Reading Time: 2 minutes

গত মাসে কলোরাডো স্টেট ফেয়ার ফাইন আর্টস কম্পিটিশন এর উদীয়মান শিল্পীদের বিভাগে ‘ডিজিটাল আর্ট/ডিজিটালি ম্যানিপুলেটেড ফটোগ্রাফি’ শ্রেণিতে প্রথম পুরস্কার জিতেছেন জেসন অ্যালেন নামক এক ব্যক্তি। তিনি একজন গেম নির্মাতা। এর মধ্যে তিনি “স্পেস ওপেরা থিয়েটার” শিরোনামের চিত্রকর্মটি তৈরিতে এআই সিস্টেম ‘মিডজার্নি’ এর সহযোগিতা নিয়েছিলেন। এই এআই সিস্টেমটি ব্যবহারকারী কমান্ড লিখে দিলে তার ভিত্তিতে ছবি বানাতে পারে।

প্রথম আর্ট কম্পিটিশনে অংশ নিয়েই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন গেম নির্মাতা জেসন অ্যালেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে তার তৈরি একটি ছবি প্রথম পুরস্কার জিতেছে। যার ফলে নিজ হাতে ফুটিয়ে তোলা শিল্পকর্মের শিল্পীরা প্রশ্ন তুলেছেন, এআই দিয়েই যদি শিল্প হয়, তবে যারা দীর্ঘ সময় সাধনা করে শিল্পী হয়েছেন তাদের কি বুদ্ধিমত্তার কি হবে? অনেকেই বলছেন, রেনেসাঁ আর স্টিমপাংক ধাঁচের উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে অ্যালেনের ছবিতে।

প্রথমে অ্যালেন ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের পোশাক আর স্পেসস্যুটের হেলমেট মাথায় নারীদের ছবি তৈরি চেষ্টা করেন। কার্যত ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের সঙ্গে মহাকাশের নভোচারীদের ‍দৃশ্যায়নের মিশেল করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। শেষ তিনটি ছবির আগে আরও নয়শ সংস্করণ তৈরি করেছিলেন অ্যালেন। পরে ফটোশপে ছবিগুলোকে আরও প্রসেস করেন তিনি। তারপর ছবির রেজুলিউশন বাড়াতে গিগাপিক্সেল এআই নামের আরেকটি সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। তবে, তার ছবির কারণে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তাকে তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখছেন।

তিনি বলেন, প্রযুক্তি বা তার পেছনের মানুষগুলোকে ঘৃণা করার বদলে এটা বোঝা উচিত যে এটি খুবই শক্তিশালী একটি টুল। বিষয়টা মোটেই কিছু শব্দ জুড়ে দিয়ে প্রতিযোগিতা জেতার মতো ছিল না বলেন উক্ত গেম নির্মাতা। প্রতিযোগিতায় জমা দেওয়া তিনটি ছবি তৈরি করতে তার ৮০ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছিল বলে জানিয়েছেন। তবে ছবিগুলো নিয়ে পরবাস্তবতার অনুভূতি সৃষ্টি করছে দর্শকের মনে। ২৫ অগাস্ট অ্যালেন ডিসকর্ডের মিডজার্নির সার্ভারে প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার জেতার খবর জানিয়েছেন।

এরপরেই অন্যান্য শিল্পীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক শিল্পী টুইটারে টুইট করে বলেন যে এটা একেবারেই ভালো হচ্ছে না, কারণ ঠিক এ কারণেই রোবটদের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয় না। অন্য আরেকজন বলেন, এটি কিছু কমান্ড ইনপুটের মাধ্যমে ডিজিটাল শিল্পকর্ম বানানোর একটি আক্ষরিক উদাহরণ। এআইয়ের শিল্পকর্ম হচ্ছে ডিজিটাল দুনিয়ার দেয়ালের সঙ্গে স্কচটেপ দিয়ে লাগানো কলা। প্রতিযোগিতায় এমন এআই জেনারেটেড তিনটি চিত্রকর্ম ছিল।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

তবে সিএনএন জানিয়েছে যে অ্যালেন চিত্রকর্ম তৈরিতে রঙ তুলি ব্যবহার না করলেও কাজের কোনো কমতি ছিল না। সবমিলিয়ে তিনি ১১জন শিল্পী ১৮টি ছবি জমা দিয়েছিলেন উদীয়মান শিল্পী বিভাগে। মিডজার্নির সহযোগিতা নিয়ে বানানো চিত্রকর্ম দিয়ে কলোরাডোর আর্ট কম্পিটিশনে তিনশ ডলারের প্রথম পুরস্কার জেতার পর অ্যালেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, তার ছবিতে সে মুগ্ধ। এআই দ্বারা তৈরি তার আর্টটি নিজেই পছন্দ করেছেন এবং আশা করছেন অন্যান্য সবাই এটি পছন্দ করবে।

প্রতিযোগিতার এ বিভাগটির সংজ্ঞাতেই বলা ছিল ডিজিটাল আর্ট হচ্ছে এমন শিল্পকর্ম যার সৃষ্টিতে শিল্পীগণ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়েছেন। বাজারের একমাত্র এআই ইমেজ জেনারেটর নয় ‘মিডজার্নি’, আরও আছে গুগল রিসার্চের ‘ইমাজেন’ এবং ওপেন এআইয়ের ‘ডাল-ই টু’। ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সেবা ডিসকর্ডের মাধ্যমে মিডজার্নি ব্যবহার করতে পারেন যে কেউ। ‘ডাল-ই টু’ ব্যবহার করতে বিশেষ আমন্ত্রণপত্র পেতে হয় আগ্রহী ব্যক্তিকে। আর ইমাজেন কে এখনও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়নি গুগল।

শিল্পকর্ম সৃষ্টিতে এ নতুন ‘টুল’গুলোর আবির্ভাব, এদের সৃষ্টির প্রক্রিয়া, এবং কিছু ক্ষেত্রে এআইগুলোর নির্মাতারা এ প্রযুক্তিকে জনসাধারণের কাছ থেকে আড়াল করে রাখতে চাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে যে এই এআইগুলো কি আদৌ শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারে বা মানুষকে শিল্পকর্ম তৈরিতে সহযোগিতা আদৌ কি করতে পারে নাকি না। 

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.