Reading Time: 8 minutes

১৯ জুলাই, ১ টি আন্তর্জাতিক মিডিয়া সংস্থার একটি সহযোগে বিশ্বজুড়ে ফোন নম্বরগুলির ফাঁস হওয়া তালিকার উপরে একটি তদন্ত প্রকাশ করা হয়, যা পেগাসাস প্রজেক্ট বলে অভিহিত। এগুলো ছিলো মুলত “টার্গেট লিস্ট” দের মোবাইল নম্বর। যাদের মোবাইল ইজরাইলের এনএসও গ্রুপের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার প্রোডাক্ট দ্বারা হ্যাক হয়েছে বা হ্যাক হতে যাচ্ছে। তালিকাটি আপাতদৃষ্টিতে এর বিশাল আকারের জন্য উল্লেখযোগ্য। তাছাড়াও এতে বিশিষ্ট সাংবাদিক, বিভিন্ন দেশের ভিন্নমতাবলম্বী, রাজনীতিবিদ, বিচারক, ব্যবসায়ী, অধিকার কর্মী এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের নম্বরও অন্তর্ভুক্ত। এই তালিকার কিছু লক্ষ্য তাদের ডিভাইস গুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য মিডিয়া এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর নিকট পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য আসেন পেগাসাস স্যুটের হ্যাকিংয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়

পেগাসাস প্রজেক্ট কি?

ঘটনাটির মূল পাওয়া যায় মূলত যুক্তরাষ্টের ন্যাশনাল সিকিরিটি এজেন্সি থেকে। পাভেল দুরভ, টেলিগ্রাম এবং VK এর প্রতিষ্ঠাতা, তার এক মন্তব্যে এ বিষয়টি উল্লেখ করেন। ২০১৩ সালে স্নোডেন, একজন প্রাক এন এস এ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন যে অ্যাপল এবং গুগল উভয়েই একটি গ্লোবাল সার্ভেইলেন্স প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত হয়েছিলো যেখানে তারা তাদের প্রত্যেকটি ডিভাইসে একটি ব্যাকডোর রেখে দিয়েছিলো। এই ব্যাকডোর গুলো ডিভাইসে সিকিউরিটি বাগ হিসেবে থেকে যেতো। যার মাধ্যমে ইউএস এজেন্সি তাদের প্রয়োজন মতো বিশ্বের যেকোনো স্মার্টফোন বা অন্যান্য ডিভাইস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারতো।

কিন্তু এরকম ব্যাকডোরগুলোর সমস্যা হচ্ছে যে এটি যে কেউ খুজে বের করতে পারবে। সুতরাং যদি ইউএস এজেন্সি একটি অ্যাপেল বা অ্যান্ড্র্যেড ডিভাইস হ্যাক করতে পারে তবে কোনো তৃতীয় পক্ষও সেই ব্যাকডোর ব্যবহার করে ডীভাইস গুলোর তথ্য চুরি থেকে শুরু করে তার লোকেশন পর্যন্ত নির্নয় করতে পারবে।

এখন আমাদের সকলের মনে প্রশ্ন হতে পারে যে পেগাসাস কি? পেগাসাস হলো এমনই এক ধরনের স্পাইওয়্যার স্যুট যা ইজরাইলের একটি সংস্থা এন.এস.ও গ্রুপ দ্বারা তৈরি। এটি উইন্ডোজ, ম্যাক কম্পিউটার এবং অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস স্মার্টফোনগুলিতে সেই ব্যাকডোর ব্যবহার করে ডিভাইস গুলিতে নজরদারি পরিচালনা করতে ব্যবহার করা হয়। এনএসও এখন পর্যন্ত এটি “সরকারী ক্লায়েন্ট” দের কাছে । স্পাইওয়্যারটি ইমেল, এসএমএস, হোয়াটস অ্যাপ সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে প্রেরণ করা সম্ভব যা কিনা ব্যবহারকারীর ডিভাইসে গোপন থেকে যায় এবং ব্যবহারকারী এ বিষয়ে জানতেও পারবে না। এরকম জিরো-ডে ভলনার‍্যাবিলিটি বা স্পাইওয়্যার গুলো খুজে পাওয়া বেশ দুষ্কর, জটিল এবং সময় সাপেক্ষ ব্যপার। এটি এক সময় শুধুমাত্র একটি কল দ্বারা পরিলক্ষিত ব্যক্তির স্মার্টফোনকে আক্রমণ করতে সক্ষম এবং তখন একে আটকানো অসম্ভব প্রায়।

কারা এই তথ্যগুলো দেখেছে?

