মার্কিন ধনকুবে এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি কোম্পানি টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক বলেন, টুইটার অধিগ্রহন সম্পন্ন হলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেবেন তিনি। টুইটার কেনার জন্য গত মাসে চুক্তিতে উপনীত হয়েছেন ইলন মাস্ক।
বুধবার (১১ মে) ফিন্যান্সিয়াল টাইমস আয়োজিত ‘ফিউচার অব দ্য কার সামিট’ সম্মেলনে মাস্ক এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি এখনো টুইটা্রের পুরোপুরি মালিকানা পাননি তার জন্য মাস্ককে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।
২০২১ সালের ০৮ জানুয়ারি ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল ভবনে দাঙ্গার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল টুইটার কর্তৃপক্ষ। ট্রাম্পের বক্তব্যে নতুন করে সহিংসতা ছাড়ানোর সম্ভাবনা ছিলো বলে সে সময় অ্যাকাউন্টটি চিরতরে বন্ধ করার কথা জানায় টুইটার। ক্যাপিটাল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের সেদিনের হামলায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন। এই হামলার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ভিত কেঁপে ওঠে। এই ঘটনার পর ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার হওয়া ওই অ্যাকাউন্টটিতে ট্রাম্পের প্রায় নয় কোটি ফলোয়ার ছিলো।
‘ফিউচার অব দ্য কার সামিট’-এ ইলন মাস্ক বলেন, ‘ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নৈতিকভাবে ভুল ছিলো, আর বোকামি তো বটেই। এখনও আমি টুইটারের মালিক নই। তাই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে পারছি না। অ্যাকাউন্ট বাতিল করে ট্রাম্পকে চুপ করানো যায়নি। তিনি নিজেই ট্রুথ সোশ্যাল খুলেছেন এবং ডানপন্থীদের কাছে তাঁর কণ্ঠ আরও জোড়ালো হয়েছে।
ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, ‘আমি মনে করি, চিরতরে নিষিদ্ধের বিষয়টি টুইটারের ওপর আস্থা কমায়। কারণ, টুইটার এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সবাই মতপ্রকাশ করতে পারে।’ ভুল ও খারাপ টুইট মুছে ফেলা বা অদৃশ্য করে দেওয়া উচিত। সাময়িক সময়ের জন্য অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দেওয়া যথোপযুক্ত হতে পারে। যদি কেউ কোনো অবৈধ কাজের পক্ষে লেখেন তবে তাঁকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা উচিত কিংবা পোস্টটি হাইড করে রাখা উচিত। ব্যবহারকারীদের আস্থা অর্জনে টুইটারের উচিত অ্যালগোরিদম শেয়ার করা। এতে টুইটারের উন্নতি ঘটাতে সাধারণ মানুষও বিভিন্ন পরামর্শ দিতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি (ট্রাম্পের বিরুদ্ধে) স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করব। কিন্তু আমি এখনও টুইটারের মালিক নই, তাই এটি এমন কোনো জিনিস নয় যা অবশ্যই ঘটবে।’
অন্যদিকে ইলন মাস্কের এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। টুইটারের ওপর মাস্কের একচ্ছত্র আধিপত্য বাকস্বাধীনতার নামে বিদ্বেষ প্রচারের পথ ‘সুগম করবে’ বলেই তাদের অনেকের ধারণা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, তারা এমন টুইটার দেখতে চায় না, যেখানে ব্যবহারকারীদের প্রতি সহিংস এবং নিপীড়নমূলক আচরণ ইচ্ছে করেই অগ্রাহ্য করা হয়।
এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ইলন মাস্ক যদি টুইটার প্ল্যাটফর্ম কিনে তার অ্যাকাউন্ট ফিরিয়েও দেন তবুও তিনি টুইটারে ফিরে আসবেন না। তিনি তার নিজের প্রতিষ্ঠিত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ ট্রুথ সোশ্যাল ব্যবহার করবেন।
ট্রাম্পের এই বক্তব্য শোনার পর মাস্কের সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিগত তা নিয়ে সন্দিহা অনেকেরই।