সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের বাজার পর্যবেক্ষক সংস্থা মোবাইল ব্রাউজার বাজারে অ্যাপল ও গুগলের অধিপত্য তদন্ত করে দেখবে বলে জানিয়েছেন। সেই সাথে অ্যাপ স্টোরের মাধ্যমে ক্লাউড গেইংমিংয়ের ওপর আইফোন নির্মাতার নিষেধাজ্ঞা তদন্তের মুখে পড়ছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে যে বাজার পর্যবেক্ষক সংস্থাটি দুই প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল ও গুগলের বিরুদ্ধে মোবাইল ব্রাউজারের বাজারে কার্যত ডুওপলি চালানোর অভিযোগ তুলেছে। গুগলের অ্যাপ স্টোরের লেনদেন কৌশলের বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা শুক্রবারেই জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সিএমএ (কম্পিটিশন অ্যান্ড মার্কেটস অথরিটি)।
পর্যবেক্ষক সংস্থাটি উদীয়মান ক্লাউড গেইমিং খাতে অ্যাপলের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছে। ভালো মানের গেইমগুলো সরাসরি ডিভাইসে ডাউনলোড না করে স্ট্রিম করে খেলার সুযোগ দেয় এই প্রযুক্তি। তবে গুগল দাবি করছে, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম নির্ভর স্মার্টফোনগুলো ব্যবহারকারী এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় বেশি সুযোগ দিচ্ছে এবং লাখ-লাখ অ্যাপ তাদের ‘গুগল প্লে’ অ্যাপ স্টোরের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছে। গুগল সিএমএ এর প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সংস্থাটির সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে।
এ প্রসঙ্গে সিএমএ বলছে এই খাতটিকে বড় হতে না দিয়ে অ্যাপল মোবাইল ব্যবহারকারীদের ক্লাউড গেইমিংয়ের সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় ফেলছে। সিএমএ আরো বলছে যে তদন্তে তাদের শঙ্কাগুলো আরও ভালোভাবে যাচাই করে দেখা হবে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে আইনি বিধিনিষেধ আসতে পারে গুগল ও অ্যাপলের ওপর, যার ফলে নিজেদের ব্যবসা কৌশল পরিবর্তনে বাধ্য হতে পারে উভয় প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে অ্যাপলের দাবি, নিজস্ব ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে কোম্পানিটি ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করেছে যা তারা ভালোবাসেন এবং নির্মাতাদের জন্য বড় ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি করছে।
কোম্পানি ঝামেলা ছাড়াই প্রতিবেদনে টানা উপসংহারের সঙ্গে অসম্মতি জানায়। তাদের দাবি এটি উদ্ভাবনী খাতে তাদের বিনিয়োগ, গোপনীয়তা এবং ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাকে খাটো করে দেখছে, যার কারণে ব্যবহারকারীরা আইফোন এবং আইপ্যাডকে ভালোবাসেন। এর মাধ্যমে ছোট ছোট নির্মাতারা একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মের সমতল মাঠে প্রতিযোগিতার সুযোগ পান। অ্যাপল আরও বলেছে গঠনমুলক প্রক্রিয়ায় সিএমএ’র সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাবেন তারা এবং ব্যবহারকারী গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের পদক্ষেপগুলো প্রতিযোগিতার প্রসারে কি ভাবে ভূমিকা রাখছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।
এদিকে সিএমএ বলছে, ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যে মোবাইল ওয়েব ব্রাউজারের যতো ব্যবহার হয়েছে তার ৯৭ শতাংশ অ্যাপল অথবা গুগলের ব্রাউজার ইঞ্জিন নির্ভর ছিল। নিজস্ব মোবাইল ব্রাউজারের বিকল্প অন্য কোনো অ্যাপের ব্যবহার অ্যাপল নিষিদ্ধ করে রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিযোগী ব্রাউজারগুলোর অ্যাপল পণ্যের তুলনায় নিজেদের স্বকীয়তা উপস্থাপনার সুযোগ সীমিত হয়ে আসে বলে আশঙ্কা করছে তারা সিএমএর প্রধান নির্বাহী আন্দ্রিয়া কোচেল্লি বলেন, মানুষ কীভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিলে, সব কার্ডই অ্যাপল ও গুগল হাতে।
তাদের পণ্য ও সেবাগুলো যতোই ভালো হোক না কেন, মোবাইল ইকোসিস্টেমের ওপর শক্ত নিয়ন্ত্রণের কারণে তারা প্রতিযোগিতার পথ বন্ধ করার সুযোগ পাচ্ছে। এতে ব্রিটিশ প্রযুক্তি খাত পিছিয়ে পড়ছে এবং গ্রাহকদের পছন্দ মতো সেবা বাছাইয়ের সুযোগ কমে যাচ্ছে।