Reading Time: 5 minutes

আজকাল বিভিন্ন ওয়েবসাইট, অনলাইন অ্যাপের সুরক্ষার জন্যে পাসওয়ার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যক্তি কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যেটি যেকারো ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের বা আপনার একাউন্ট এর সকল তথ্য, দরকারী বিষয়বস্তু সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে কাজে লাগে। আর যেমন তেমন পাসওয়ার্ড দিলেই যে তথ্য সুরক্ষিত রাখা সম্ভব তা কিন্তু নয়। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে পাসওয়ার্ড ও আপনাকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত যেন সেই পাসওয়ার্ড ভেঙ্গে প্রবেশ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।

পাসওয়ার্ড হল এমন একটি পদ্ধতি কিংবা কোড যেখানে আপনার বিপুলসংখ্যক তথ্য বা ডাটা থাকবে সেখানে কয়েকটি ডিজিট বা অক্ষর ব্যবহারের মাধ্যমে সেই ডাটাগুলোকে লক করে রাখা হয়। যখনই আপনি পাসওয়ার্ড সম্বলিত কোন তথ্যে প্রবেশ করতে চাইবেন তখন খালি বক্সের মত আইকন আপনার চোখে পড়বে এবং সেখানে পাসওয়ার্ড প্রদানের মাধ্যমে আপনার প্রবেশের অনুমতি চাইবে।

পাসওয়ার্ড যেসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়

বর্তমানে অনলাইন জগতের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পাসওয়ার্ড এর প্রয়োজন হয়। যেকোন ওয়েবসাইট কন্ট্রোল করতে সেই ওয়েবসাইটে পাসওয়ার্ড ব্যবহারে দরকার পড়ে।  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, রেডিট একাউন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুরক্ষার বিষয় মাথায় রেখে ব্যবহারকারীকে অবশ্যই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়। এছাড়াও ইমেল, গুগল একাউন্টে পাসওয়ার্ড ব্যবহারের দরকার পড়ে। এছাড়াও মোবাইল ফোনের স্ক্রিন লকের ক্ষেত্রে নাম্বার পাসওয়ার্ড ব্যবহারের দরকার হয়। এখনকার প্রযুক্তি যেহেতু এগিয়ে সেহেতু পাসওয়ার্ডের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্মার্ট ফোনে ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সর চালু হয়েছে।

এর মাধ্যমে এখন ব্যবহৃত ডিভাইসকে যেকোন মাধ্যকে সুরক্ষিত রাখা সহজ হচ্ছে। ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের হাতে পড়ে বড় রকমের সমস্যার সম্মুখীন হবার ভয় সবারই থাকে। যদি কেউ ফোন না লক করে আলাদা কোন অ্যাপ্লিকেশন বা গ্যালারি নিরাপদ রাখতে চায় তখন চাইলে সেক্ষেত্রে আলাদা অ্যাপ্লিকেশন বা গ্যালারিও চাইলে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। আর পাসওয়ার্ড যেখানেই ব্যবহার করা হোক না কেন সেটি অবশ্যই সুরক্ষিত হতে হবে যাতে যে কেউ সহজেই প্রবেশ না করতে পারে। মোবাইলে অনেকেরই ব্যক্তিগত তথ্য থাকতে পারে।

সেগুলো যেন সহজেই কারো হাতে না যায় সেজন্য খুবই শক্ত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা জরুরি।

ব্যাংক একাউন্টের ক্ষেত্রে গ্রাহক যদি তার মোবাইলে থাকা লেনদেন কিংবা টাকা পয়সার হিসাব অন্য কাউকে না দেখাতে চান সেক্ষেত্রে তিনি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এসব জায়গায় অসাধু লোকের আনাগোনা বেশি। তারা ফেসবুক একাউন্টে কেউ প্রবেশ করে ব্যবহারকারী কোন তথ্য উলটপালট কিংবা বিভ্রান্তিকর কোন তথ্য বা ছবি আপলোড করতে পারে। সেক্ষেত্রে শক্ত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা খুবই জরুরি।

যদিও ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য অনুমতি ছাড়াই সংগ্রহ করে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে সেহেতু এসব মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকা উচিত। সেখানে ব্যবহারকারী হয়তো অন্যের হাত থেকে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য বাঁচাতে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবে।

কিন্তু অসুরক্ষিত মাধ্যমগুলোর প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অসৎ উপায়ে ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয় তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার হ্যাকিং এর ঝুঁকি তো আছেই। সে ক্ষেত্রে টু স্টেপ ভেরিফিশন কাজে লাগতে পারে।