প্যারিস বেসড নন প্রফিট দুটি সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ তথ্যগুলো কে বিশ্লেষন করেছে, এবং পরবর্তীতে 17 টি ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া সংস্থাকে এ সম্পর্কে জানায় যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংস্থা হচ্ছে দি গার্ডিয়ান, দি ওয়াশিংটন এবং ভারতে দি ওয়্যার। ফরবিডেন স্টোরিজ জানায় যে তালিকাটি তৈরি হয়েছে সেসব নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কে উল্লেখ করে যাদেরকে এনএসও গ্রুপের পেগাসাস স্যুট দ্বারা নজরদারি করা হচ্ছে বা হবে। যাইহোক এই বিষয়টি নিশ্চিত যে যাদের ফোন নম্বর তালিকাটিতে অন্তর্ভুক্ত তাদের সকলেই পেগাসাস স্যুট টি দ্বারা হ্যাক হননি।

কেন এটি জানা জরুরী

দি ওয়্যার এর রিপোর্ট অনুযায়ী এনএসও গ্রুপের ক্লায়েন্ট তালিকার এর মধ্যে কয়েকটি দেশের সরকার যেমন আজারবাইজান, হাঙ্গেরি, রুয়ান্ডা, মেক্সিকো, মরক্কো, কাজাকিস্তান, সৌদি আরব সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ভারত উল্লেখযোগ্য। দি ওয়্যার বলছে সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০ ভারতীয় নম্বর পাওয়া গিয়েছে এই তালিকায় যাদের মধ্যে বেশিরভাগ ব্যক্তিত্ব হচ্ছে রাজনীতিবিদগণ, সংবাদিক এবং অধিকার কর্মী। এনএসও গ্রুপ টি পেগাসাস স্যুট শুধুমাত্র সরকারের নিকট বিক্রির কথা দাবী করছে, অর্থাৎ স্যুট টি কোনো প্রাইভেট পক্ষের নিকট বিক্রি করছে না তারা। এতে করে বোঝা যাচ্ছে যে শুধুমাত্র সরকারি লোকদের কেই নজরদারি করা হচ্ছে এই স্যুট টির মাধ্যমে।

স্যুট টির মুল্যই নির্ধারন করে দেয় যে এটি সাধারণ মানুষের কেনার ক্ষমতার বাইরে। খুব অল্প পরিসরে মাত্র ৩৭টি ফোন ফরেন্সিক বিশ্লেষণের জন্য অ্যামন্যাস্টি ইন্টারন্যাশনালের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১০ টি ভারতীয় ফোন রয়েছে এবং এগুলোতে পেগাসাস ইনফেকশনের নির্দেশ পাওয়া গিয়েছে। এই নম্বরগুলি রাজনীতিবিদ, বিচারক, ব্যবসায়ী, অধিকার কর্মী এবং অন্যান্য সরকারি ব্যক্তিবর্গের। এটি উল্লেক্ষ্য যে পেগাসাস প্রোজেক্ট এখন পর্যন্ত কোনো আসামী কিংবা উগ্রবাদী দের হাতে পরে নি।

এই জাতীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটার ডিভাইসে অনুপ্রবেশ করা তথ্য প্রযুক্তি ধারা ২০০০ এর অধীনে আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।

এনএসও গ্রুপ কি বলছে?

ইজরাইলি ফার্ম এনএসও গ্রুপ দ্যি ওয়্যার এর সাথে আইনজীবীর মাধ্যমে যোগাযোগ করেছে এবং জোর দিয়ে বলেছে যে ফাঁস হওয়া তালিকায় সরকার কর্তৃক হ্যাকিংয়ের জন্য কোনো “লক্ষ্য তালিকা” নেই, তবে “তালিকার একটি বৃহত্তর অংশ এমন হতে পারে যা এনএসও গ্রুপের গ্রাহকরা অন্যান্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বা করবে”। অপরদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কিছু নমুনাতে পেগাসাস এর সংক্রমণ পেয়েছে।

নিম্নে এবিষয়ে বিভিন্ন দেশের মতামত এবং তারা পেগাসাস প্রোজেক্ট দ্বারা কতটা প্রভাবিত হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে।

