প্রযুক্তি শিল্পের শীর্ষ দুই প্রতিষ্ঠান ফেসবুক এবং গুগলের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের ডেটা গোপনীয়তা পর্যবেক্ষক ‘সিএনআইএল’ অভিযোগ করেছে যে তারা ব্যবহারকারীদের জন্য কুকি বা অনলাইন ট্র্যাকার প্রত্যাখানের প্রক্রিয়া বেশি জটিল করে তুলেছিল। যার ফলে ফ্রান্সের বাজার পর্যবেক্ষক সংস্থা গুগল ও ফেসবুকের উপর জরিমানা আরোপ করে। সব মিলিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের উপর ২১ কোটি ইউরো জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। সহজভাবে বলতে গেলে কুকি হলো ছোট ছোট ডেটা প্যাকেট যা ওয়েব ব্রাউজারগুলোকে ডেটা সংরক্ষণ করতে দেয় এবং ব্যবহারকারীদের ‘টার্গেটেড অ্যাড’ দেখানোর জন্য তথ্য সরবরাহ করে।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে সিএনআইএল-এর অভিযোগ, টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান দুটি তাৎক্ষণিকভাবে এক ক্লিকে কুকি গ্রহণ করার ভার্চয়াল বাটন রাখলেও, সহজে প্রত্যাখ্যানের জন্য একই রকমের কোনো বাটন রাখেনি। সিএনআইএল-এর ডেটা নিরাপত্তা প্রধান কারিন কাইফার বলেন যে কেউ যখন কুকি গ্রহণ করবেন, সেটা এক ক্লিকেই হয়ে যায়। সেহেতু প্রত্যাখ্যানের বিষয়টিও এক ক্লিকেই হওয়া উচিত। কুকি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইউ)-এর ডেটা গোপনীয়তা নীতিমালায় ব্যবহারকারীর অনুমতি নেওয়ার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পর্যবেক্ষক সংস্থাটি বলেছে ব্যবহারকারীদের জন্য কুকি প্রত্যাখ্যান করার প্রক্রিয়া সহজ করতে। সিএনআইএল-এর কাছেও বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। তিন মাসের মধ্যে পর্যবেক্ষকের নির্দেশ মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে উভয় প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিন এক লাখ ইউরো করে জরিমানা করা হবে। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুগলকে ১৫ কোটি ইউরো জরিমানা করা হয়েছে। আর ফেসবুককে ৬ কোটি ইউরো জরিমানা করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে গুগল প্রতিষ্ঠানটি বলেছে যে মানুষ তাদের গোপনীয়তা অধিকার এবং তাদের নিরাপদ রাখার বিষয়ে তাদের বিশ্বাস করে।
সেই বিশ্বাস রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব সেটা বুঝতে পারছে প্রতিষ্ঠানটি এবং আরো পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির মূল প্রতিষ্ঠান মেটা বলছে যে তাদের কুকি স্বীকৃতি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মানুষকে নিজস্ব ডেটার উপর আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ দেয়। এর মধ্যে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের নতুন সেটিংস মেনুও আছে যেখানে মানুষ যে কোনো সময় তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারে। এই বিষয়গুলো তারা উন্নয়নের কাজ হিসেবে চালিয়ে যাবেন। যদিও সিদ্ধান্ত ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও তা পরিবর্তনের বেলায় বেশ একটা সুফল পাওয়া যায় না।
২০১৮ সালে ব্যক্তিগত ডেটা প্রসঙ্গে ইইউ নতুন আইন করেছে। প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে কুকি ইনস্টল করার আগে ব্যবহারকারীর সরাসরি অনুমতি নিতে হয়। এছাড়াও আরো নানা রকম বাধা বাধ্যকতাও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গুগল ইউরোপের আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে একাধিকবার জরিমানার মুখে পড়েছে। এছাড়াও উক্ত সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট ২০২০ সালে সিএনআইএল-এর ১০ কোটি ইউরো রেকর্ড জরিমানার ভুক্তভোগীও ছিল। বিবিসি জানিয়েছে যে গুগল আর ফেসবুকের জন্য কুকি আয়ের মূল উৎস।
যদিও এটি সত্যি যে ব্যবহারকারীর ডেটা ও কুকির মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের গোপন সব তথ্য নিজের হাতে করে নিচ্ছে। ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই তাদের অসংখ্য ডেটা চুরি করে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে বিলিয়ন ডলার আয় করছে মেটা সে ব্যাপারেও অনেকেরই জানা। বিগত ২০২০ বিশ সালে মেটার সাবেক কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীন সব অপকর্মের কথা সবার সামনেই তুলে ধরেন। কর্মীদের উপর নির্যাতন সহ ভ্যাক্সিন বিষয়ে মিথ্যা তথ্য, রোহিঙ্গা বিদ্বেষ ছড়ানোর মত বড় বড় কূকর্মের পেছনে এই প্রতিষ্ঠানের হাত ছিল। এছাড়াও এই মেটা প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীদের ট্র্যাক এবং ডেটা সংগ্রহ করার জন্য বড় বড় হ্যাকিং কোম্পানির সাথে যোগসুত্র স্থাপন করেছে।
মেটা প্রতিষ্ঠানকে মেটাভার্সে পরিণত করার ব্যাপারে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর ও এখনো তার কিছুই করা হয়নি। কুকি সমস্যা ছাড়াও নানা রকম অভিযোগ সত্ত্বেও মেটা তা সম্পূর্ণ এড়িয়ে যায়। এবার ও তাই করছে। প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা অধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই কুকি ব্যবহারের বিরোধীতা করে আসছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে মেটা চিন্তিত নন।