Reading Time: 3 minutes

প্রায় সমস্ত আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নতুন সতর্কতার সংকেত দেয়া হয়েছে, কারণ ফেসবুক গোপনে ব্যবহারকারীদের সংবেদনশীল ডেটা সংগ্রহ করছে যাতে কেউ বুঝতে না পারে। আরও বিরক্তিকর বিষয় হচ্ছে অ্যাপটি মুছে ফেলা ছাড়া এরকম আক্রমণাত্মক ট্র‍্যাকিং বন্ধ করার বিকল্প কোন উপায় নেই। আইফোন ব্যবহারকারীদের যদিও পূর্বেই সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে ফেসবুক এখনো তাদের ফটো এবং আইপি ঠিকানা থেকে মেটাডেটা ব্যবহার করে অবস্থানের ডেটা ক্যাপচার করে যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্যবহারকারীরা তাদের অবস্থান সেটিংস এর “কখনোই না” বাছাই করেন। ব্যবহারকারীরা অবস্থান ট্র‍্যাক করার অপশনটি বন্ধ রাখার কারনে ফেসবুক তাদের নিজস্ব অবস্থান অপশনটি চালু করে।

ফেসবুক এই বিষয়টি স্বীকার করেছে যে তারা ব্যবহারকারীর অবস্থান ট্র‍্যাক করে, কিন্তু এতে যে ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি ক্ষুন্ন হচ্ছে এটি তারা এখনো স্বীকার করেনি। বর্তমানে নিরাপত্তা গবেষকরা সতর্ক করেছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইফোনে অ্যাক্সেলারোমিটার ব্যবহার করে তাদের গতিবিধির একটি ধ্রুবক স্ট্রিম ট্র‍্যাক করতে ব্যবহার করে। যা ব্যবহারকারীর বিভিন্ন জায়গায় ইন্টার‍্যাক্ট করার সময় তাদের কার্যকলাপ বা আচরণগুলি নিরীক্ষণ করতে সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে পরিষেবাগুলির সাথে। উদ্বেগজনকভাবে, এই ডেটা এমনকি আপনার কাছের লোকেদের সাথেও মিলতে পারে, যাদের আপনি তাদের চেনেন বা না চেনেন। ছবির অবস্থানের ডেটার মতোই এখানে সবচেয়ে গুরুতর সমস্যাটি হলো এর কোনও স্বচ্ছতা নেই।

ডেটা ট্র‍্যাকিং এর সময়ে ফেসবুক থেকে কোন প্রকার সতর্ক সংকেত দেয়া হয় না, এমনকি ট্র‍্যাকিং চালু কিংবা বন্ধ করার ও কোন সেটিংস নেই। প্রকৃতপক্ষে, ফেসবুক থেকে ট্র‍্যাকগুলি বন্ধ করার কোন উপায় নেই। গবেষক তালাল হজ বেকরি এবং টমি মাইস্ক সতর্ক করে বলেছেন যে ফেসবুক সব সময় অ্যাক্সেলারোমিটার দ্বারা ডেটা সংগ্রহ করে। ব্যবহারকারীরা যদি ফেসবুককে তাদের অবস্থান অ্যাক্সেসের অনুমতি না দেন, তারপরও অ্যাপটি তাদের সঠিক অবস্থান অনুমান করতে পারে আর সেটি অ্যাক্সোলোমিটার ব্যবহারের মাধ্যমেই। গবেষকরা বলেছেন যে সমস্যাটি ফেসবুক সহ ইন্সটাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপকেও প্রভাবিত করছে। যদিও হোয়াটসঅ্যাপে বৈশিষ্ট্যটি বন্ধ করা সম্ভব এবং তারা এটিও আশ্বস্ত করেছে যে কোন ডেটাই ব্যবহারকারীর ডিভাইস ছেড়ে যায় না।

গবেষকরা এটিও বলেছেন যে অ্যাপটি কেন অ্যাক্সোলোমিটার পড়ছে সেটি তারা স্পষ্ট নয়। এমনকি এটি বন্ধ করার কোন উপায় ও তারা খুঁজে পাননি। এটি দ্বারা তারা বুঝিয়েছেন যে ব্যবহারকারীদের অ্যাপটি মুছে ফেলতে হবে নয়তো অন্য কোন ব্রাউজারের মাধ্যমে ফেসবুকে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। ফেসবুকের এরকম অগ্রহনযোগ্য কাজ দেখার পর কিছু গবেষক জানান যে তারা উইচ্যাট, আইম্যাসেজ, টেলিগ্রাম এবং সিগ্নাল পরীক্ষা করে দেখেছেন এবং জানিয়েছেন এই অ্যাপগুলি কোনো প্রকার ডেটা সংগ্রহ করে না। আইফোন সোশ্যাল মিডিয়া ইনস্টলে ফেসবুকের প্রাধান্য থাকায় এটি সারা বিশ্বের প্রায় বিলিয়ন-প্লাস আইফোন ব্যবহারকারীদের প্রভাবিত করবে।