ইজরাইল

ইজরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গ্যান্টস এনএসও গ্রুপ কর্তৃক বিদেশী সরকারদের কাছে সফটওয়্যার বিক্রি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে “যে সমস্ত দেশগুলি এই সিস্টেমগুলি কিনে থাকে তাদের অবশ্যই ব্যবহারের শর্তাদি পূরণ করতে হবে”, যা কেবলমাত্র অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের তদন্তের জন্য। এর পর একটি রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে যে সরকার একটি মাল্টি-এজেন্সি টাস্ক ফোর্স গঠন করছে যাতে করে এই ফলাফল মোকাবেলা করা যায় এবং সংবেদনশীল সাইবার রপ্তানি সম্পর্কিত “নীতি পরিবর্তন” প্রয়োজন কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করা যায়।

কলামিস্ট বেন-ড্রর ইয়েমিনি ইয়েদিওথ আহরোনোথ সংবাদপত্রে লিখেছেন, “সমস্যা হচ্ছে যে মুহূর্তে একটি দেশ এই প্রোগ্রাম টি কিনবে, এটি যে কোন ভিন্নমতাবলম্বীকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে… কিছু দেশে যা ঘটেছে বা এখনও ঘটতে পারে তা সহ অন্যান্য দেশে তা শুরু হওয়ার সাথে সাথে ইজরাইলেও ঘটতে পারে। আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার।”

এনএসও অস্বীকার করেছে যে ডাটাবেসের সাথে তার গ্রাহকদের কোনও সম্পর্ক রয়েছে। তারা বলছে যে এর ক্লায়েন্টদের ক্রিয়াকলাপে এর কোনও দৃশ্যমানতা তাদের নিকট নেই, এবং বলেছে যে রিপোর্টিং কনসোর্টিয়াম ক্লায়েন্টদের এ প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে “ভুল অনুমান” করেছে।

ভারত

ভারতে, পেগাসাস প্রকল্প ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সোমবার সংসদীয় বর্ষাঅধিবেশন শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিরোধী কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী, তাঁর বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং মন্ত্রী, সাংবাদিক, কর্মী এবং একজন বর্তমান বিচারকের মোবাইল ফোন নম্বর ফাঁস হওয়া তালিকায় ছিল বলে প্রতিবেদনের আলোচ্যসূচিতে উঠে এসেছে। কংগ্রেস সদস্যরা নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে “দেশদ্রোহীতার” অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-এর পদত্যাগের আহ্বান জানান। সংসদে বিতর্ক এবং বিরোধিতা এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে মঙ্গলবার অধিবেশন টি দুবার মুলতুবি করতে হয়েছে, কারণ কংগ্রেস এবং অন্যান্য রাজনীতিবিদরা মোদী সরকারের কাছ থেকে উত্তরের দাবিতে কক্ষে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে এবং স্পাইওয়্যার ব্যবহারকে “গণতন্ত্রের অপমান” হিসাবে বর্ণনা করে। আর একটি বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি দাবি করেন যে ভারতীয় গণতন্ত্র বাঁচাতে দাবী সুপ্রিম কোর্ট যেন এ বিষয়টি খতিয়ে দেখে।

কিন্তু মোদী সরকার এ বিষয়টি অস্বীকার করছে। তাদের মতে তারা কোনো প্রকার অবৈধ নজরদারির সাথে লিপ্ত নয়। নবনিযুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণু – যার নিজস্ব নম্বর ফাঁস হওয়া তালিকায় ছিল – বলেন যে গল্পগুলি “ভারতীয় গণতন্ত্র এবং এর সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলিকে মানহানি করার প্রচেষ্টা”, এটি মোদীর ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির বেশ কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তিত্বের একটি অনুভূতি।

মরক্কো

মরক্কোকে সন্দেহ করা হয়েছিল যে ম্যাক্রোঁকে সম্ভাব্য ভাবে টার্গেট করার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ রয়েছে এবং এই সপ্তাহে একটি ফরাসি অনলাইন অনুসন্ধানী জার্নাল মিডিয়াপার্ট বলেছে যে তারা মরোক্কোর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে যেখানে বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে যে এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এডউই প্লেনেল এবং একজন সাংবাদিক লায়ানেগ ব্রেডোক্স পেগাসাস দ্বারা সংক্রামিত হয়েছে।

মরক্কোর কর্তৃপক্ষ রাবাতের এনএসও স্পাইওয়্যার ব্যবহারের বিষয়টি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। বুধবার, সরকারী আইনজীবী এ বিষয়ে সরকারী তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তার মতে এটি একটি “মিথ্যা গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ” ।

