৩০শে নভেম্বরের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম এবং ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশে কেবল টিভির গ্রাহকদের টিভির সাথে সেট টপ বক্স লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য এবং সম্প্রচারমন্ত্রী হাসান মাহমুদ। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেট টপ বক্স না লাগালে কেবল টিভি দেখতে সমস্যা হবে। তিনি জানিয়েছেন যে কেবল নেটওয়ার্ক ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হওয়ায় এসব শহরের গ্রাহকদের সেট-টপ বক্স ব্যবহার করতে হবে। নয়ত স্যাটেলাইট টেলিভিশন দেখায় সমস্যা হবে। গত ৩১ অক্টোবর সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওউনার্স (অ্যাটকো), চ্যানেল ডিস্ট্রিবিউটর ও কেবল অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিদের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
সেট টপ বক্স সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি এবং জানি না। সেট-টপ বক্স হচ্ছে এক ধরনের রিসিভার যেটি কেবল টিভির গ্রাহক প্রান্তে থাকে। এই রিসিভার অ্যানালগ সিগন্যালকে ডিজিটাল সিগন্যালে রূপান্তর করে। যার ফলে এতে গ্রাহক ঝকঝকে ছবি দেখার সাথে ভালো মানের শব্দ ও উপভোগ করতে পারেন। যদি গ্রাহকরা ৩০শে নভেম্বর বা ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের টিভির সাথে সেট টপ বক্স যুক্ত না করে তাহলে তাদের কেবল সংযোগ থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রচার) খাদিজা বেগম বলেন যে যখন একটা সিস্টেম অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল করা হবে তখন দর্শকদেরকে সেই সিস্টেমের মধ্যে আসতে হবে। এটা বাধ্য করার কোন বিষয় না। তিনি আরো বলেন সরকার যেহেতু সব ক্ষেত্রকে ডিজিটালাইজ করছে তার সেহেতু এটিও ডিজিটালাইজের একটি অংশ।
কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)-এর সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বলছেন সেট টপ বক্স নিতে হলে তাদের কাছ থেকেই নিতে হবে। তিনি বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন যে একজন গ্রাহক যেখান থেকে কেবল সংযোগ নিয়েছেন তাদের কাছ থেকেই সেট টপ বক্স নিতে হবে। ঐ প্রতিষ্ঠানকে আবার কোয়াবের কাছ থেকে এই সেট টপ বক্স নিতে হবে। এর বাইরে কোন স্থান থেকে কেনা যাবে না। তিনি আরো বলেছেন যে ৯৫ শতাংশ সেট টপ বক্স চীন থেকে আমদানি করা হয়। বাংলাদেশে কোন সেট টপ বক্স প্রস্তুত করা হয় না। এ বিষয়ে আবার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদিজা বেগম বলেন যে সেট টপ বক্স একজন দর্শক যে কোন স্থান থেকে কিনে তার ঘরের টেলিভিশনের সঙ্গে লাগাতে পারেন। সেট টপ বক্স কেনার জন্য একক কোন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
কারা এই সেট টপ বক্স আনবে এমন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে কেবল লাইন সংযোগের জন্য এলাকা ভেদে ভিন্ন ধরনের দাম নির্ধারণ করা হয় বলে জানা গেছে। কোয়াবের সভাপতি বলছেন যে দেশে কত কেবল গ্রাহক আছে তার কোন হিসেব নেই। কোয়াব বলছে যে একটি সেট টপ বক্সের দাম সর্বনিম্ন ১৬শ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। তবে আনুমানিক দেড় কোটি গ্রাহক থাকলে এই দেড় কোটি সেট টপ বক্স আমদানি করতে প্রায় তিন কোটি টাকা এবং ১২০ দিনের মত সময় লাগবে। এই বিষয়ে কোয়াব এর সভাপতি পারভেজ বলেন যে সময় এবং অর্থ কোনটাই তাদের হাতে নেই। তিনি সরকারের কাছে সময় আরো বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার অনুরোধ করেছেন।
তবে এই ঋণটা দীর্ঘমেয়াদী নয়, বরং ২৪ মাসের মধ্যেই তিন ঋণ শোধ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এসব কিছু নিয়ে আলোচনার জন্য এই মাসেই সরকারের সাথে তারা আরেকটা বৈঠকে বসবেন বলে তিনি জানান। সরকার এবং কেবল অপারেটর প্রতিনিধিরা বল ছেন এই সুবিধা গ্রাহক অর্থাৎ দর্শক, সরকার এবং কেবল অপারেটর সবাই পাবে। গ্রাহক যারা তারা এইচডি (হাই ডেফিনিশন) কোয়ালিটির পরিচ্ছন্ন অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন। বিদেশী চ্যানেলের ক্লিন ফিড বা বিজ্ঞাপন ছাড়া অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন। পছন্দ মত অনুষ্ঠানের পাশপাশি চ্যানেলের তালিকা তৈরি করা হবে, যাতে করে দর্শক তার পছন্দের অনুষ্ঠান বা চ্যানেল সহজেই দেখতে পাবেন। অপারেটর যারা পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কেবল সংযোগ দেন, সেসব অপারেটরদের কাছ থেকে কোয়াব একটা তালিকা পাবে।
কোয়াব সভাপতি বলেন যে অনেকে আছেন যারা ২০টা বাসায় কেবল সংযোগ দেন কিন্তু আমাদের বলেন ১০টা বাসা। এক্ষেত্রে সেটা তারা করতে পারবে না। কারণ সেট টপ বক্স নিলে প্রক্রিয়াটা অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল হবে। যার ফলে কোন এলাকায় কতজন কেবল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন সেটা জানার পাশাপাশি কোন রকম অর্থ ফাঁকি দেয়ার সুযোগ ও থাকবে না। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী সেট টপ বক্সের সুবিধা বিষয়ে বলেছেন যে সেট টপ বক্স সংযুক্ত করার ফলে সরকার কেবল অপারেটরদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারবে। টাকার অংকে সেটি প্রতিমাসে প্রায় দেড় কোটি টাকার মত হবে।