৯৬ বছরের জীবনে তার চোখের সামনেই এ পৃথিবীর নানা পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে, প্রযুক্তির আগমন মানুষের জীবন আর জীবন সম্পর্কে ধারণাকেই পাল্টে দিয়েছে। নতুন সেসব ধারণা আর উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকেও যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় রানী এলিজাবেথ সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছেন। ব্রিটিশ সিংহাসনের অধিকারী হিসেবে প্রায় সাত দশক রাজপরিবারের ঐতিহ্যকে তিনি সুরক্ষিত রেখেছিলেন, কিন্তু তাই বলে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে সেকেলে বলার কোন সুযোগ নেই।
ইন্টারনেটের ভাবনা যখন আঁতুর ঘরে, তখনই নিজের প্রথম ইমেইলটি পাঠিয়েছিলেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এছাড়াও ফটো ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে শুরু করে মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম টুইটারেও তার উপস্থিতি ছিল। সত্তরের দশকের প্রথমভাগেই আরপানেট যা পরবর্তিতে ইন্টারনেটে পরিণত হয় সেটি সংযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ডের টেলিযোগাযোগ গবেষণা সংস্থা রয়্যাল সিগনালস অ্যান্ড রেডার এসটাবলিশমেন্ট। আর সেই আরপানেট সংযোগ ব্যবহার করেই ১৯৭৬ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ নিজের প্রথম ইমেইল পাঠিয়েছিলেন।
সে সময়ে রানীকে ইমেইল বার্তা পাঠাতে সহযোগিতা করেছিলেন পিটার কার্স্টেইন। রানীর ইউজার নেইম ‘এইচএমই২ (HME2)’ বানিয়ে দিয়েছিলেন উক্ত ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী। যার পুরো মানে ছিল “হার ম্যাজেস্টি, এলিজাবেথ টু”।
টেলিভিশনে দেখা রানীর প্রথম অভিষেক
১৯৫৩ সালে দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্রিটিশ সিংহাসনে অভিষিক্ত হওয়ার সময়কার এক অনুষ্ঠান টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছিল, যা ছিল ব্রিটিশ রাজ পরিবারের জন্য প্রথম। রাজ পরিবারের নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, সে সময় কেবল যুক্তরাজ্যেই দুই কোটি ৭০ লাখ মানুষ টেলিভিশনে অনুষ্ঠানটি দেখেছিলেন।
গুগল হেড কোয়ার্টার গমন
২০০৮ সালেই প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের হেড কোয়ার্টারে বেড়াতে গিয়েছিলেন রানী এলিজাবেথ। ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফের তথ্য বলছে, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ আর প্রিন্স ফিলিপকে এক শিশুর হেসে লুটোপুটি খাওয়ার ভাইরাল ভিডিও দেখিয়েছিলেন গুগল কর্মীরা। সে ভিডিও দেখে নাকি নিজেদের হাসি ধরে রাখতে পারেননি তারা। আর সেই ভ্রমণের ভিডিও নিজেদের ইউটিউব পেজে ব্রিটিশ রাজ পরিবার শেয়ার করেছিল।
প্রথম টুইট
২০১৪ সালে টুইটারে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার প্রথম টুইটটি করেন। লন্ডন সায়েন্স মিউজিয়ামের এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে রানী সেই টুইটে লিখেছিলেন, আজ সায়েন্স মিউজিয়ামের ইনফর্মেশন এজ প্রদর্শনীর উদ্বোধন তাকে আনন্দ দিয়েছে। আর তিনি আশাবাদী যে মানুষ এটা উপভোগ করবে।
বড়দিনের শুভেচ্ছায় থ্রিডি প্রযুক্তি
২০১২ সালে বড়দিনের শুভেচ্ছা বার্তা রেকর্ড করার সময় ব্যতিক্রমী কিছু করার ইচ্ছে হয়েছিল রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের। প্রতিবছরই বড়দিন উপলক্ষে রানী এলিজাবেথকে দেশের নাগরিকদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে হত। তারপর তখনকার রানীর বড়দিনের শুভেচ্ছা বার্তায় থ্রিডি প্রযুক্তিতে রেকর্ড করা হয়। পুরো বিষয়টি রানীর খুবই ভালো লেগেছিল বলে বিবিসিকে জানিয়েছিলেন বাকিংহ্যাম প্যালেসের এক মুখপাত্র।
অন্যান্য প্লাটফর্মে তার উপস্থিতি
রানী এলিজাবেথ ফটো শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইনস্টাগ্রামে রাজ পরিবারের অ্যাকাউন্টে তার প্রথম পোস্টটি দিয়েছিলেন ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। সেবারও লন্ডন সায়েন্স মিউজিয়ামে ছিলেন তিনি। প্রিন্স অ্যালবার্টের উদ্দেশ্যে ডিজিটাল কম্পিউটার ধারণার প্রবর্তক চার্লস ব্যাবেজের লেখা একটি চিঠির ছবি পোস্ট করে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী খাতে লন্ডনের বিজ্ঞান জাদুঘরের ভূমিকার প্রশংসা করেছিলেন রানী এলিজাবেথ।