Reading Time: 3 minutes

সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ইউরোপের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একটি দল ইউক্রেনের সাথে যুক্ত হয়েছে। বিবিসি এক প্রতিবেদনে বল যে সিআরআরটি দলে ক্রোয়েশিয়া, লিথুয়ানিয়া, রোমানিয়া, নেদারল্যান্ড এবং পোল্যান্ডের ৮ থেকে ১২ জন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। ইউক্রেনকে সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে উক্ত সিআরআরটি (সাইবার র‌্যাপিড-রেসপন্স টিম) সদস্যরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলতি সামরিক উত্তেজনার মধ্যে সাইবার আক্রমণের আশঙ্কা করছেন। সিআরআরটি বলেন তারা দেখেছেন যে সাইবার কার্যক্রমগুলো রাশিয়ার হাইব্রিড টুলকিটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ডিডস সাইবার হামলার মুখে পড়েছিল। আর এই হামলার সন্দেহ পড়ছে রাশিয়ার দিকে। ইউক্রেন সরকার মঙ্গলবারের সাইবার হামলার খবরের এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে। ইউক্রেনের নাকরিকেরা রাশিয়ার সঙ্গে চলতি সামরিক দ্বন্দের মধ্যেই সরকারি ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারছিলেন না, এমনকি দেশটির দুইটি ব্যাংক অনলাইন সেবার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল। বিগত সময়ে রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রাশিয়া দেশ সামরিক শক্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি করেছে।

ঠিক এমন পরিস্থিতিতেই ডিডস আক্রমণের ঘটনাটি ঘটলো। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায় যে সম্ভবত ডিডস আক্রমণের শিকার হয়েছে তাদের ওয়েবসাইট এবং ইন্টারনেটভিত্তিক সেবাটি অনলাইনে ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে। ডিডস আক্রমণে ব্যাংকগুলোর অনলাইন সেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রযুক্তিভিত্তিক সাইট ভার্জ এক প্রতিবেদনে জানায় যে ওই টুইটের চার ঘণ্টা পরেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত ওয়েবসাইটটি বন্ধ ছিল। অন্যদিকে ইউক্রেনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রাইভেট ব্যাংকসহ দুটি ব্যাংক শক্তিশালী ডিডস আক্রমণের শিকার হয়েছিল।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সঙ্গে যারা যুক্ত হয়েছে তাদের নিয়ে ওয়াংশিংটন পোস্ট বলছে যে চাইলেই রাশিয়া ইউক্রেনের বিদ্যুৎ, পরিবহন, অর্থনীতি এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে অচল করে দিতে পারবে, যা সার্বিক সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে অথবা দেশটির নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে অভ্যন্তরীণ অবস্থা অস্থিতিশীল করার জন্য করা হতে পারে। নেটওয়ার্কিং হার্ডওয়্যার নির্মাতা সিসকোর পরিচালকদের একজন ম্যাথিউ ওলনে টুইটারে মন্তব্য করেন তারা নিশ্চিত যে এটি ডিডস আক্রমণ ছিল, কিন্তু তারা এর কোনো বড় প্রভাবের ইঙ্গিত দেখছে না।

তিনি বলেন হয়তো গেল কয়েক দিনের ইতিবাচক খবরের মুখে ইউক্রেনকে চাপে রাখতে এই কাজগুলো করা হচ্ছে। রাশিয়া ইউক্রেনের উপর সামরিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে সাইবার হামলাগুলো আরো ভয়াবহ হতো। এদিকে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সূত্রের মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে যে সম্ভবত এর মধ্যেই রাশিয়ার হ্যাকাররা ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোতে প্রবেশ করেছে। নেটো রাশিয়ার সামরিক শক্তি প্রত্যাহারের ঘোষণায় আশাবাদী হলেও সতর্ক থাকার কথা বলেছে। কিন্তু রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন বিপরীতমুখী কর্মকাণ্ড পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে তুলছে।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

ইউক্রেন সরকারের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনস এর বিবৃতি বলছে যে PrivatBank উপর ডিডস আক্রমণের ঘটনায় ব্যাংকটির গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন সেবা বন্ধ ছিল। অশ্চাদব্যাংক নামের আরেকটি ব্যাংক অনলাইনে ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষমতা হারিয়েছিল। তবে কয়েক ঘন্টা পরে দেওয়া আরেকটি বিবৃতিতে ব্যাংক দুটি অনলাইন সেবা পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ডিডস আক্রমণে দুটি ব্যাংকের ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকেরা এটিএম মেশিন অফলাইনে থাকায় নগদ অর্থ তুলতে পারছিলেন না।

ইউক্রেন সরকার বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা সাইবার হামলার পেছনের মূল কে বা কারা হতে পারে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। রাশিয়ার দিকেই চলতি সামরিক দ্বন্দের সাথে জড়িত সন্দেহের দৃষ্টি রয়েছে। তবে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ডিডস আক্রমণের ঘটনাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিলেও এটি সম্ভবত রাশিয়ার আক্রমণ চেষ্টার অংশ ছিল না বলে মনে করছেন। এ ছাড়াও নটপেটইয়া আক্রমণের ঘটনাতেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রাশিয়াকে দায়ী করেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ২০১৭ সালে অন্তত দুই হাজার নটপেটইয়া আক্রমণ হয়েছিল।

এর সিংহভাগ ইউক্রেনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হলেও ম্যালওয়্যারটি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ছড়িয়েছিল। কয়েকশ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছিল এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার কম্পিউটার ব্যবস্থায়। লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রাণালয় টুইট করেছে যে ইউক্রেনের অনুরোধে সাড়া দিয়ে বলেন যে তারা লিথুয়ানিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি সাইবার র‌্যাপিড রেসপন্স টিম সক্রিয় করেছে। এটি ইউক্রেনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রমবর্ধমান সাইবার হুমকি মোকাবেলায় সাহায্য করবে। সিআরআরটি এর একজন কর্মকর্তা জানান যে ভিন্ন ভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে দলটি গঠন করা হয়েছে।

এর মধ্যে আছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, ফরেনসিকস, দূর্বলতা যাচাই এবং বিভিন্ন পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবেলায় সক্ষম বিশেষজ্ঞরা। বিবিসি জানায় যে সিআরআরটি দলগুলো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা এবং প্রতিরক্ষা জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে। সাইবার হুমকি চিহ্নিত করে মোকাবেলায় প্রচলিত আনুসাঙ্গিকের সবই আছে দলটির হাতে।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.