সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা রাখার প্রতি আগ্রহ কমছে বাংলাদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের। ২০১৯ সাল থেকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর রাখা আমানতের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। ২০১৮ সালে আমানতের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে অর্থের পরিমাণ দাড়িয়েছিলো ৬১৭ দশমিক ৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক-এ।
২০১৯ সালে ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে সেই অর্থের পরিমাণ ৬০৩ দশমিক ০২ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক-এ দাড়ায়। সপ্তাহখানেক আগে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক তাদের বার্ষিক সমীক্ষায় সুইজারল্যান্ড এর ব্যাংকগুলোর তথ্য প্রকাশ করেছিলো। সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যমতে বাংলাদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর এই আমানতের পরিমাণ কমে দাড়িয়েছে ৫৩০ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক-এ।
বাংলাদেশের মত অন্যান্য দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোতেও আমানতের পরিমাণ পড়তির দিকে ছিলো ২০১৯ সালে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে আমানত কমেছিলো প্রায় অর্ধ শতাংশ, ২০২০ সালে ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে সেই অর্থের পরিমাণ হয়েছে ৬৪০ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক।
২০১৯ সালে ৫.০৬ শতাংশ কমে ভারতের অর্থের পরিমাণ ৮৯২ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক হয়েছিলো। ২০২০ এ এসে যে আমানত জমা হয়েছে তা গত ১৩ বছরে ভারতের জন্যে সর্বোচ্চ, সে বছর তাদের মোট আমানতের পরিমান ২ বিলিয়ন ফ্রাঙ্ক-এ দাড়িয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো আইন অনুযায়ী তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। গ্রাহকের অর্থের উৎস সম্পর্কেও তারা জানতে চায় না। ১৯৩৪ সালর সুইস ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী আমানতকারীর অনুমতি ছাড়া কোনো গ্রাহকের তথ্য প্রকাশ করা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হবে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া সুইস ব্যাংকগুলো সরাসরি গ্রাহকদের কোনো তথ্য প্রকাশ করে না।
তবে কোন দেশের গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ সুইস ব্যাংকে জমা আছে তার একটি বাৎসরিক সমীক্ষা এসএনবি প্রকাশ করে থাকে। দূর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতার কারণে তারা এই তথ্যগুলো প্রকাশ করে গ্রাহকদের পরিচয় গোপন রেখে।
গ্রাহকদের গোপনীয়তার ব্যাপারে এইরূপ নীতির কারণে ধনী ব্যক্তিরা সুইস ব্যাংকে তাদের অর্থ জমা রাখেন। বলাই বাহুল্য সেই অর্থগুলোর সিংহভাগ-ই কালো টাকা। কর ফাঁকি দেয়া ও কালো টাকা জমা রাখার উদ্দেশ্যে অনেক ব্যক্তিই সুইস ব্যাংকগুলোকে বেছে নেন।
সুইস ব্যাংকে থাকা আমানতগুলোকে সরাসরি কালো টাকা বলা না গেলেও অর্থ পাচারকারীদের অর্থের আনাগোনা যে বেশি হবে সেটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশি প্রবাসীরাও সুইস ব্যাংকে তাদের অর্থ জমা রাখেন।
তবে বছর কয়েক ধরে বাংলাদেশিদের সুইস ব্যাংকের প্রতি অনাগ্রহের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন দূর্নীতি প্রতিরোধে ব্যাংকগুলো তাদের লেনদেনের পদ্ধতি শক্ত করার ঘটনাটিকে। এমনকি অন্যান্য দেশগুলোর সাথে তথ্য ভাগ করার ব্যাপারেও তারা বিবেচনা করছে। এছাড়াও সুইস ব্যাংকগুলোতে মুনাফার হার কমে যাওয়ায় গ্রাহকরা বিকল্প জায়গা বেছে নিচ্ছেন।