সম্প্রতি ফেসবুক এর মূল কোম্পানি মেটা নেটওয়ার্কস দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যার ঘাটতি পছে বলে জানিয়েছে। সেই সাথে মুনাফা ও শেয়ার দর পতন ঘটছে মেটার। দীর্ঘ ১৮ বছরের ইতিহাসে এটি প্রথম ঘটছে। বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয় যে ইউটিউব ও টিকটকের মত প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় এবং বিজ্ঞাপনদাতারা খরচ কমানোয় আয়ের প্রবৃদ্ধিও কমতে পারে বলে মেটা ধারণা করছে। বুধবার নিউ ইয়র্কের শেয়ার বাজারে শেষ বেলার লেনদেনে মেটার শেয়ারের দর ২০ শতাংশ পড়ে গেছে।
মেটার হিসাবে তাদের ফেসবুকে দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারী বা ডিএইউ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেষ তিন মাসে ১৯২ কোটি ৯০ লাখে নেমেছে, যা আগের তিন মাসে ১৯৩ কোটি ছিল। মেটার প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন যে তরুণ ব্যবহারকারীরা প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ায় ফেইসবুকের প্রবৃদ্ধি ধাক্কা খেয়েছে। মেটার সামগ্রিক আয় শেষ তিন মাসে বেড়ে তিন হাজার ৩৬৭ কোটি ডলার হয়েছে, যা পূর্বাভাসের চেয়ে সামান্য কিছু বেশি। আগামী তিন মাসের আয় দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৯০০ কোটি ডলারের মধ্যে থাকতে পারে বলেও এ কোম্পানি পূর্বাভাস দিয়েছে, যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে কম।
মেটার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ডেভ ভেহনার বলেন যে পরিবর্তনগুলোর কারণে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ব্র্যান্ডগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন প্রচার কঠিন হয়ে গেছে এবং এর ফলে এই বছর এক হাজার কোটি ডলারের অর্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমে গোপনীয়তার নীতিতে পরিবর্তন আনার কারণেও মেটার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফরম পরিচালনা করে। গুগল এই ব্যবসায় শীর্ষস্থানে আছে। মেটার বিরুদ্ধে আসা অসংখ্য অভিযোগের ফলে
মেটা গত বছর গত বছর হতে এই নতুন বছর অব্দি নানা রকম আলোচনা সমালোচনার স্বীকার হয়েছে। ফেসবুকের সাবেক কর্মী ফেসবুক প্রতিষ্ঠান মেটা ছেড়ে চলে আসার পর জনসম্মুখে মেটার অভ্যন্তরীণ অনৈতিক কাজ ও কর্মীদের উপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া ভ্যক্সিন নিয়ে মিথ্যা খবর ছড়ানো, রোহিঙ্গা বিদ্বেষের মত স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোর ফলেও মেটা সমালোচিত হয়েছে। এছাড়াও ব্যবহারকারীদের অনুমতি ছাড়াই তাদের ট্র্যাক করা, ডেটা, ছবি চুরি করার মত জঘন্য কাজের সাথে মেটা জড়িত রয়েছে। এসব অভিযোগ আসার পর ফেসবুক কোনো সমাধাম দেয়নি।
বড় বড় সমস্যাগুলো নিয়ে মেটা মুখ খোলার পরিবর্তে বিষয়গুলো সম্পূর্ণ এড়িয়ে গয়েছে। মেটাভার্সের ভিআর এর ব্যাপারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তব ব্যাপারে এখনো কিছুই দেখা মেলেনি।
বেশ কিছুদিন আগে ১১ বছর বয়সী এক বাচ্চার আত্নহত্যার মূল অপরাধী হিসেবে মেটাকে তুলে ধরে বাচ্চাটির মা। অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু কিশোরদের জিনিসপত্র বিজ্ঞাপন দেয়ার অভিযো তুলে বাচ্চার মা আদালতের সরনাপন্ন হন। এ ব্যাপারেও মেটা কর্তৃপক্ষ মুখ খোলেনি।