ফেসবুক নিশ্চিত করেছে যে তারা শেক-টু-রিপোর্টের মত বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য অ্যাক্সোলোমিটার দ্বারা ডেটা সংগ্রহ করে এবং ৩৬০ ডিগ্রি ফটো বা ক্যামেরার জন্য চারপাশে প্যান করা নিশ্চিত করতে পারে। যদিও অ্যাক্সেলারোমিটার ডেটা গবেষকদের কাছে নিরীহ বলে মনে হয়েছে। অ্যাপগুলি ব্যবহারকারীর হৃদস্পন্দন, নড়াচড়া এবং এমনকি সুনির্দিষ্ট অবস্থানও বের করতে সক্ষম। আরও বিরক্তিকর বিষয় হচ্ছে সম্পূর্ণ বিনা অনুমতিতে অ্যাপটি এই সেন্সরের পরিমাপ পড়তে পারে, তবে অ্যাপ এটি ব্যাখ্যা করে না কেন আপনার গতিবিধি ক্রমাগত ট্র্যাক করা হয়। ফেসবুকের জন্য সহজ হবে শুধুমাত্র প্রয়োজনে অ্যাক্সেলারোমিটারে ট্যাপ করা।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

শেক টু রিপোর্ট ফাংশনের জন্য ফেসবুক অ্যাপলের কার্যকারিতা ব্যবহার করে এটি কতটা ডেটা টানছে তা সীমিত করতে পারে কিন্তু ফেসবুক তা করে না। গবেষকরা এই ধরনের ডেটা কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তা দেখানোর জন্য একটি বাস ভ্রমণের উদাহরণ উদ্বৃত্ত করেছেন। তারা ব্যাখ্যা করেছেন যে যদি একজন বাসে থাকেন এবং আরেকজন যাত্রী ফেসবুকের সাথে তাদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান শেয়ার করেন তবে ফেসবুক সহজেই বলতে পারবে যে যাত্রীর মতো সেও একই অবস্থানে আছেন। তবে উভয় কম্পন প্যাটার্ন অভিন্ন হতে পারে। ফেসবুকের একটি পেটেন্টকৃত অ্যাপ্লিকেশন প্রযুক্তি রয়েছে যার মাধ্যমে ওয়্যারলেস সংযোগ ব্যবহার করে এক ব্যবহারকারী হতে আরেক ব্যবহারকারীর দূরত্ব জানতে পারে।

ফেসবুক সব সময় অ্যাক্সেলারোমিটার পড়ে কিন্তু ইনস্টাগ্রাম কেবল তখনই এটি পড়ে যখন ব্যবহারকারী সরাসরি কোনো টেক্সট করে। এছাড়াও, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ওয়ালপেপার অ্যানিমেট করতে ডিফল্টরূপে অ্যাক্সেলারোমিটার ব্যবহার করে। সুতরাং, অ্যাক্সোলোমিটার এই তিনটি অ্যাপকে একসাথে রাখে, ব্যবহারকারীদের মধ্যে কম্পনের ধরণগুলির সাথে মিলে যাচ্ছে কিনা সেটি পরীক্ষা করে। এটি আরো খারাপ হতে পারে এবং পারমিশন সেন্সর ব্যবহার করে এরকম অব্যবহার রোধ করা প্রয়োজন। ফেসবুক হল একটি ট্রিলিয়ন-ডলারের সাম্রাজ্য যা ডেটার উপর নির্মিত এবং এটি ডেটাভার্সের মতো এতটা মেটাভার্স নয়। কোম্পানী যদি এই ডেটা ব্যবহার করতে পারে, ফেসবুক অবশ্যই এই ডাটাগুলি তাদের লাভের জন্য অপব্যবহার করবে।

আইওএস এ ফেসবুকের প্রাইভেসি লেভেল দেখলেই বোঝা যায় যে ফেসবুক কতটুকু তথ্য আপনার থেকে সংগ্রহ করতে পারে। যদিও ফেসবুক এর প্ল্যাটফর্ম এবং পরিষেবাগুলি থেকে ডেটাগুলি সংগ্রহ করে কিন্তু মাঝে মধ্যে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমেও ডেটা সংগ্রহ করে থাকে। ব্যবহারকারীর সকল কোন প্রকার তথ্যই নষ্ট কিংবা মুছে ফেলা হয় না। গবেষক মিস্ক এবং হজ বার্কির কাছে এই ধরনের গোপনীয়তা প্রকাশের জন্য ফর্ম রয়েছে। তারা আইওএস ক্লিপবোর্ডের সমস্যাটি আবিষ্কার করেছে যেটি শেষ পর্যন্ত অ্যাপলকে তার সেটিংস পরিবর্তন করতে এবং একটি ক্লিপবোর্ড সতর্কতা প্রদান করতে প্ররোচিত করেছিল, যা বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড ১২ কে একই কাজ করতে পরিচালিত করেছে। অ্যাপলের এখানে আরো কাজ করতে হবে যদিও অ্যাপল আগে কার্যত কিছুই করেনি।

অ্যাক্সেলারোমিটারটি সকলের জন্য বিনামূল্যের হওয়া উচিত নয়, যখন ফেসবুক এর মতো ডেটা জায়ান্টরা এটিকে তাদের অ্যালগরিদমগুলিতে ফিড করার জন্য, সামাজিক গ্রাফ তৈরি করতে এবং অবস্থান, আচরণগুলি ট্র্যাক করার জন্য এটিকে আরেকটি ডেটা পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করতে পারে৷ গবেষকদের মতে, ব্যক্তিগত এবং অনন্য সমস্ত ডেটা সংবেদনশীল হিসাবে দেখা উচিত এবং অবশ্যই সুরক্ষিত করা উচিত। অন্যান্য বিরক্তিকর ডেটা ট্র্যাকিংয়ের সাথে এই অনুমতিটি সীমাবদ্ধ করা দরকার, বিশেষ করে যদি ব্যবহারকারীরা আগে এই তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে তা জানতেন না। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে সচেতনতা, যেটি এখানে অনুপস্থিত।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.