পেগাসাস প্রজেক্ট চালু হওয়ার একদিন পর অনুসন্ধানী সাংবাদিক ওমর রাদিকে ধর্ষণ ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে রাবাতে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অ্যামনেসস্টি ইন্তারন্যাশনাল প্রথমে অভিযোগ করে যে রাদির ফোন জুন ২০২০ এ গুপ্তচরবৃত্ত করা হয়।

২২ জুলাই, মরক্কো বলেছে যে তারা প্যারিসের একটি আদালতে অ্যামনেস্টি এবং প্যারিসভিত্তিক মিডিয়া সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করছে। এই দুটি সংস্থা প্রাথমিকভাবে ফাঁস হওয়া তালিকায় প্রবেশাধিকার পেয়েছিল এবং মিডিয়া সংস্থা দের মাঝে প্রকাশ করা।

হাঙ্গেরি

হাঙ্গেরিতে ফরেনসিক দেখিয়েছে যে অনুসন্ধানী সাংবাদিক দেশের সর্বশেষ স্বাধীন মিডিয়ার মালিক এর ফোন পেগাসাস প্রোজেক্ট দ্বারা আক্রান্ত। এই উন্মোচন ব্রাসেলস এবং হাঙ্গেরিতে একটি ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। হাঙ্গেরির প্রধান মন্ত্রী ভিক্টর অরবান এ বিষয়টি অস্বীকার করেনি। প্রথমে তিনি বলেছিলেং যে তারা এই নজরদারি সম্পর্কে “অবগত” ছিলেন না। অতঃপর তিনি “অবৈধ নজরদারি” সম্পর্কে অস্বীকার করেন।

সাত জনের সংসদীয় জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির তিনজন বিরোধী সংসদ সদস্য এই অভিযোগ নিয়ে আলোচনার জন্য গত সোমবার ২৬ জুলাই কমিটির একটি অসাধারণ বৈঠক ডেকেছিলেন, কিন্তু অরবানের ফিদেজ দলের চার সদস্য এই আহবান করতে বাধা দেন।

বিজ্ঞাপন (কেন?)

কমিটির অন্যতম বিরোধী সংসদ সদস্য পিটার উঙ্গার এই অভিযোগে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “বিচারমন্ত্রী যদি এর কোনটিতে স্বাক্ষর করেন, আমি জানি না তিনি কীভাবে তার অবস্থান বজায় রাখবেন।”

অরবান একটি বিতর্কিত আইনের উপর গণভোট ঘোষণা করেছিলেন যা সমকামিতাকে পেডোফিলিয়ার সাথে একত্রিত করে এবং শিশুদের কাছে এলজিবিটি বিষয়গুলির যেকোনো প্রকার চিত্রায়ন নিষিদ্ধ করে। তবে এটি পেগাসাস প্রোজেক্ট থেকে হাঙ্গেরির জনসাধারণের মনোযোগ সরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা ছিলো মাত্র।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হাঙ্গেরি অফিসের প্রধান ডেভিড ভিগ বলেন, “এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কিন্তু তবুও এটি লজ্জাজনক, যে অরবান পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেলেঙ্কারির জন্য আইনগত এবং রাজনৈতিক পরিণতির মুখোমুখি হতে ব্যর্থ হয়েছে এবং পরিবর্তে তার এলজিবিটিআইকিউ-ফোবিক প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” “সরকার যদি অবৈধভাবে হাঙ্গেরীয় নাগরিকদের উপর স্পাইওয়্যার ব্যবহারের অনুমোদন দেয়, তাহলে এর ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।”

মেক্সিকো

মেক্সিকোতে ফার্স্ট লেডি বিট্রিজ গুটিরেজ মুলার তার প্রেসিডেন্ট এর অমতে পেগাসাস প্রজেক্টের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের প্রতি আহ্বান জানান। প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস মানুয়েল লোপেস ওব্রাদোর (আমলো) বলেন, ফাঁস হওয়া তালিকায় যে সব রাজনীতিবিদ ও নিরীহ নাগরিকের মোবাইল নম্বর প্রকাশিত হয়েছে, তাদের নিয়ে তিনি কোন অভিযোগ করবেন না।

পেগাসাস প্রকল্পের তদন্ত অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর – যিনি আমলো নামে পরিচিত তার আশেপাশের কমপক্ষে ৫০ জন ব্যক্তি যার মধ্যে রয়েছে গুটিরেজ মুলার, তার তিন পুত্র, তিন ভাই, উপদেষ্টা, এমনকি তার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, এনএসও-র ক্লায়েন্টদের সম্ভাব্য আগ্রহের মধ্যে ছিলেন।

