Reading Time: 3 minutes

গত বছরের মত এ বছরেও প্রযুক্তি পণ্য হিসেবে স্মার্টফোন, পিসির বাজারে বাজে ফলাফল দেখা গিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এবারও ধস নামতে পারে ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের বাজারে। রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, এটি ২০০৯ সালের সরবরাহ সংখ্যার কাছাকাছি। সে সময় ফোনের বাজারে ব্ল্যাকবেরি ও নকিয়ার নেতৃত্ব থাকলেও অ্যাপল তাদের একচেটিয়া রাজত্বে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর মঙ্গলবার এই সম্ভাব্য ধসের কথা জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণা কোম্পানি গার্টনার

তাদের অনুমান বলছে, এই বছর মোবাইল ফোনের সরবরাহ ২০২২ সালের একশ ৪০ কোটি ইউনিট থেকে চার শতাংশ কমে গিয়ে ঠেকতে পারে একশ ৩৪ কোটি ইউনিটে। গার্টনারের হিসাবে ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল একশ ৪৩ কোটি ইউনিট। ২০১৫ সালে একশ ৯০ কোটি ইউনিটের সরবরাহ স্পর্শ করে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছিল মোবাইল ফোনের বাজার। গার্টনারের গবেষণা পরিচালক রনজিত আতওয়াল এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কোভিড মহামারী এমন এক মৌলিক পরিবর্তনের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যেখানে বাসা থেকে কাজ করা লোকজনের ঘন ঘন ফোন বদলানোর প্রবণতা বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, গ্রাহকরা প্রত্যাশার চেয়ে দীর্ঘ সময় অর্থাৎ ছয় থেকে নয় মাস পর্যন্ত বাড়তি সময় পুরোনো ফোন ধরে রাখছেন। নতুন কোনো অর্থপূর্ণ প্রযুক্তির অনুপস্থিতিতে তারা নির্দিষ্ট সেবা প্যাকেজের বদলে নমনীয় প্যাকেজের দিকে গিয়েছেন। গার্টনার আরও বলছে, ২০২২ সালে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সরবরাহ ১৬ শতাংশ কমলেও এই বছর তা কমতে পারে ছয় দশমিক আট শতাংশ পর্যন্ত। বর্তমানে সেরা তিন পিসি নির্মাতা কোম্পানি হলো লেনোভো, এইচপি ও ডেল।

গার্টনার বলেছে, ডিভাইস বাজারে মন্দার কারণে ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রত্যাশার পাশাপাশি ভোক্তা ও ব্যবসায়িক খরচ বৃদ্ধির গতিও তুলনামূলক কমে আসবে।  মহামারী চলাকালীন স্মার্টফোন ও পিসির চাহিদা প্রাথমিকভাবে বাড়লেও গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে এটি ফের কমতে শুরু করে। বৈশ্বিক সুদের হার ও জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় স্মার্টফোনের চাহিদা ব্যপক হারে কমেছে। এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে স্যামসাং থেকে শুরু করে অ্যাপলের মতো কোম্পানিতেও।

চীনে স্মার্টফোন বাজারে সবচেয়ে বড় ধস

বিশ্লেষক কোম্পানি কাউন্টারপয়েন্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ অর্থবছরে চীনের স্মার্টফোন শিপমেন্ট কমেছে ১৪ শতাংশ। এর ফলে, গত ১০ বছরে সবচেয়ে কম স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে চীনে। এক দশক রাজত্বের পর কোভিড মহামারীর কারণে স্মার্টফোন বিক্রি কমেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ চীনের বাজারে। গত তিন বছরে চীনের জিরো কোভিড নীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশটির ব্যবসায়িক খাতে ব্যাঘাত ঘটেছে।

ফলে, ভোক্তাদের আস্থাও কমে গেছে। এতে চীনের দুই অংকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিরও সমাপ্তি ঘটেছে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। ডিসেম্বরের শুরুতে কোভিড-১৯ বিধিনিষেধে আকস্মিকভাবে শিথিল করার পর আক্রান্তের সংখ্যা সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে, দেশটির অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়তে থাকে। আরেক বিশ্লেষক কোম্পানি ক্যানালিস বলছে, গত ১০ বছরে চীনের স্মার্টফোন বিক্রি ৩০ কোটি ইউনিটের নীচে নেমে যাওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

এমনকি ডিসেম্বরে ঐতিহাসিকভাবে মৌসুমগত বিক্রি বেড়ে যাওয়ার ঘটনা দেখা গেলেও, এবারের প্রান্তিকে চীনের স্মার্টফোন শিপমেন্ট কমেছে পাঁচ শতাংশ। গত বছর চীনের জিডিপি বেড়েছে তিন শতাংশ, যা দশকের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। নভেম্বরে ই-কমার্স সাইট আলিবাবার বার্ষিক শপিং বোনাঞ্জায় চীনের ব্যয় ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। আয়োজনটি তুলনা করা হয় ব্ল্যাক ফ্রাইডের সঙ্গে। আর এটি দেশটিতে ভোক্তাদের চাহিদা মেটানোর সম্মুখসারীর জায়গা হিসেবে বিবেচিত।

২০০৯ সালে চালুর পর এই প্রথম আয়োজকরা এর চূড়ান্ত বিক্রি সংখ্যা প্রকাশ করেনি। এই ঘোলাটে সময়েও এক প্রযুক্তি জায়ান্ট রাজত্ব করেছে দেশটিতে। ক্যানালিসের তথ্য অনুসারে, নিজেদের আগ্রাসী প্রচারণা ও ব্যাপক চাহিদার কারণে চীনে রেকর্ড ১৮ শতাংশ শেয়ার বেড়েছে অ্যাপলের। যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন উচ্চমাত্রার চিপসেট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রিমিয়াম স্মার্টফোন বাজারে হুয়াওয়ের পতনের ঘটনাও এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে। ডিসেম্বরের শুরুতে মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে উঠে আসে, নিজেদের কিছু সংখ্যক সরবরাহ চেইন চীন থেকে বদলে ভিয়েতনাম ও ভারতসহ এশিয়ার অন্যান্য জায়গায় নেওয়ার পরিকল্পনা করছে অ্যাপল।

বিশেষ করে ভারত, অ্যাপলের সরবরাহ চেইনে তুলনামূলক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি জে.পি মরগ্যানের বিশ্লেষকদের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সাল নাগাদ বৈশ্বিক আইফোনের ২৫ শতাংশ এই দেশে উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে অ্যাপল। চতুর্থ প্রান্তিকে, চীনে শিপমেন্ট পাঠানো শীর্ষ স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো হলো অ্যাপল, ভিভো, ওপ্পো, অনর যেটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর হুয়াওয়ে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ও শাওমি। চীনের সঙ্গে অ্যাপলের সম্পর্ক এখনও স্পর্শকাতর।

দেশটি কেবল আইফোনের অন্যতম বৃহৎ বাজারই নয়, বরং এখানে আইফোন উৎপাদনের কারণেই এখন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানির অবস্থানে পৌঁছেছে অ্যাপল। গত কয়েক বছরে ফক্সকনের কারখানা কর্মীদের আন্দোলন ও কোভিড সম্পর্কিত বিভিন্ন বাধার কারণে দেশটিতে আইফোন উৎপাদনের গতি কমে গিয়েছে। ফলে, এটি অ্যাপলকে নিজেদের সরবরাহ চেইন সংশ্লিষ্ট কৌশল বদলাতে বাধ্য করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চ।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.