Reading Time: 3 minutes

প্রতিষ্ঠানের শুরুর দিকের বিনিয়োগকারীরা ফেসবুকের মেটাভার্স পরিকল্পনাকে জঘন্য বুদ্ধি বলে দাবী করেছেন। বর্তমান প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের অধীনে এই মেটাভার্স নিরাপদ থাকবে বলে মনে করেন না তারা। সম্প্রতি তাদের প্রধান সংস্থাটির নাম পালটে “মেটা” করার ঘোষণা দিয়েছে ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটি মেটাভার্স প্রকল্পের বিনিময় করছে কয়েক শত কোটি ডলার। কিন্তু ফেসবুকের প্রথম দিককার বিনিয়োগকারীদের একজন বলেন যে এটা একটা জঘন্য বুদ্ধি আর তারা সবাই বসে বসে এটা দেখছেন যেন এটা খুবই স্বাভাবিক কিছু একটা। সবাইকে একটি দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে এটি। ফেসবুকের শীর্ষ পণ্য কর্মমর্তা পর্তুগালের লিসবনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওয়েব সামিটে বক্তব্য রেখছেন। সম্মেলনে তিনি জানান যে মেটাভার্স চিন্তা ইন্টারনেটকে তুলনামূলক কম সমতুল্য করে তুলবে।

ভিডিও কনফারেন্সের তুলনায় এই প্রযুক্তির ব্যবহার অনেকদিক থেকেই ভাল হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। একই সাথে তিনি এ সম্মেলনে বিপরীতমূখী মন্তব্য করেছেন প্রথম সেই বিনিয়োগকারী। ফেসবুকের পুরো বিষয় নিয়ে তার ভিতর সংশয় কাজ করছে। তিনি মন্তব্য করেন যে ফেসবুককে একটা ভিস্টোপিয়ান মেটাভার্স নির্মাণ করতে দেয়া উচিত নয়। ১৯৯০ সালে প্রকাশিত সায়েন্স ফিকশন একটি উপন্যাস থেকে মেটাভার্সের উৎপত্তি। এই মেটাভার্সকে উপন্যাসটিতে বর্তমান ইন্টারনেট ব্যবস্থক্র ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নির্ভর উত্তরসূরী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। বিবিসি জানিয়েছে যে ফেসবুকের প্রথম বিনিয়োগকারীর একজন যিনি তিনি ফেসবুক প্লাটফর্মে ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি দেখে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগকারী থেকে সমালোচকে পরিণত হয়েছেন।

ফেসবুক কাণ্ডারী জাকার্বার্গের অধীনে এই প্রকল্প নিরাপদ থাকবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন যে নিয়ন্ত্রক বা নীতিনির্ধারকদের কোনভাবেই ফেসবুককে (মেটাভার্সে) কাজ করতে দেয়া বা ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত নয়। তিনি আরো বলেন যে এত কিছুর পর আর ফেসবুকের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার অধিকার কারো থাকার কথা নয়। সেখানে একজন নীতিনির্ধারক থাকার কথা যিনি সবকিছুর অনুমতি দেবেন। যে ক্ষতি তারা করেছে তার হিসাব বলে শেষ করা যাবেনা। তবে বিবিসি জানিয়েছে যে ওয়েব সামিটে ফেসবুকের ক্রিস কক্স একটি ভিন্ন চিত্র আঁকার চেষ্টা করেছেন। মেটাভার্স শুধু ফেসবুকের জন্য নয়, পুরো ইন্টারনেট ব্যবস্থার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ বলে তিনি দাবি করেন। কক্স জানান যে অনেক সময়েই প্রযুক্তির শুরুটা হয় এর পরিণতির থেকে কম রেজুলিউশনে।

ব্যক্তিগতভাবে কক্স মেটাভার্সে দাপ্তরিক বৈঠকের আয়োজন আর কর্মীদের জন্য বিনোদনের আয়োজন করার অভিজ্ঞতা আছে বলে জানিয়েছেন। তিনি নিজের স্ত্রী ও সহকর্মীদের নিয়ে মেটাভার্সে কমেডি শো দেখার দাবিও করেন। সেখানে সবার উপস্থিতি ছিল অ্যাভাটার হিসেবে। একই প্রযুক্তি ভিডিও কলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি। মেটার অকুলাস হেডসেটের অভিজ্ঞতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই “বেশ মজার” ছিল বলে ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে তিনি জানান। তিনি বলেন যে ভিডিও কনফারেন্সে সবাই বিরক্ত। কে কার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা বোঝার মত উপায় কারো নেই। এমনকি বারবার একে অন্যের কথার মধ্যে কথা বলতে থাকে। মেটাভার্সের বৈঠকগুলো এর তুলনায় অনেক ভালো হবে বলে তিনি দাবি করেছেন।

ভার্চুয়াল দুনিয়ায় “স্পেশাল অডিও এবং অঙ্গভঙ্গি” আরও উন্নত করতে মেটা জোর দিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। তবে তিনি এটিও বলেছেন যে মেটাভার্স কোনো একক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত নয়। বিবিসি বলছে যে কক্স গেইমিং প্ল্যাটফর্ম রোব্লক্সের দিকেই ইংঙ্গিত করছেন। বিশ্বব্যাপী তিন কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারী রয়েছে রোব্লক্সের। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান বাজারমূল্য তিন হাজার কোটি ডলার। রোব্লক্সের প্রধান নির্বাহী ডেভিড বাসজুকি মেটাভার্স নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা বলে আসছেন বেশ কয়েক বছর ধরেই। মেটাভার্সকে থ্রিডি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে খেলা, শেখা এবং পেশাদারী কর্মকাণ্ডের ডিজিটাল দুনিয়া হিসেবে তিনি বিবেচনা করে আসছেন। ওয়েব সামিটে রোব্লক্সের মিউজিকের প্রধান বিবিসিকে বলেন যে মেটাভার্স নিয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে আমরা গত ১৫ বছর ধরেই এটা নিয়ে কাজ করছি।

তিনি বলেন যে মেটাভার্সকে তারাই ডেকে আনছে এবং তারা মনে করেন যে, এটা এমন একটা জায়গা হওয়া উচিত যেখানে সবার প্রবেশাধিকার থাকবে। এমন একটা জায়গা হবে যেখানে মানুষ তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবে এবং একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। কক্সের কাছে বিবিসি জানতে চেয়েছিল যে মেটাভার্সের উপর কোনো সামাজিক মাধ্যম জায়ান্টের একক নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত কি না। উত্তরে কক্স বলেন যে সেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মান ও প্রটোকল নির্ধারিত থাকবে এবং মেটাভার্সকে নিরাপদ রাখার জন্য সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিতর্কের (পাবলিক ডিসকোর্স) সুযোগও রাখতে হবে। মার্ক জাকারবার্গ ব্যহারকারীদের নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতিবব্ধ হওয়ার দাবি করেন তিনি। তার দাবি যে তাদের প্রতিষ্ঠানটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এটি নিয়ে কাজ করছে।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

বিগত প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালেখি করছি - বাংলা লেখিকা

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.