ঠিকানা এক্সবক্স হলেও ২০১৫ সালে প্লেস্টেশন ভক্তদের জন্য গেমের একটি ডাউনলোডএবল কনটেন্ট আনার চুক্তি সম্পন্ন করে সনি।

তদন্তের দ্বিতীয় পর্যায়ে যাচ্ছে ‘সিএমএ’, যেখানে একটি স্বাধীন প্যানেল সিদ্ধান্ত নেবে ‘কল অফ ডিউটি’ ও ‘ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ারক্রাফট’ এর মতো গেমে মাইক্রোসফটের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মের জন্য ক্ষতিকর হবে কি না। অ্যাক্টিভিশন ব্লিজার্ডের বিভিন্ন গেম প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মে না চালানোর কৌশল মাইক্রোসফটের জন্য লাভজনক হবে কেবল যদি ‘এক্সবক্স ইকোসিস্টেমে’ বিশাল সংখ্যক গেমার আকৃষ্ট করতে পারে গেমগুলো, যার ফলে প্রতিদন্দ্বী প্ল্যাটফর্মে এই সব গেম বিক্রি না করেও আয় করতে পারবে মাইক্রোসফট।

গেমটি এক্সবক্স এক্সক্লুসিভ হবে কি না তা নিয়ে ভয় আরও বেড়েছে গত বছর মাইক্রোসফটের ‘বেথেসডা’ অধিগ্রহনের পর। 

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.