পাসওয়ার্ড তৈরির পূর্বে যেসব বিষয় জানা জরুরি

যেহেতু সুরক্ষার কথা এখানে আসছে সেক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখার গুরুত্ব ও কোন অংশে কম নয়। আর সুরক্ষিত পাসওয়ার্ড তৈরির পূর্বে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।

মোবাইল নাম্বার ব্যবহার না করা

বর্তমানে অনেক গ্রাহকেরাই তাদের পাসওয়ার্ড হিসেবে তাদের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করাকে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত মাধ্যম মনে করে থাকেন। কিন্তু এটি একদমই ঠিক নয়। কেননা আপনার মোবাইল নাম্বার যে কেউই সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। এছাড়াও অচেনা কিংবা অসাধু লোকের কাছেও যেকোনভাবে তার নাম্বার চলে যেতে পারে। যেহেতু নাম্বার তাদের কাছে সেহেতু কোনভাবে গ্রাহকের ইউজার আইডি সংগ্রহ করে মোবাইল নাম্বার পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে তাদের একাউন্টে সহজেই প্রবেশ করতে পারবে।

নিজের নাম ব্যবহার না করা

অনেকে পাসওয়ার্ড দেওয়ার সময় নিজের নাম ব্যবহার করে থাকেন এবং নামের পরে বিভিন্ন ক্যারেক্টার বা সংখ্যা দিয়ে পাসওয়ার্ড সেট করে থাকেন যা কোনভাবেই করা উচিত নয়। এতে হ্যাকিং এর সম্ভাবনা অনেকখানিই বেড়ে যায়। ইউজার নেম জানা থাকলে ব্যবহারকারীর নাম দিয়ে খোলা পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড সম্বলিত স্থানে খুব সহজেই প্রবেশ করা সম্ভব।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

জন্মসাল বা তারিখ ব্যবহার না করা

নিজের নাম দিয়ে খোলা পাসওয়ার্ডের পর সবথেকে ভয়ানক ভুল হচ্ছে নিজের জন্মসাল কিংবা তারিখ দিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করা। জন্মসাল কিংবা তারিখ দিয়ে ভুলক্রমেও পাসওয়ার্ড সেট করা উচিত নয়। কারন হ্যাকিং এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ যে রাস্তা সেটি হচ্ছে জন্মসাল। জন্মসাল যাদের জানা থাকবে তারা পাসওয়ার্ড হ্যাক করার আগে ব্যবহারকারীর জন্মসাল টার্গেট করবে এবং এর মাধ্যমে সকল তথ্য বের করবে। এছাড়াও জন্মসালের মাধ্যমে একাউন্ট রিকভার করাও সম্ভব।

বন্ধু কিংবা পরিচিত কারো নাম ব্যবহার না করা

পাসওয়ার্ডে খুবই পরিচিত এবং সাধারণভাবে ব্যবহৃত কোন শব্দ ব্যবহার করা উচিত নয়। যেমন Apple, Bird, Green, Father, Mother, মা-বাবার নাম, আত্নীয়ের নাম, পোষা প্রানীর নাম, কোন জায়গা/এলাকা/রাস্তা/থানা/উপজেলার নাম পাসওয়ার্ডে ব্যবহার করা উচিত নয়। কেননা এ ধরনের শব্দগুলোর সাথে অনেকেই পরিচিত এবং এক্ষেত্রে হ্যাকিং হবার ঝুঁকিও বেশি।

কোড কিংবা অন্য কোন নম্বর ব্যবহার না করা

কোন বিশেষ কোড, জায়গা/পোস্ট কোড, বাড়ির নম্বর কোড, রোড নম্বর, নিজের রোল কিংবা রেজিষ্ট্রেশন নম্বর কোনভাবেই পাসওয়ার্ড হিসেবে পছন্দ করা উচিত নয়। এধরনের পাসওয়ার্ড ব্রেক করাও খুবই সহজ।

পুনরাবৃত্তি করে শব্দ বা নম্বর ব্যবহার না করা

যদি পাসওয়ার্ড এ পুনরাবৃত্তি করে নাম্বার ব্যবহার করা হয় যেমন, 12345, wxyz, ABCD তাহলে ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সহজ পাসওয়ার্ড হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে 1434। অনেকেই নিজের নাম পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করার সময়ে নামের পর 1234, LMNOP এসব শব্দ পুনরাবৃত্তি করে ব্যবহার করে থাকেন। এতে পাসওয়ার্ড হ্যাকের ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি।