মেক্সিকো ছিলো এনএসও প্রজেক্ট এর প্রথম ক্লায়েন্ট এবং বিগত এক দশক যাবৎ মেক্সিকোর ৩ টি সুরক্ষা প্রতিষ্ঠান পেগাসাস প্রজেক্ট পরিচালনা করে আসছে। আমলো বলেছেন যে ফেডারেল সরকার রাজনৈতিক বিরোধী, সাংবাদিক বা কর্মীদের উপর কোনো গুপ্তচরবৃত্তি করে নি। এক বিবৃতিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস জানিয়েছে, পলাতক টমাস জেরন এনএসও এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন এবং পেনা নিয়েতোর অধীনে কর্মরত এ আই সি এর ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। তিনি আত্মসাএবং নির্যাতন এর অভিযোগে গত বছর ইজরাইলে পালিয়ে যান।

এই সপ্তাহের শুরুতে, পেনা নিয়েতো তার জন্মদিন উৎযাপনের কিছু চিত্র ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করেছিলো। নীতো এখনো তার অভিযোগের জবাব দেননি। তিনি এ অভিযোগের এখন পর্যন্ত কোনো জবাব দেননি।

যুক্তরাজ্য

প্রায় ৪০০-টির ও বেশি যুক্তরাজ্য-নম্বর পেগাসাস প্রোজেক্ট লিক-এ তালিকাবদ্ধ হওয়ায় যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রশ্ন তোলেন হাউজ অব লর্ড এর সদস্য পলা উদ্দিন, যেখানে তার নিজ নম্বরও তিনি লক্ষ্য করেছেন উক্ত তালিকায়। বৃহস্পতিবার হাউস অফ লর্ডসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পলা উদ্দিন প্রশ্ন করেন, যুক্তরাজ্য আদোও “ব্রিটিশ নাগরিক এবং প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য অবৈধ নজরদারি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন কিনা এবং প্রতিনিধিত্ব করেছে কিনা?”

এর একদিন আগে যুক্তরাজ্যের সরকারের একজন মন্ত্রী লর্ডসদের বলেছেন, “আমরা এনএসও এর কার্যক্রম সম্পর্কে ইজরায়েল সরকারের কাছে বেশ কয়েকবার আমাদের উদ্বেগ উত্থাপন করেছি”।

ব্রিটেনের মুসলিম এসোসিয়েশন থেকেও অভিযোগ এসেছে যে তাদের প্রধান রাঘাদ আল-তিক্রিতির ব্যকিগত নম্বরও উক্ত তালিকাটিতে পাওয়া গিয়েছে। বলা হচ্ছে যে এটি “জাতীয় নিরাপত্তা”-কে এক বিশাল প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে এবং এটাও জিজ্ঞেস করা হচ্ছে যে ব্রিটিশ সরকার এ তালিকা এবং সম্ভাব্য ব্যক্তিদের নজরদারি বিষয়ে অবগত কিনা।

মানবাধিকার আইনজীবীরা বলেছেন যে তারা প্রতিবেদনগুলি মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা করছেন এবং এনএসও গ্রুপ থেকে আরও তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য করার জন্য দেওয়ানি ব্যবস্থা প্রস্তুত করতে চাইছেন।

অ্যাপেল যা বলছে

পেগাসাস প্রকল্পের তদন্তে স্পাইওয়্যার কীভাবে অ্যাপেল ডিভাইসে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে পরাজিত করতে সক্ষম হচ্ছে তা প্রকাশ করার পরে অ্যাপল চাপের মুখে পরেছে। পেগাসাস ম্যালওয়্যার টি আইওএস 14.6 এও কাজ করে বলে জানা গিয়েছে যা কিনা অ্যাপেল ব্যবহারকারি দের জন্য সর্বশেষ আপডেট ছিলো। এর মানে হচ্ছে সফটওয়্যার টি জিরো-ডে ভলনার‍্যাবিলিটি ব্যবহার করেছে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দুর্বলতাটি ছিল আইমেসেজে অর্থাৎ অ্যাপলের মেসেজিং অ্যাপে।

সংস্থাটি একটি বিবৃতিতে বলেছে যে আইওএস এর নিরাপত্তা আইওএস 15 -তে আরও উন্নত করা হয়েছে, যা সামনে মুক্তি পেতে চলেছে।

