Reading Time: 2 minutes

কোরিয়ান প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাং মঙ্গলবার ডিসেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে ৪.৩ ট্রিলিয়ন কোরিয়ান ওন বা সাড়ে তিনশ কোটি ডলার পরিচালন মুনাফা করেছে, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৬৯ শতাংশ কম। স্যামসাংয়ের ত্রৈমাসিক মুনাফা আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। আর এর মূল কারণ লোকজন আর আগের মতো মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ ক্রয়ে আগ্রহী নন। এক বিবৃতিতে স্যামসাং বলছে, রাজস্ব আয় ৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ওন বা পাঁচ হাজার সাতশ ৩০ কোটি ডলারে।

২০১৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের পর এটি কোম্পানির সবচেয়ে দুর্বল প্রান্তিক মুনাফা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সিএনএন। ওই বছর স্যামসাংয়ের  স্মার্টফোন ব্যবসা প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর কাছে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছিল। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে দুর্বল চাহিদার কারণে চতুর্থ প্রান্তিকে ব্যবসায়িক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য ক্ষতির কথা উঠে এসেছে স্যামসাংয়ের সর্বশেষ বিবৃতিতে। বিনিয়োগকারীদের কাছে দেওয়া প্রেজেন্টেশনেও এই শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স নির্মাতা মোবাইল এবং পিসির দুর্বল চাহিদার কথা বলেছে।

পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মেমরি চিপ ব্যবসাও। তবে, এই হতাশাজনক ফলাফলের ধারণা আগে থেকেই ছিল। এই মাসের শুরুতেই স্যামসাং প্রাক-উপার্জন পূর্বাভাসে দুর্বল ফলাফলের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল। সেখানে কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলেছিলেন মেমরি চিপের মূল্য হ্রাস এবং ডিভাইসে ভোক্তাদের কম অর্ডারের কথা। তবে, স্যামসাং বেশ কিছু পরিবর্তনের কথাও বলেছে। ২০২২ সালের পুরো বছরে এই জায়ান্ট ৩০২.২ ট্রিলিয়ন ওন বা ২৪ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার আয় করেছে, যা ২০২১ সালে ২৭৯.৬ ট্রিলিয়ন ওন বা ২২ হাজার ৭৪০ কোটি ডলারের চেয়ে বেশি এবং সর্বোচ্চ রেকর্ড।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মেমোরি চিপের দাম ক্রমাগত কমে যাওয়ায় চলতি প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ফের কমবে বলে তারা ধারণা করছেন। বৈশ্বিক এই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে এই ধারা আগামী মাসগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা প্রকাশ করেছে স্যামসাং। পাশাপাশি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সামগ্রিক চাহিদা ফের বাড়তে শুরু করবে বলে পূর্বাভাসও রয়েছে এতে। কোম্পানি জানায়, গভীর অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ক্রেতারা পুরোনো গ্যাজেট ব্যবহারই চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রধান অঞ্চলগুলোয় অর্থনৈতিক মন্দার কারণে স্মার্টফোনের চাহিদা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই ত্রৈমাসিকে ফের হ্রাস পেতে পারে। মঙ্গলবার সিউলে স্যামসাংয়ের শেয়ারের দাম কমেছে ৩ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

অন্যান্য স্মার্টফোন কোম্পানির বাজার সংকট

মুদ্রাস্ফীতির কারনে গত বছর সর্বমোট একশ ২১ কোটি স্মার্টফোনের শিপমেন্ট হয়েছে। আইডিসি বলছে, ২০১৩ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন বার্ষিক শিপমেন্ট এটিই। বছরে স্মার্টফোনের শিপমেন্ট কমেছে ১৮ দশমিক তিন শতাংশ। আর কোনো একক প্রান্তিকে সবচেয়ে বড় ধসের ঘটনা এবারই ঘটলো। বছরের শেষ প্রান্তিকে এ হার ১১ দশমিক তিন শতাংশ। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট আর্স টেকনিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের সেরা পাঁচ স্মার্টফোন বিক্রেতা কোম্পানি হলো অ্যাপল, স্যামসাং, শাওমি, ওপো ও ভিভো। 

১৮ দশমিক আট শতাংশ শেয়ার নিয়ে অ্যাপলের অবস্থান দ্বিতীয়। আর ১২ দশমিক সাত শতাংশ শেয়ার নিয়ে তৃতীয় স্থান দখল করেছে শাওমি। এই ধসের সবচেয়ে কম প্রভাব পড়েছে অ্যাপলের ওপর। চতুর্থ প্রান্তিকে এই আইফোন নির্মাতা কোম্পানির বিক্রি কমেছে ১৪ দশমিক নয় শতাংশ। তবে, সাড়ে ২৬ শতাংশ বিক্রি কমায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে শাওমি। আইডিসি জানায়, ২০২৩ সাল একটি সতর্কতার বছর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে কারণ বিক্রেতারা নিজেদের ডিভাইসের পোর্টফোলিও পুনর্বিবেচনা করবে।

আর সরবরাহের চ্যানেলগুলোও অতিরিক্ত পণ্য মজুদের আগে দুবার চিন্তা করবে। এছাড়াও বিশ্লেষক কোম্পানি কাউন্টারপয়েন্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ অর্থবছরে চীনের স্মার্টফোন শিপমেন্ট কমেছে ১৪ শতাংশ। এর ফলে, গত ১০ বছরে সবচেয়ে কম স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে চীনে। এক দশক রাজত্বের পর কোভিড মহামারীর কারণে স্মার্টফোন বিক্রি কমেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ চীনের বাজারে। গত তিন বছরে চীনের জিরো কোভিড নীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশটির ব্যবসায়িক খাতে ব্যাঘাত ঘটেছে।

এমনকি ডিসেম্বরে ঐতিহাসিকভাবে মৌসুমগত বিক্রি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা দেখা গেলেও, এবারের প্রান্তিকে চীনের স্মার্টফোন শিপমেন্ট কমেছে পাঁচ শতাংশ। গত বছর চীনের জিডিপি বেড়েছে তিন শতাংশ, যা দশকের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। নভেম্বরে ই-কমার্স সাইট আলিবাবার বার্ষিক শপিং বোনাঞ্জায় চীনের ব্যয় ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। আয়োজনটি তুলনা করা হয় ব্ল্যাক ফ্রাইডের সঙ্গে। আর এটি দেশটিতে ভোক্তাদের চাহিদা মেটানোর সম্মুখসারীর জায়গা হিসেবে বিবেচিত।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.