অপরিচিত কোন লিংকে বা ওয়েব অ্যাপে প্রবেশ না করা

অপরিচিত কোন লিংক বা কোন ওয়েব অ্যাপে পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রবেশ করাটা সম্পূর্ণ বোকামি। এটি এক ধরনের ফাঁদ কিংবা ফিশিং এর অন্যতম সহজ উপায়। ফিশিং লিংক কিংবা সন্দেহজনক application এ পাসওয়ার্ড প্রবেশ করানোর ফলে উক্ত ব্যক্তির পাসওয়ার্ড ফিশিং চালানো স্ক্যামারদের হাতে চলে যায়। এতে করে স্ক্যামাররা পাসওয়ার্ডটি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর ডিভাইসে থাকা সকল গোপনীয় তথ্যে প্রবেশ করে হাতিয়ে নিয়ে যায়। তাই অপরিচিত লিংকে প্রবেশের পূর্বে কিংবা অপরিচিত অ্যাপ ব্যবহার করার পূর্বে সাবধান হতে হবে।

একই পাসওয়ার্ড বারবার ও একাধিক একাউন্টে ব্যবহার না করা

অনেকেই পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের সময়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই পাসওয়ার্ড বারবার ব্যবহার করে থাকেন। পুরোনো পাসওয়ার্ড আবার ও নতুন পাসওয়ার্ড হিসেবে সেট করায় হ্যাকিং এর ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। যতবারই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হোক না কেন সব সময় নতুন পাসওয়ার্ড তৈরি করার সময় নতুন পাসওয়ার্ডই যোগ করতে হবে। আবার অনেকে একই পাসওয়ার্ড একাধিক একাউন্টে ব্যবহার করে থাকেন। সত্যি বলতে পাসওয়ার্ড যদি শক্তিশালী হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হল যদি কেউ আপনার একটি পাসওয়ার্ড জেনে যায় তাহলে সে পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনার সকল একাউন্টে প্রবেশের অনুমতি তিনি পেয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে বিবেচনায় একই পাসওয়ার্ড একাধিক একাউন্টে ব্যবহার করা উচিত নয়।

দীর্ঘদিন একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করা

পাসওয়ার্ড চুরি বা হ্যাক হওয়ার ভয় থেকে বাঁচার জন্য একই পাসওয়ার্ড দীর্ঘদিন ব্যবহার না করাটাই উচিত। যখন কোন ব্যক্তির সন্দেহ হবে যে তার পাসওয়ার্ডটা সম্ভবত কোন দ্বিতীয় ব্যক্তির নিকট চলে গেছে সেক্ষেত্রে তার পাসওয়ার্ড দিন যত দ্রুত সম্ভব পরিবর্তন করে ফেলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। একটি পাসওয়ার্ড হল কোন সম্পদ বা আপনার কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ডাটা কে গোপন করে রাখার একটি সবচেয়ে উত্তম পন্থা। তাই এটাকে সব সময় গোপনীয়তা বজায় রেখে সতর্কতার সাথে রাখাটাই উত্তম।

পাসওয়ার্ড যেখানে সেখানে লিখে রাখা

অনেকের খাতা, বই, ফোনবুক কিংবা যেকোন কার্ডে পাসওয়ার্ড লিখে রাখার অভ্যাস রয়েছে মনে না রাখতে পারার কারনে। পাসওয়ার্ড কখনো যেখানে সেখানে বা যেকোন বই খাতায় লিখে রাখা উচিত নয়। এটি খুবই অনিরাপদ পদ্ধতি। এগুলো যেকোন সময়ে অন্য কারো হাতে চলে যেতে পারে। পাসওয়ার্ড মনে রাখা যাদের পক্ষে কষ্টকর তারা চাইলে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন পাসওয়ার্ড লিখে রাখার জন্য।

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করার নিয়ম

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরির আগে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যে পাসওয়ার্ড যেন ১০টি শব্দের অধিক হয়। পাসওয়ার্ড সবসময় বড় হাতের এবং ছোট হাতের অক্ষর মিলিয়ে তৈরি করতে হবে। আর এলোমেলো শব্দ ব্যবহার করতে হবে, পুনরাবৃত্তি করে কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবেনা। পাসওয়ার্ডের অক্ষরগুলোর সাথে সাথে কিছু নম্বর এবং বিরাম চিহ্ন যোগ করতে হবে। যেমন: @g72s9!BaDH$*&℅#

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.