অবিকশিত কানের বদলে এক নারীর নিজের কোষ থেকে থ্রিডি-প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে তৈরি নতুন একটি কান সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা।
অঙ্গ প্রতিস্থাপনে থ্রিডি-প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাফল্য পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম এমনটা লিখেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। ‘টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং’ বা কোষ প্রকৌশলের ক্ষেত্রে ‘বড় অগ্রগতি’ হিসেবে দেখা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের এই সাফল্যকে।
গত মার্চে অ্যালেক্সা নামের ২০ বছর বয়সী এক মেক্সিকান তরুণীর দেহে অস্ত্রোপচার করে ওই নতুন কান বসানো হয়। অস্ত্রোপচারটি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। জ্যান্ত কোষ থেকে থ্রিডি-প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে সম্পূর্ণ কান গঠন এবং তা প্রতিস্থাপনের এই পুরো প্রক্রিয়ার পেছনে রয়েছে থ্রিডিবায়ো থেরাপিউটিক্স নামের একটি কোম্পানি।
অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া চিকিৎসক দলের প্রধান শল্যবিদ আর্তুরো বোনিলা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, “সব যদি পরিকল্পনা মাফিক করা যায়, তাহলে এই প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটাবে।”
নতুন কান পাওয়া অ্যালেক্সা ছিলেন মাইক্রোশিয়ার রোগী। বিরল এ রোগে আক্রান্ত শিশুর জন্মের সময় একটি বা উভয় কানের বিকাশ অসম্পূর্ণ থেকে যায়, ক্ষেত্রবিশেষে কানের বাহ্যিক অংশের পুরোটাই থাকে না।
এ রোগের চিকিৎসায় থ্রিডি-প্রিন্টিং প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে থ্রিডিবায়ো থেরাপিউটিক্স। গবেষণায় অংশ নিচ্ছেন ১১ জন মাইক্রোশিয়া রোগী। আর এ কোম্পানি রোগীর নিজের কোষ ব্যবহার করে বানানো কানের নাম দিয়েছে ‘অরিনোভো ইয়ার’।
এতদিন মাইক্রোশিয়া রোগীর শরীরে কান প্রতিস্থাপনের জন্য কৃত্রিম উপকরণ ব্যবহার করা হত। ‘অরিনোভো ইয়ার’ তৈরিতে পুরোপুরি রোগীর নিজের কোষ ব্যবহার করা হয়।
বিকাশ অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়া কানের বায়োপসি করে কার্টিলেজ কোষ সংগ্রহ করেন চিকিৎসকরা। সেই কোষগুলো পরে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বাড়তে দেওয়া হয়। থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেসব কোষকে পরে দেওয়া হয় রোগীর কানের আকার।
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিস্থাপিত কানে প্রতিনিয়ত কোষের মৃত্যু ও বৃদ্ধি ঘটবে স্বাভাবিক কানের মতই।রোগীর নিজের কোষ থেকে তৈরি হওয়ায় নতুন ওই অঙ্গকে রোগীর শরীরের প্রত্যাখ্যান করার শঙ্কাও কমে যাবে।
অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রযুক্তির জন্য ২০২২ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফুসফুস আর রক্ত কোষ গঠনের বিষয়েও গবেষণা চলছে।
এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবিষ্যতে যকৃত ও কিডনির মতো জটিল অঙ্গ তৈরি করাও সম্ভব হবে বলে আশা করছে থ্রিডিবায়ো থেরাপিউটিক্স।
কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিসিন ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক অ্যাডাম ফেইনবার্গ বলেন, “কান অঙ্গ হিসেবে যকৃতের মত জটিল নয়, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে অতি প্রয়োজনীয়ও নয়। তাই সম্ভাব্য ভবিষ্যতের পথটা এখনও অনেক দূরের।”
তবে বিষয়টি এখন আর ‘যদি’ শব্দটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং ‘কবে’ প্রশ্নটিই এখন বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।