আরেক বিবৃতিতে অ্যাপল বলেছে তাদের “নিরাপত্তা গবেষকরা এই বিষয়ে একমত যে আইফোন বাজারে সবচেয়ে নিরাপদ মোবাইল ডিভাইস … আমরা আমাদের সমস্ত গ্রাহকদের তথ্য নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা ক্রমাগত তাদের ডিভাইস এবং ডেটার জন্য নতুন সুরক্ষা যোগ করছি।”

যদিও তারা বলছে তারা সবচেয়ে সুরক্ষিত ডিভাইস প্রদান করছে কিন্তু তাদের এই সুরক্ষার দেয়াল ভেঙ্গে দিয়ে তাদেরকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে পেগাসাস প্রোজেক্ট।

আমরা কি নিরাপদ?

সংক্ষেপে বলতে গেলে আমরা কেউই বর্তমানে নিরাপদ নই। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাপ ব্যবহার করছি। নানান মানুষের সাথে যোগাযোগ করছি। যদিও হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা টেলিগ্রামের মতো ম্যাসেজিং অ্যাপ গুলো তে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইন্ড-টু-ইন্ড এনক্রিপশন থাকায় তারা ব্যবহারকারীর তথ্য গুলি নিরাপদ হিসেবে দাবী করছে। তবে স্পাইওয়্যার যদি কারো মোবাইলে আগে থেকেই থেকে থাকে তবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইন্ড-টু-ইন্ড এনক্রিপশন কোনো কাজেই আসছে না। কেননা ডেটা গুলো আপনার মোবাইলে রয়েছে এবং আপনার মোবাইল সর্বদা একজন নজরদারি করছে।

বিষয়টি অনেকটা এমন যে আপনি বাজারের সবচেয়ে দামি তালাটি কিনে নিয়ে আসলেন কিন্তু চোর আগে থেকেই আপনার বাসার ভিতরে ঢুকে বসে আছে।

বর্তমানে যে কোনও প্রযুক্তি যথেষ্ট সময় এবং সংস্থান দেওয়ার মাধ্যমে ফাঁকি দেওয়া যেতে পারে। পেগাসাসের ক্ষেত্রে, স্মার্টফোনগুলি বিভিন্ন অত্যাধুনিক আক্রমণ ব্যবহার করে স্পাইওয়্যার দ্বারা সংক্রামিত হয় যা ডিভাইসের নিরাপত্তা দুর্বলতাগুলি কাজে লাগায় এবং ব্যবহারকারী নিজেও এ বিষয়ে জানতে পারে না। আপনি বলতে পারেন “কারা এমন কাজ করতে পারে?” যথেষ্ট রিসোর্স, অর্থ এবং অনুপ্রেরণা পেলে যে কেউই এমন একটি স্পাইওয়্যার তৈরি করে ফেলতে পারে।

পরিশেষ

পেগাসাস প্রোজেক্ট ঘটণাটিতে যা বলছে তা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে এতি বোঝাই যাচ্ছে যে তাদের নজরদারির বিষয়টিতে আরো নীতি নিরাপত্তা সংযোজন করতে হবে। প্রযুক্তি সবার কাছে উন্মক্ত হওয়ায় বর্তমানে কেউই নিরাপদ নয়। যদিও নজরদারির এই স্পাইওয়্যার টি এখনো সবার জন্য উন্মুক্ত নয়, শুধুমাত্র আজারবাইজান, হাঙ্গেরি, রুয়ান্ডা, মেক্সিকো, মরক্কো, কাজাকিস্তান, সৌদি আরব সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ভারত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দেশের সরকার প্রধান তাদের ক্লায়েন্ট লিস্টে পাওয়া গিয়েছে। এবং আমাদের এ বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিৎ যে কেবল এনএসও ই এরকম স্যুইট তৈরি করতে সক্ষম তা নয়। এমন আরো অনেক তৃতীয় পক্ষ থাকতে পারে যাদেরও একই রকমের নজরদারির পরিকল্পনা রয়েছে।

এ ঘটনাটি সম্পর্কে আপনার কি মতামত আমাদের জানাবেন। আপনার মুল্যবান সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

সাবস্ক্রাইব করুন The Penguins Club খবরপত্রিকায়

প্রতি শুক্রবার বিশেষ খবর এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আপনার ইমেইল দিন।


Tagged:
About the Author

Hello World!
Jamil's here. Love to learn and write about new things, especially about tech.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.